হয়েছে, চল যাই অন্য দুনিয়ায়
রাষ্ট্রহীন এক বিদেহ বৈদেশে,
পরান তড়পায় লোবানে ধূপঘ্রাণে
ধরবি কোন হাতে এ হাত অবশেষে!
সুদূর নিঃসীম যাবার কথা ছিল
সকল রেখা–কোণ মিলায় যেইখানে,
সাধের রংধনু রাঙাবে তোর তনু
মাতবে পাখি দল মিছিলে ও স্লোগানে।
তোর কি মনে নেই রাষ্ট্রহীন ভূমি
সাজাব আমাদের পুষ্পশয্যায়,
ধর্ম ভালোবাসা, জাতি ও আলিঙ্গনে
লুপ্ত আপনায় আনত লজ্জায়।
তুই কি ভুলেছিস মধুর শীৎকার
ফোটানো অঙ্কুর নতুন উদ্গমে,
কেবল বারুদের বোমার চিৎকার
মরণ উদ্গার রক্তে দমে দমে।
মরেছে যারা তোর আমার আমাদের
ফুটবে তারা হয়ে সেখানে সে আকাশে,
উল্কা আঁখিজল লবণে দেবে স্নান
না-কাঁদা কান্নার ওয়াহি সে বাতাসে।
আয় রে যাব চল ভেঙে এ সীমারেখা
আমার ত্রিভঙ্গে বাইবি তুই খেয়া,
অদেখা জলস্রোত অন্তঃঅবাধ্য
প্রেমে ও হাহাকারে হৃদয় দেওয়া–নেওয়া।
ক্ষতের পুঁজে পুঁজে কুসুম চয়নের
গাইবে কোন গান গন্ধ–ফেরিওলা,
অন্ধ বধিরের পঙ্গু পাগলের
প্রকাশ বিস্ফারে শিল্পছলাকলা।
আমরা উড়ে যাব, ছেড়ে ও ছুড়ে যাব
এ দীন জীবনের ব্যর্থ শ্বাসগুলি,
নখরে দাঁতে আঁকা গ্রাফিতি সময়ের
চিহ্ন মরীচিকা অশ্রুজল, ধূলি।
কী গান বুলবুলি তুলেছে পিঞ্জর
ভাঙবে নচ্ছার সুরের ঠোঁটে ঠোঁটে,
কে মরে বেঁচে যায়, কে বেঁচে তড়পায়
কার–বা মরাদেহে কামিনী ফুল ফোটে।
স্বপ্ন বাস্তব কল্পছায়াছবি
আমরা মুছে যাই চতুর ক্যামেরায়,
কোলাজে–মন্তাজে শব্দে–নি–শব্দে
কাহিনি ভাঙাচোরা অচিন অভিপ্রায়।
ঘটন–অঘটনে মাতাল মুহূর্ত
কোন সে স্পন্দনে বইছে ধমনিতে,
আকাল–মহাকাল জন্ম–মৃত্যুর
সন্ধি রচিতেছে রক্তগোধূলিতে।
তুই কি ধরেছিস দুহাতে আঁজলায়
থ মারা আকাশের অশ্রুবারিধার,
শ্রাবণ–প্লাবনের বানে কি ভেসেছিস
পাঁজরভাঙা ঝড়ে উতলা চারিধার!
বজ্রচাবুকের দগ্ধ ক্ষত নিয়ে
মানুষ লালে লাল, দাসের চির দাস,
উড়ছে দমকায় উল্টাপাল্টায়
শীর্ণ পত্রের জীর্ণ ইতিহাস।
তুই কি পড়েছিস পাঠের আড়ালের
অন্য বয়ানের কথা ও রূপকথা?
না–মানা হৃদয়ের অ–শ্রুত উচ্চার
রুহের সংগীতমুখর নীরবতা।
আয় রে চলে যাই, সবেগে দলে যাই
ক্লান্ত পরাজিত ছিন্ন পাতাদের,
শূন্য শাখে শাখে নতুন ফুলকুঁড়ি
মাতাবে সুগন্ধে রাস্তা আমাদের।
আমরা না থাকব তবুও রাষ্ট্রের
রূপসী প্রহেলিকা জড়ানো সীমানায়,
দেহেরও আগলের শিকল ভেঙেচুরে
মুক্ত আত্মার ছড়াব রোশনাই।
আমরা গা’ব গান বেতাল বিরাগের—
তোমরা সুখে থাকো, অসুখে ধুঁকে থাকো!
নীল ও নিঃসীম হে প্রিয় ভূমি আজ
আসছি, আমাদের তোমারি বুকে রাখো।
তোমারি দুধে–ওমে মেটাব তৃষা-ক্ষুধা
তোমারি তন্দ্রায় ঘটাব জাগরণ,
তোমার দিগন্তে ব্যাপ্ত বেলোয়ারি
জড়াবে আমাদের মরণ আ-মরণ।
তোমারি রচনার ধূসর পৃষ্ঠায়
পড়ব জীবনের লুপ্ত কথামালা,
হারানো ভূগোলের বাতাস মাটি জল
স্বপ্ন আল্পনা নৃত্যগানপালা।
অধরা অসীমার কোন সে মোহনায়
মিলছে অন্তর গুপ্ত আয়োজনে,
সেখানে মারি ডুব উতল নিশ্চুপ
এ হাতে হাত রাখো ও-মন এই মনে।
বন্দী কেন র’ব সোনার কারাগারে
মিথ্যা চকমকি শিকল ছলনায়,
মুক্তি কিছু নাই, সকলি ফন্দির
অন্ধ দোল খাই শূন্য দোলনায়।
তুই কি ভুলেছিস মরেছিলাম কেন
আতশবাজি ফোটা জীবন–উৎসবে?
কেন এ হৃদয়ের আগুন জ্বেলেছিলি
শৈত্যমরা দেহ জাগিয়ে কলরবে!
সে আঁচে প্রাণ বাঁচে, সখা হে রাস্তার
কিসের অপেক্ষা কিসের অপচয়,
বারুদ বুকে ধরি, গ্রেনেড বাঁধি হৃদে
কেবল তোর লাগি জীবন সঞ্চয়!
রাষ্ট্রহীন এক বিদেহ বৈদেশে
গড়ব দুজনায় সাধের সংসার,
সে আশে পথ মেশে রাঙাভা দিগন্তে
গোধূলিপটে হোক প্রেমের সঞ্চার.                
      
				
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ফোনে খালেদা জিয়া বললেন, ‘ভাই, জিয়াকে ড্রয়িংরুমে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।’
৭৫-এর উত্তপ্ত নভেম্বর
শেখ মুজিব হত্যার পর বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ছিল দ্বিধাগ্রস্ত এবং দেশ প্রতিদিন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা সর্বজনাব নজরুল ইসলাম তাজউদ্দীন আহমেদ, মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও আবদুস সামাদ আজাদকে আটক করেন এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করে রাখেন। বাতাসে প্রতিনিয়ত নানা গুজব উড়ছিল ও সাধারণ নাগরিকগণ ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। সেনানিবাসেও অস্থিরতা বিরাজ করছিল এবং ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, নিজেদের মধ্যে যে-কোনো সময়ে সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আর্মিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি ছিল।
পদাতিক বাহিনীর মধ্যে, বিশেষ করে ঢাকা ব্রিগেডের ১ম, ২য় ও ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারগণ মেজর ফারুক, রশিদ ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছিল এবং আর্মির চেইন অফ কমান্ড পুনঃস্থাপনের জন্য তৎকালীন ব্রিগেড অধিনায়ক কর্নেল শাফায়াত জামিলও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। কারণ তাঁর অধীনস্থ অফিসার ও সৈন্যগণই তাঁর সার্বিক কর্তৃত্ব উপেক্ষা করে শেখ মুজিব হত্যায় জড়িত ছিল। এ পরিস্থিতিতে সেনাসদরে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফও সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসারদের অনিয়ম ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলে উত্তেজিত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম