জেমকন গ্রুপের মালিক ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর দুই ভাই, এক বোন, মা, মৃত বাবাসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা ৩৬টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জেমকন গ্রুপের ৩৬টি কোম্পানির ৪ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮টি শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের দাম ৬০ কোটি ৪৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

জেমকন গ্রুপের যাঁদের শেয়ার হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন কাজী নাবিল আহমেদ, কাজী আনিস আহমেদ, কাজী ইনাম আহমেদ ও নাবিলের বোন কাজী আমিনা আহমেদ।

জেমকন গ্রুপের যেসব কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ক্যাস্টেল কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, জেমকন লিমিটেড, চরকা এসপিসি পোলস লিমিটেড, কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড, চরকা স্টিল লিমিটেড, করতোয়া টি স্টেট লিমিটেড, রসুনপুর টি ফ্রন্টিয়ার লিমিটেড, জেমকন টি এস্টেট লিমিটেড, পাঠার লিমিটেড, জেমকন ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টস লিমিটেড, জেমকন সিটি লিমিটেড, জেম জুট লিমিটেড, বেঙ্গল হারবাল গার্ডেন লিমিটেড, জেমকন সি ফুড লিমিটেড, মীনা সুইটস অ্যান্ড কনফেশনারিস লিমিটেড, টু এ মিডিয়া লিমিটেড, মীনা রিটেইলস লিমিটেড, আজকের কাগজ লিমিটেড, খবরের কাগজ প্রকাশনা লিমিটেড, জেমকন স্পোর্টস লিমিটেড, জেমিনি অ্যাগ্রি ডিভিশন লিমিটেড, জেম গ্লোবাল ইনফো অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড, জেমকন রিনিউয়েবল এনার্জি টেকনোলজি লিমিটেড, বাংলা ট্রিবিউন, প্যাপিরাস কমিউনিকেশনস লিমিটেড, ক্যাস্টেল ইউনিভার্সেল কোম্পানি লিমিটেড, মীনা অ্যাডভান্স রিটেইল ট্রেডিং লিমিটেড, প্যাপিরাস ডিজিকম লিমিটেড, মীনা ক্লিক লিমিটেড, জেমকন অ্যাগ্রো লিমিটেড, জেমকন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, জেমকন ড্রেজার লিমিটেড, জেমকন হাইওয়েস অ্যান্ড রোডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, জেমকন কানেকটিভিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, জেমকন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও অর্গানিকর লিমিটেড।

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেমকন গ্রুপের কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর দুই ভাই, মা, মৃত বাবাসহ ১০ জনের নামে থাকা ১১৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, কাজী নাবিল আহমেদের ২১টি ব্যাংক হিসাব, তাঁর ভাই আনিস আহমেদের ২০টি, কাজী ইনাম আহমেদের ১০টি এবং তাঁদের মা আমিনা আহমেদের নামে থাকা ২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এর বাইরে কাজী নাবিল আহমেদের মৃত বাবার নামে থাকা সাতটি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া কাজী নাবিল আহমেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট পাঁচজন মালিয়া মান্নান আহমেদ, কাজী সিরাজ আহমেদ, লতিফা মান্নান ইসলাম, রাইয়াদ জায়েদ মান্নান ও আবু মুসার নামে থাকা ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি কাজী নাবিল আহমেদ, তাঁর দুই ভাই ও তাঁদের মায়ের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। দুদকের পক্ষ থেকে সেদিন আদালতকে জানানো হয়েছিল, জেমকন গ্রুপের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক জালিয়াতি ও অন্যান্য দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব ল আহম দ র অবর দ ধ আহম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ