অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে এসেনসিয়াল ড্রাগস
Published: 16th, March 2025 GMT
মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে তা স্বল্পমূল্যে সরকারি বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র ও হাসপাতালে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। তবে প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ করতে পারেনি রাষ্ট্রের একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর শেষ ছয় মাসে চাহিদার মাত্র ৭০ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করতে পেরেছে ইডিসিএল। এ কারণে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যের ওষুধের সংকট লেগেই থাকে। রোগীদের জন্য যত টাকার ওষুধ বরাদ্দ থাকে, তার সিকিভাগও মিলছে না। এদিকে রোগীকে ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনাও প্রকট। হাসপাতালে রোগী ওষুধ না পেলেও পাশে ফার্মেসিগুলোতে অবৈধভাবে বিক্রি হয় সরকারি ওষুধ।
ইডিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চাহিদার চেয়ে বেশি জনবল থাকলেও রয়েছে দক্ষ কর্মীর সংকট। ওষুধ উৎপাদনে স্থাপিত যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে প্রতিষ্ঠানকে এমন রুগ্ণ অবস্থায় রাখতে চায় না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঢেলে সাজাতে এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন করে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। গোপালগঞ্জের ভ্যাকসিন প্লান্ট ঢাকায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা হয়েছে। এ ছাড়া সক্ষমতা বাড়িয়ে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ইডিসিএলের মাধ্যমে তৈরি করা হবে। এমনকি এসব ওষুধের কাঁচামালও তৈরি করবে ইডিসিএল।
এ খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ওষুধ উৎপাদনে ইডিসিএলের সক্ষমতা বাড়ালে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যসেবায়। বিনামূল্যের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারলে কমে আসবে চিকিৎসা ব্যয়।
শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ওষুধ উৎপাদন করেছে ৭২৩ কোটি টাকার। এই ছয় মাসে ৯৪৭ কোটি টকার ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। চাহিদার ৩০ শতাংশ ওষুধ কম উৎপাদন হয়েছে। এমনকি উৎপাদিত ওষুধও যাথাযথভাবে হাসপাতালে সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এখনও ভান্ডারে ৯৪ কোটি ১২ লাখ টাকার ওষুধ পড়ে আছে। একই রকম অবস্থা ২০২২-২৩ অর্থবছরে। ওই বছর সংস্থাটি ওষুধ উৎপাদন করেছে ১০৮৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার। সে বছর চাহিদার ৬০ শতাংশ ওষুধ দিতে পেরেছে ইডিসিএল। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ওষুধ উৎপাদন করেছে, যা ছিল চাহিদার ৪০ শতাংশ। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী ১৫০ ধরনের ওষুধ উৎপাদনের কথা থাকলেও মাত্র ৮৫টি তৈরি করে ইডিসিএল। বর্তমানে বছরে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার ওষুধ ইডিসিএলের নামে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়।
এর একাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তৈরি করানো। অনেক কর্মকর্তা নিজেরা কোম্পানি খুলে ওষুধ উৎপাদন করে ইডিসিএলের ওষুধ হিসেবে বিক্রি করছেন।
ওষুধের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করেছে সংস্থাটি। তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। পদের চেয়ে ইডিসিএলে তিন গুণের বেশি জনবল থাকলেও দক্ষ কর্মীর অভাব। পুরোনো মেশিনে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন হয় না। উন্নত বিশ্বে সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে ইডিসিএল। পুরোনো আইন-বিধি ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো অনেক সময় প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এসব কারণে লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে আছে ইডিসিএল।
ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করে ইডিসিএল। সরকারি হাসপাতালে ওষুধের জন্য বরাদ্দের ৭০ শতাংশ টাকা দিয়ে ইডিসিএল থেকে ওষুধ কিনতে হয়। বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ দিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঠিকাদারের সাহায্যে ওষুধ কিনতে হয়। এতে বাধে বিপত্তি। চাহিদা দিয়েও নির্ধারিত সময়ে ওষুধ পায় না হাসপাতালগুলো।
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার ওষুধ প্রয়োজন। চাহিদা জানালেও ওষুধ দেয়নি ইডিসিএল। এ কারণে তিন মাস ধরে বিনামূল্যে দেওয়া অনেক ওষুধ পাচ্ছেন না রোগীরা। হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট নাসির আহমেদ রতন বলেন, ইডিসিএল যে ওষুধ দেয়, তা পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ মিলছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, ওষুধ কেনার জন্য বরাদ্দ খুবই কম। প্রয়োজনীয় ওষুধের চাহিদা জানানো হয় ইডিসিএলে। তবে নির্ধারিত সময়ে ওষুধ মেলে না। তাই অনেক রোগীকে ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না। গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপেও এমন প্রমাণ মিলেছে। জরিপে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ রোগীকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়।
পড়ে আছে যন্ত্রপাতি
ইডিসিএলের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ২০১০ সালে গোপালগঞ্জে আধুনিক প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ১৫ বছরেও কারখানাটি সম্পূর্ণরূপে সচল করা সম্ভব হয়নি। এ প্লান্টে চারটি ইউনিটি স্থাপন করা হয়। তবে এখনও দুটি ইউনিট সচল করা হয়নি। গোপালগঞ্জ এসেনসিয়াল ড্রাগ্স কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে ৩১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সচল দুটি ইউনিটের জন্য কোটি কোটি টাকার যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে উৎপাদনে না যাওয়া এসব যন্ত্র অলস পড়ে আছে। পাশাপাশি গোপালগঞ্জে দেশের প্রথম ভ্যাকসিন প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিজস্ব টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনে ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণের কাজ চলমান। প্লান্টে ১২ ধরনের টিকা উৎপাদনের কথা ছিল। ২০২৮ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের এ প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দও বাতিল করেছে। এই প্লান্ট ঢাকায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই মধ্যে ভ্যাকসিন প্লান্ট স্থাপনে গোপালগঞ্জে জমি অধিগ্রহণে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হাসান ইমামের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণ, নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান ইমাম সমকালকে বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।
ইডিসিএল ঢেলে সাজাতে মহাপরিকল্পনা
ইডিসিএল ঢেলে সাজাতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অচল যন্ত্রপাতি সচল করতে কাজ চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রযুক্তি জ্ঞান নিতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওষুধের কাঁচামালও ইডিসিএলের মাধ্যমে উৎপাদন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন বলেন, পদের চেয়ে তিন গুণ জনবল না রেখে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাঁচামাল ক্রয় না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে।
ইডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মো.
ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জের কারখানার বন্ধ থাকা দুটি ইউনিট চালু করা হয়েছে। আরও দুটি ইউনিট আগামী এপ্রিলে চালু হতে পারে। এ ছাড়া বন্ধ থাকা প্লান্টগুলো নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সরকারের লক্ষ্য বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। এ জন্য অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ইডিসিএলের মাধ্যমে উৎপাদন করা প্রয়োজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এ প রকল প র ন শ চ ত কর গ প লগঞ জ কর মকর ত ব যবহ র বর দ দ অন য য় র জন য সরক র ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।
ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।
রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।
হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।
এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।