মাগুরার সেই শিশুর মৃত্যুর পর তার বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়স্বজন, স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁরা পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা ও সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন। একই সঙ্গে দাবি করছেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

আজ শুক্রবার সকালে শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে গিয়ে লোকজনের ভিড় দেখা যায়। মাগুরা শহরে ও এলাকায় দুই দফা জানাজা শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে শিশুটিকে সমাহিত করা হয়।

আজ সকালে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তিনি শিশুটির মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘এমন ঘটনা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা শিশুটির ন্যায়বিচারের পক্ষে মাঠে নেমেছি। আমরা চাই, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। একই সঙ্গে আমরা পরিবারটিকে সহযোগিতা করছি। আমাদের দল শিশুটির পরিবারের পাশে আছে।’

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটিকে বাঁচানো গেল না১৩ মার্চ ২০২৫

এর কিছুক্ষণ পরে সেখানে পৌঁছান মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান। তিনিও শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিশুটির মা জানান, কয়েক মাস আগে আকস্মিকভাবে তাঁর স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর স্বামীর অসুস্থতার কারণেই পরিবারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। ওই নারী নেতাদের কাছে স্বামীর সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চান। এ সময় মনোয়ার হোসেন খান শিশুটির বাবার চিকিৎসায় সহযোগিতার করার আশ্বাস দেন।

মনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটেছে, তার ন্যায়বিচার তো আমরা চাই। পাশাপাশি পরিবারটি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে ব্যাপারে ব্যক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও আমরা দলগতভাবে তাদের সহযোগিতা করব। খুব শিগগিরই শিশুটির বাবার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির মৃত্যুর পর বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, বিচার দাবি২০ ঘণ্টা আগে

শিশুটির বাড়িতে গতকাল থেকেই ভিড় করছেন আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। শিশুটির এক চাচা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। আমরা আগে থেকে জানতে পারিনি ওরা এত খারাপ অবস্থায় আছে। এখন আমরা সবাই চাই, বাকি তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে যাতে ওরা ভালো থাকে। এ কারণে শিশুটির বাবার সুস্থ করা দরকার।’

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশুটি। ৮ মার্চ অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই গতকাল বৃহস্পতিবার শিশুটি মারা যায়।

এ ঘটনায় শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তার মা। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মাগুরার এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনা চলছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ।

আরও পড়ুনমাগুরায় শিশুটির প্রথম জানাজার পর আসামিদের বাড়িতে আগুন১৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র সহয গ ত র পর ব অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ