ঈদযাত্রায় মহাসড়কে নামাতে রং করা হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস, বাড়বে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
Published: 15th, March 2025 GMT
কুমিল্লা নগরের জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল এলাকা। শনিবার সকালে টার্মিনালের পেছনের অংশে যেতেই চোখে পড়ল কয়েকটি পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বাসগুলোর বেশির ভাগই ফিটনেসহীন। পুরোনো এসব বাসের খোলস বদলে গায়ে রং লাগানো হচ্ছে। চলছে নতুন রূপে ফেরানোর জন্য তোড়জোড়। ঈদযাত্রায় লক্কড়ঝক্কড় এসব বাস মহাসড়কে নামাতে রং ও মেরামত করা হচ্ছে।
শুধু জাঙ্গালিয়া এলাকাই নয়, কুমিল্লার আরও বেশি কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার ঈদযাত্রায় সড়ক ও মহাসড়কে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। যেগুলোর বেশির ভাগের ফিটনেস নেই। তবে হাইওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামলে ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার কারণে শিগগিরই ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছেন তাঁরা।
কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের (বাস মালিক সমিতি) সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছে। আমরা বলেছি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি আমাদের কেউ রাস্তায় নামাবে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধে আমরা প্রতিনিয়ত তদারকি করব। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আমরা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। প্রতিবছরই ঈদকে কেন্দ্র করে একটি চক্র লক্কড়ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন বাস মেরামত ও রং করে সড়কে নামিয়ে দেয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমরা সতর্ক আছি। তবে এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএকে বেশি সচেতন হতে হবে।’
শনিবার কুমিল্লার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল জাঙ্গালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টার্মিনালের ভেতরের অংশেই অন্তত ১০টি বাসের খোলস বদলে নতুন রং লাগানোর কাজ চলছে। এসব বাসের কোনোটির ইঞ্জিনে ত্রুটি; আবার কোনোটির গায়ের রং উঠে গেছে। কোনোটিতে নেই সিটকভারও। এমন লক্কড়ঝক্কড় বাসগুলো মেরামত আর রং করতে দিন–রাত এক করে কাজ করছেন মিস্ত্রিরা।
মো.
কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চলাচলকারী একটি পরিবহনের বাসচালক মাহাবুব হোসেন বলেন, ঈদ এলে দেখা যায়, সড়কে কত নামের বাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নামিদামি কোম্পানির বাসের নামের আগে বা পরে ‘নিউ সুপার’ লাগিয়ে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামানো হয়। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লক্কড়ঝক্কড় এসব বাস অকেজো হয়ে সারা বছর পড়ে থাকে। ঈদ বা বিভিন্ন মৌসুমে এগুলো সামান্য মেরামত করেই রাস্তায় নামানো হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল এলাকার একটি ওয়ার্কশপে নিজের পুরোনো বাস মেরামত করাচ্ছেন কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। কাজ যেন দ্রুত শেষ হয় সেজন্য কামাল নিজেই তদারক করছেন। জানতে চাইলে কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এই বাসডার নাম বলাকা। আগে ঢাকা-থাইক্কা বরিশাল রুটে চলত। এইবারের ঈদে কুমিল্লা-ঢাকা রুটে চলব। চিন্তা করছি কাম শেষ হইলে তিশা নামে রাস্তায় নামামু। সামনে ঈদ এ জন্য একটু ইঞ্জিনের কাজ আর রং করাইতেছি।’
কুমিল্লা আদর্শ সদরের আলেখারচর, শংকরপুর, ঝাগুরঝুলি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার, কুমিল্লা নগরের ঢুলিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি স্থানেই ওয়ার্কশপের মিস্ত্রিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্কড়ঝক্কড় বাস নতুন রূপে সাজানোর জন্য। ঈদে নতুন রঙের গাড়ি দেখলে যাত্রীরা খুশি হন বলে জানান তাঁরা।
কুমিল্লা আদর্শ সদরের আলেখারচর এলাকার একটি ওয়ার্কশপে পুরোনো গাড়ির বডিতে রঙের কাজ করছেন আতিকুল ইসলাম নামের এক রংমিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘ঈদকে টার্গেট করে পুরোনো গাড়িগুলো রং করে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে, নতুন গাড়ি দেখলে যাত্রীরা আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। সময়মতো ডেলিভারি দেওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করছে সবাই। ২০-২২ রমজানের মধ্যেই গাড়ি ভেলিভারি দিতে হবে।’
বিআরটিএর কুমিল্লা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফারুক আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হলো সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন কোনো যানবাহল চলাচল করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমরা কঠোর হব। বিশেষ করে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করলে ঈদের সময় ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছি। শিগগিরই আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করব।’
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না ঈদযাত্রায় কোনো মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ুক। তাই আমরা এসব বিষয়ে অভিযান জোরালো করব। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামলেই মামলা দেওয়াসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের সারা বছরই অভিযান থাক, তবে ঈদকে সামনে রেখে শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে আরও বেশি পরিমাণে অভিযান শুরু করব। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন র ঝ প রথম আল ক ব স ম র মত ঈদয ত র য় এসব ব স ফ টন স আম দ র আরও ব করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।