ট্রেনের টিকিট নিয়ে যাত্রী দুর্ভোগ, কালোবাজারি বহুল আলোচিত। ধারণা করা হতো, টিকিট কাটার ব্যবস্থা ডিজিটাল হলে এসব সমস্যা থাকবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, টিকিট অনলাইনে এলেও যাত্রী দুর্ভোগ শেষ হয়নি। এখন ট্রেনের টিকিট কাটতে কাউন্টারের বদলে অনলাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। 

এটা ঠিক, ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করে একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ফোন নম্বরে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠিয়ে সফল যাচাইয়ের পরই যাত্রীকে টিকিট সরবরাহ করার কথা। কিন্তু তাতে কি যাত্রী হয়রানি দূর হবে?

গত ঈদুল আজহাতেও শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেকে বারবার চেষ্টা করেও কাটতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত টিকিট। এ কথা সত্যি, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বছরের পর বছর চলা অসন্তোষ আর অব্যবস্থাপনা কিছুটা দূর হয়েছে। ব্যাপক হারে কালোবাজারির অভিযোগও কিছুটা কমেছে। তবে পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। 

স্তরভিত্তিক যাচাইকরণের মাধ্যমে অনলাইন থেকে শতভাগ টিকিট বিক্রির সুবিধা চালু হওয়ার পরও গত বছর ঈদুল আজহার সময় ৫০০ টিকিটসহ ১২ কালোবাজারিকে র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। র‍্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, তারা অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টিকিট কেটে তা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করে আসছিল! সামাজিক মাধ্যমে কিন্তু এ ধরনের বিজ্ঞাপন এখনও দেখা যায়। ঈদ ও ছুটিছাটায় এই দুর্বৃত্ত চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ে।

গত বছর ১৫ নভেম্বর কিশোরগঞ্জে ট্রেনের ৭০টি আসনের ১৯টি টিকিটসহ কালোবাজারি চক্রের দু’জন আটক হয়েছিল। তারা পরিচিতজনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টিকিট কেটে দুই থেকে তিন গুণ দামে বিক্রি করত। এ রকম ঘটনা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে আসছে। কাজেই এটা স্পষ্ট, শতভাগ ডিজিটাল হলেও কালোবাজারি আটকানো যাচ্ছে না। উল্টো ডিজিটালের চক্করে পড়ে কিছু মানুষ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ট্রেন ভ্রমণে নিরুৎসাহিত কিংবা বঞ্চিত হচ্ছেন।

কালোবাজারিদের আটকাতে একটা এনআইডির বিপরীতে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটা যাচ্ছে। কিন্তু পরিবারে সদস্য চারজনের বেশি হলে তাদের জন্য সমাধান কী? ফের অনলাইনে ঢুকে নতুন এনআইডি দিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য টিকিট পাওয়া যাবে কিনা, গ্যারান্টি নেই। পাওয়া গেলেও পাশাপাশি আসনে কিংবা একই কামরায় যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। ছুটিছাটায় অনেকে দলবদ্ধ হয়ে কক্সবাজার, সিলেটসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করেন। তাদের জন্যও ব্যবস্থাটি সুখকর নয়। কালোবাজারি বন্ধ করতে গিয়ে নতুন সমস্যার উদ্ভব তো টেকসই সমাধান হতে পারে না! 

বলা হচ্ছে, রেলের কর্মকর্তারা পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনের মাধ্যমে টিকিট যাচাই করবেন। কেউ অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কেটে ভ্রমণ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যবস্থাকে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ বলছে রেলওয়ে। এর পরও কীভাবে একজনের টিকিটে অন্য কেউ ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন– সে প্রশ্নের উত্তর রেলওয়েকেই দিতে হবে। এ রকমও তো অভিযোগ আছে, ট্রেনের যাত্রীর বড় একটা অংশ টিকিট ছাড়াই ভ্রমণ করে থাকে। রেলওয়ের বছরের পর বছর আর্থিক ক্ষতির কারণ হিসেবে অনেকের মধ্যেই ‘বিনামূল্যে’ ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। 

মানুষ যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারে, এ জন্য এক এনআইডির বিপরীতে চার টিকিট দেওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।

‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’– এ ব্যবস্থাটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এক এনআইডির বিপরীতে টিকিট দেওয়ার সীমা তুলে দেওয়া সম্ভব। 

প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখেই যদি এনআইডি এবং টিকিট চেক করে যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়, তবে কালোবাজারি ও টিকিটবিহীন অবৈধ যাত্রীর ভ্রমণ বন্ধ করা সম্ভব। আর ট্রেনের ভেতরে চেকিং তো রয়েছেই। পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের ওপরে মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য রেলওয়েকে চেকিং পয়েন্টে বিশেষ করে ঈদসহ অন্যান্য ছুটি ও উৎসবে জনবল বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে উৎসবভিত্তিক অস্থায়ী জনবল নিয়োগ করা যেতে পারে। স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্রদেরও কাজে লাগানো যায় কিনা, ভেবে দেখা দরকার।

ট্রেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে বড় অভিযোগ হচ্ছে, ঈদ-পার্বণ-ছুটিছাটায় কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাওয়া যায় না। এবার ঈদযাত্রায় ১৪ মার্চ দেওয়া হবে ২৪ মার্চের টিকিট। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ হাজার টিকিট ছাড়বে রেলওয়ে। কিন্তু যাত্রী তো কয়েক লাখ। আশু এর কোনো সমাধান রেলওয়ের হাতে আছে বলে মনে হয় না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, সেতু, সিঙ্গেল ট্রেনলাইনসহ নানা সীমাবদ্ধতায় চাইলেই ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। বিকল্প হচ্ছে ট্রেনে বাড়তি বগি জুড়ে দেওয়া। কিন্তু ট্রেনের যে ইঞ্জিন, তারও তো লিমিট আছে। ফলে চাইলেই বগির সংখ্যা বাড়ানো যায় না। কিন্তু এটাও তো সত্য, আরামদায়ক এবং ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ পছন্দ করেন। এই সত্যটা রেলওয়েকে অনুধাবন করতে হবে। ট্রেনকে যাত্রীবান্ধব হিসেবে সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের বিকল্প নেই।

হাসান জাকির: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
prantojakir@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র লওয় শতভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

সঞ্চয়পত্র নাকি এফডিআর—কোথায় বিনিয়োগ করবেন

আপনার হাতে ২-৩ লাখ টাকা জমেছে। এ টাকা কী করবেন, কোথায় জমা রাখবেন, এ নিয়ে চিন্তিত হন। এত টাকা হাতে এলে প্রথমেই সঞ্চয়পত্র কেনার কথা ভাবেন অনেকে। আবার অনেকে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করার কথাও চিন্তা করেন।

তবে সঞ্চয়পত্র কেনা নাকি এফডিআর করা—কোনটি ভালো হবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন অনেক। সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর নিয়ে একটি বিশ্লেষণ দেওয়া হলো। বিশ্লেষকেরা বলেন, বিনিয়োগের একটি অংশ সঞ্চয়পত্রে ও অপর অংশ এফডিআরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে ঝুঁকি কম থাকে।

সঞ্চয়পত্র

মধ্যবিত্তের জন্য সঞ্চয়পত্র বেশি জনপ্রিয়। কারণ, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ঝামেলা নেই। এত ব্যাংক কেলেঙ্কারির মধ্যেও সঞ্চয়পত্র একটি আস্থার আর্থিক পণ্য হিসেবে সমাজে স্বীকৃত।

সুবিধা কী কী

১. সঞ্চয়পত্রে সরকারি গ্যারান্টি থাকে। তাই টাকা হারানোর ঝুঁকি নেই বললেই চলে।

২. এফডিআর থেকে তুলনামূলকভাবে সুদের হার বেশি। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে গড়ে সুদের হার ১২ শতাংশের আশপাশেই আছে।

৩. দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়া যায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে।

৪. সাধারণত কর মওকুফ বা কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া। যা আপনার বছর শেষে করের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।

৫. বিপদে পড়লে সঞ্চয়পত্র ভেঙে কাজে লাগানো যায়। অনেকে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও সঞ্চয়পত্র কেনেন।

অসুবিধা কী কী

১. নির্দিষ্ট সীমার বেশি কেনা যায় না। যেমন—পরিবার সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়। আবার পেনশনার সঞ্চয়পত্র ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কিনতে পারবেন।

২. মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ভাঙালে মুনাফার পরিমাণ কমে যায়।

৩. মুনাফার টাকার উৎসে কর কেটে নেওয়া হয়।

৪. তাৎক্ষণিকভাবে নগদায়ন করার সুবিধা সীমিত।

এফডিআর

এটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখতে হয়। আপনার টাকা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেখে মুনাফা নেওয়া যায়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এফডিআর করা যায়।

সুবিধি কী কী

১. ব্যাংকভেদে এফডিআরের মেয়াদ বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। সাধারণত ৩ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত এফডিআর করা হয়।

২. এফডিআরের বিপরীতে ইচ্ছা করলে ঋণ নেওয়ার সুবিধা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যত টাকার এফডিআর করা হয়, সাধারণত এর ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যায়।

৩. কিছু ব্যাংক মাসিক বা তিন মাস ভিত্তিতে সুদ প্রদান করে। যা নিয়মিত আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

৪. টাকা প্রয়োজন হলে তুলনামূলকভাবে সহজে এফডিআর ভাঙানো যায়।

অসুবিধা কী কী

১. সাধারণত সুদের হার সঞ্চয়পত্রের চেয়ে কম। সুদের হার ৬ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে থাকে। কিছু ব্যাংক এর বেশি হারের সুদ দেয়।

২. ব্যাংকের স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে এফডিআরের ভবিষ্যৎ।

৩. সময়ের আগে ভাঙালে সুদ কমে যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার পরিবারের ১০ সদস্য ভোট দিতে পারবেন না: ইসি সচিব
  • পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনার ১০ সুবিধা
  • পাবনার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভারতের নাগরিক, অভিযোগ শ্যালকের 
  • শেরপুর নির্বাচন অফিসে রোহিঙ্গা আটক
  • সঞ্চয়পত্র নাকি এফডিআর—কোথায় বিনিয়োগ করবেন