গণপরিষদের মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কার করতে হবে: নাহিদ
Published: 15th, March 2025 GMT
গণপরিষদের মাধ্যমেই সংস্কার করতে হবে, অন্যথায় সংসদের সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার বিষয়ে এটাই আমাদের অবস্থান। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে আমরা এটাই দেখতে পাই।
আজ শনিবার দুপুরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে নাহিদের পাশাপাশি যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনও অংশ নেন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্র যে একটি সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটাই বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা তাদের নিজ নিজ নিজ সংস্কার প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংস্কার বিষয়ে তাদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি মনে করে, জনগণের কাছে বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি হলো বিচার ও সংস্কার। মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি জনগণের কাছে সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি, সংস্কারের যে ধারাবাহিকতা, তা বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদে দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
নাহিদ বলেন, ‘গণপরিষদের মাধ্যমেই সংস্কার করতে হবে, অন্যথায় সংসদের সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেও এটাই দেখতে পাই। আমরা আমাদের এই দলীয় অবস্থান সংক্ষেপে বলেছি। জাতিসংঘ মহাসচিবের চাওয়া, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন নিজেরাই সমঝোতায় আসে, একটা ঐক্যমতে আসে এবং একসঙ্গে কাজ করে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা মনে করি এবং বলেছি, নির্বাচনকে আমরা একটি সংস্কারের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সংস্কারের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখি। কোনো রকম সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না। অন্য সব রাজনৈতিক দলও এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। এখানে মতপার্থক্য হচ্ছে, কোন সংস্কারটা কখন হবে, নির্বাচনের আগে কতটুকু হবে, নির্বাচনের পরে কতটুকু হবে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের মধ্যে এর বাস্তবায়ন হলে যে মতপার্থক্যগুলো আছে, সেগুলো কেটে যাবে। আমরা ঐক্যমতে আসতে পারব।’
সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো আলোচনা করেছেন কি না, জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখানে বিস্তারিত আলাপের সুযোগ ছিল না। সংস্কার বিষয়ে সামগ্রিক আলোচনা হয়েছে। গণপরিষদ ছাড়া সংবিধানের মৌলিক কোনো পরিবর্তন টেকসই হবে না বলে মনে করে এনসিপি। সেই জায়গা থেকে আমরা গণপরিষদ নির্বাচন চাচ্ছি। সামনের যে জাতীয় নির্বাচন, সেটা একই সঙ্গে আইনপরিষদ ও গণপরিষদ নির্বাচন, পাশাপাশি আমরা বিচারের বিষয়টা বলেছি।’
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
সফরের তৃতীয় দিন আজ রোববার। এদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। আজ সকালে আন্তোনিও গুতেরেস রাজধানীতে নতুন জাতিসংঘ কমন প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। সেখানে ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন করেন।
আন্তোনিও গুতেরেস এবং শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্তবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন।
বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম জ ত য় ন গর ক প র ট উপদ ষ ট সরক র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
‘শত শত বাস আসছে, পা ফেলানোর জায়গা নাই’
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর নারান্দিয়ার বাসিন্দা শেফালী বেগম। সাভারের বাইপাইল এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন তিনি। ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হওয়ায় শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে প্রায় চার ঘণ্টা কালিহাতীর এলেঙ্গায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন এই নারী। বাসে উঠতে না পেরে কর্মস্থলে যেতে তাকে উঠতে হয় পিকআপ ভ্যানে। ২০০ টাকার জায়গায় ৩৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে রওনা হন গন্তব্যে।
যাত্রা শুরুর আগে শেফালী বলেন, “গরম ও সড়কের ধুলাবালিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সড়কে চার ঘণ্টা দাঁড়িয় থেকে উপায় না পেয়ে পিকআপে করে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।”
শুধু শেফালী নয়, তার মতো লাখ লাখ মানুষ আজ দিনভর ভোগান্তি নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শত শত মানুষকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কেউ ২ ঘণ্টা, কেউ ৩ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন গণপরিবহনের জন্য।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে মহাসড়কে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ
সিরাজগঞ্জে গাড়ির অপেক্ষায় কর্মস্থলে ফেরা মানুষ
জুলেখা বেগম বলেন, “আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। উত্তরবঙ্গ থেকে শত শত বাস আসছে, কিন্তু কোনো বাসেই পা ফেলানোর মতো জায়গা নাই। গরমও সহ্য হচ্ছে না।”
কর্মস্থলে ফিরতে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের একাংশ
ইকবাল আলী বলেন, “মহাসড়কে ভোগান্তি ছাড়া কিছুই দেখছি না। পরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।”
হারুন মিয়া নামে এক ট্রাক চালক বলেন, “সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। স্বাভাবিক সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।”
এর আগে, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল হওয়ায় যমুনা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তা কমে ১৪ কিলোমিটারে আসে। এছাড়া, মহাসড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকায় কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক ও পিকআপে গন্তব্যে যাচ্ছে মানুষ। সব মিলিয়ে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন যমুনা সেতা পারাপার করেছে। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
ঢাকা/কাওছার/মাসুদ