অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে এসেনসিয়াল ড্রাগস
Published: 16th, March 2025 GMT
মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে তা স্বল্পমূল্যে সরকারি বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র ও হাসপাতালে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। তবে প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ করতে পারেনি রাষ্ট্রের একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর শেষ ছয় মাসে চাহিদার মাত্র ৭০ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করতে পেরেছে ইডিসিএল। এ কারণে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যের ওষুধের সংকট লেগেই থাকে। রোগীদের জন্য যত টাকার ওষুধ বরাদ্দ থাকে, তার সিকিভাগও মিলছে না। এদিকে রোগীকে ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনাও প্রকট। হাসপাতালে রোগী ওষুধ না পেলেও পাশে ফার্মেসিগুলোতে অবৈধভাবে বিক্রি হয় সরকারি ওষুধ।
ইডিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চাহিদার চেয়ে বেশি জনবল থাকলেও রয়েছে দক্ষ কর্মীর সংকট। ওষুধ উৎপাদনে স্থাপিত যন্ত্রপাতির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে প্রতিষ্ঠানকে এমন রুগ্ণ অবস্থায় রাখতে চায় না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঢেলে সাজাতে এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন করে মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। গোপালগঞ্জের ভ্যাকসিন প্লান্ট ঢাকায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা হয়েছে। এ ছাড়া সক্ষমতা বাড়িয়ে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ইডিসিএলের মাধ্যমে তৈরি করা হবে। এমনকি এসব ওষুধের কাঁচামালও তৈরি করবে ইডিসিএল।
এ খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ওষুধ উৎপাদনে ইডিসিএলের সক্ষমতা বাড়ালে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যসেবায়। বিনামূল্যের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারলে কমে আসবে চিকিৎসা ব্যয়।
শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ওষুধ উৎপাদন করেছে ৭২৩ কোটি টাকার। এই ছয় মাসে ৯৪৭ কোটি টকার ওষুধ উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। চাহিদার ৩০ শতাংশ ওষুধ কম উৎপাদন হয়েছে। এমনকি উৎপাদিত ওষুধও যাথাযথভাবে হাসপাতালে সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এখনও ভান্ডারে ৯৪ কোটি ১২ লাখ টাকার ওষুধ পড়ে আছে। একই রকম অবস্থা ২০২২-২৩ অর্থবছরে। ওই বছর সংস্থাটি ওষুধ উৎপাদন করেছে ১০৮৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার। সে বছর চাহিদার ৬০ শতাংশ ওষুধ দিতে পেরেছে ইডিসিএল। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ওষুধ উৎপাদন করেছে, যা ছিল চাহিদার ৪০ শতাংশ। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী ১৫০ ধরনের ওষুধ উৎপাদনের কথা থাকলেও মাত্র ৮৫টি তৈরি করে ইডিসিএল। বর্তমানে বছরে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার ওষুধ ইডিসিএলের নামে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়।
এর একাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তৈরি করানো। অনেক কর্মকর্তা নিজেরা কোম্পানি খুলে ওষুধ উৎপাদন করে ইডিসিএলের ওষুধ হিসেবে বিক্রি করছেন।
ওষুধের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করেছে সংস্থাটি। তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। পদের চেয়ে ইডিসিএলে তিন গুণের বেশি জনবল থাকলেও দক্ষ কর্মীর অভাব। পুরোনো মেশিনে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন হয় না। উন্নত বিশ্বে সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে ইডিসিএল। পুরোনো আইন-বিধি ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো অনেক সময় প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এসব কারণে লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে আছে ইডিসিএল।
ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করে ইডিসিএল। সরকারি হাসপাতালে ওষুধের জন্য বরাদ্দের ৭০ শতাংশ টাকা দিয়ে ইডিসিএল থেকে ওষুধ কিনতে হয়। বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ দিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঠিকাদারের সাহায্যে ওষুধ কিনতে হয়। এতে বাধে বিপত্তি। চাহিদা দিয়েও নির্ধারিত সময়ে ওষুধ পায় না হাসপাতালগুলো।
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার ওষুধ প্রয়োজন। চাহিদা জানালেও ওষুধ দেয়নি ইডিসিএল। এ কারণে তিন মাস ধরে বিনামূল্যে দেওয়া অনেক ওষুধ পাচ্ছেন না রোগীরা। হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট নাসির আহমেদ রতন বলেন, ইডিসিএল যে ওষুধ দেয়, তা পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ মিলছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, ওষুধ কেনার জন্য বরাদ্দ খুবই কম। প্রয়োজনীয় ওষুধের চাহিদা জানানো হয় ইডিসিএলে। তবে নির্ধারিত সময়ে ওষুধ মেলে না। তাই অনেক রোগীকে ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না। গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপেও এমন প্রমাণ মিলেছে। জরিপে দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ রোগীকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়।
পড়ে আছে যন্ত্রপাতি
ইডিসিএলের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে ২০১০ সালে গোপালগঞ্জে আধুনিক প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ১৫ বছরেও কারখানাটি সম্পূর্ণরূপে সচল করা সম্ভব হয়নি। এ প্লান্টে চারটি ইউনিটি স্থাপন করা হয়। তবে এখনও দুটি ইউনিট সচল করা হয়নি। গোপালগঞ্জ এসেনসিয়াল ড্রাগ্স কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে ৩১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সচল দুটি ইউনিটের জন্য কোটি কোটি টাকার যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে উৎপাদনে না যাওয়া এসব যন্ত্র অলস পড়ে আছে। পাশাপাশি গোপালগঞ্জে দেশের প্রথম ভ্যাকসিন প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিজস্ব টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনে ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণের কাজ চলমান। প্লান্টে ১২ ধরনের টিকা উৎপাদনের কথা ছিল। ২০২৮ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের এ প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দও বাতিল করেছে। এই প্লান্ট ঢাকায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই মধ্যে ভ্যাকসিন প্লান্ট স্থাপনে গোপালগঞ্জে জমি অধিগ্রহণে ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হাসান ইমামের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণ, নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান ইমাম সমকালকে বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।
ইডিসিএল ঢেলে সাজাতে মহাপরিকল্পনা
ইডিসিএল ঢেলে সাজাতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। অচল যন্ত্রপাতি সচল করতে কাজ চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রযুক্তি জ্ঞান নিতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওষুধের কাঁচামালও ইডিসিএলের মাধ্যমে উৎপাদন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন বলেন, পদের চেয়ে তিন গুণ জনবল না রেখে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাঁচামাল ক্রয় না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে।
ইডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মো.
ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জের কারখানার বন্ধ থাকা দুটি ইউনিট চালু করা হয়েছে। আরও দুটি ইউনিট আগামী এপ্রিলে চালু হতে পারে। এ ছাড়া বন্ধ থাকা প্লান্টগুলো নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সরকারের লক্ষ্য বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। এ জন্য অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ইডিসিএলের মাধ্যমে উৎপাদন করা প্রয়োজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এ প রকল প র ন শ চ ত কর গ প লগঞ জ কর মকর ত ব যবহ র বর দ দ অন য য় র জন য সরক র ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা
‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়।
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে।
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।