রোজা রেখে কি চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে?
Published: 13th, March 2025 GMT
ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, চোখে ড্রপ দিলে সরাসরি পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে রোজা রেখে চোখে ড্রপ দিতে পারেন। তবে অনেক রোগীই মনে করেন, চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভেঙে যায়। সেক্ষেত্রে চোখে ইনফেকশন দেখা দিলেও যারা ড্রপ ব্যবহার করতে চান না তাদের চোখে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
ডাঃ মোমিনুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট রেটিনা ও ফ্যাকো সার্জন এবং ইউভিয়া বিশেষজ্ঞ একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘রোজার সময় আমরা অনেক রোগী পায় যারা রোজা রেখে চোখে ড্রপ ব্যবহার করতে অনীহা প্রকাশ করেন। রোগীর এই প্রশ্নের উত্তর আমরা বিভিন্নভাবে দিযে থাকি। রোগীদেরকে অনেক সময় বোঝানোর চেষ্টা করি চোখে ড্রপ দিলে রোজা ভাঙে না।’’
এই চিকিৎসক আর বলেন, ‘‘ চোখের ভেতর নেত্রনালীর যে ছিদ্রটা আছে আমাদের গলায় চলে যায়। প্রতি মুহূর্তে আমাদের চোখে যে পানি তৈরি হচ্ছে সেটা আমাদের চোখের নেত্রনালী দিয়ে গলায় পৌঁছে যাচ্ছে। এই পানিটা যখন গলায় পৌঁছে যায় তখন আমরা বুঝতে পারছি না, কারণ হচ্ছে এই পানি নিয়মিত পাচ্ছি। কিন্তু এই পানিটা যখন নেত্রনালী দিয়ে যেতে পারে না তখন চোখের বাইরে পড়ে এ জন্য অনেক সময় রোগীরা বলেন, চোখ দিয়ে পানি পড়ে। তার অর্থ নেত্রনালী দিয়ে পানি যাওয়ার রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য পানিটা যেতে পারছে না, বাইরে বের হচ্ছে। এই যে পানিটা রেগুলার যাচ্ছে এইটাতে আমাদের রোজা ভাঙছে না, ঠিক তেমনি আমরা যখন চোখে ড্রপ নেই এটাও চোখের নেত্রনালী দিয়ে গলার ভেতর চলে যায় কিন্তু এতে আমাদের রোজা ভাঙছে না। কারণ হচ্ছে, আমরা যখন ওযু করি তখন চোখে পানি দেই। সেই পানিও চোখের নেত্রনালী দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়। এতেতো রোজা ভাঙে না। ওযুর পানির চেয়েও খুবই কম ড্রপ চোখ দেই।’’
আরো পড়ুন:
ফ্যাটি লিভার রোগীদের রোজা রাখার উপকারিতা
হার্টের রোগী রোজা রাখতে চাইলে করণীয়
এরপরেও যদি রোগীর অনীহা থাকে তাহলে ইফতারের পরে এবং সেহরিতে চোখে ড্রপ দিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ডাঃ মোমিনুল ইসলামের সতর্কবার্তা হলো, যাদের চোখে ইনফেকশন দেখা দেয় সেক্ষেত্রে দুই, তিন ঘণ্টা পর পর চোখে ড্রপ দেওয়া লাগতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি মনে করেন দিন শেষে চোখে ড্রপ দেবেন, সেক্ষেত্রে চোখ ভালো হবে না। বরং চোখ সারা জীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।