নাটোরে টিসিবির পণ্য নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ১০
Published: 16th, March 2025 GMT
নাটোরে বড়াইগ্রামে টিসিবির পণ্য ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। বিএনপির ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) বিকালে বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের ধানাইদহ বাজারে এ সংঘর্ষ ঘটে।
এতে আব্দুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, কালু মিয়া, আকাশ, শাহীনুর রহমান, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফরহাদ হোসেন ও মিজানুর রহমানসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুর ২টার দিকে নগর ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য বিতরণ চলছিল। এ সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ সরকারের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা অবিক্রিত পণ্যগুলো ভাগাভাগি করে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্টন হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হোসেন আবু লোকজনসহ পরিষদে গিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন এবং অবশিষ্ট পণ্যের অংশ দাবি করেন।
এ সময় কথা কাটাকাটির জের ধরে উভয় পক্ষই লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। বিকাল চারটার দিকে মিল্টন হোসেন তার লোকজনসহ ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে বসেছিলেন। এ সময় আসাদ সরকারের লোকজন পুনরায় চাইনিজ কুড়াল, হাসুয়া ও লাঠিসোটাসহ সেখানে গিয়ে ৬-৭ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে। পরে তারা ওয়ার্ড বিএনপি অফিসের চেয়ার-টেবিলসহ ডেকোরেটর থেকে আনা চেয়ার ভাঙচুর করে চলে যায়।
এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা আসাদ সরকার বলেন, “তারাই আমাদের ছেলেদেরকে মেরেছে, আর ওয়ার্ড বিএনপির অফিস আমরা ভাঙচুর করিনি। তারা নিজেরাই ভাঙচুর করে আমাদের দোষ দিচ্ছে।”
নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্টন হোসেন বলেন, “টিসিবির পণ্য ভাগ করে নেওয়ার প্রতিবাদ করলে তারা হামলা করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এরপর আমরা বিএনপি অফিসে পূর্ব নির্ধারিত ইফতার মাহফিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় তারা পুলিশের উপস্থিতিতে সশস্ত্র অবস্থায় অফিসে হামলা চালিয়ে ৬-৭ জনকে কুপিয়ে জখম করেছে এবং অফিসে ভাঙচুর করেছে।”
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।”
ঢাকা/আরিফুল/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র স ঘর ষ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
মার্জিন ঋণ নিতে বিনিয়োগ লাগবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিতে হলে বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া থাকতে হবে নিয়মিত আয়ের উৎস। আর বিনিয়োগের ৬ মাসের আগে ঋণ পাবে না কোনো বিনিয়োগকারী। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড এবং কোম্পানির হিসাবেও মার্জিন ঋণ দেওয়া হবে না। চূড়ান্ত মার্জিন ঋণ নীতিমালায় এসব সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ প্রসঙ্গে এসব তথ্য তুলে ধরেন পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের সদস্যরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এবং পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা বলেন, পুঁজিবাজার অংশীজনদের সাথে আলোচনা করেই সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে টাস্কফোর্স। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ৩ মাসের আগে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে, মার্জিন নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি বন্ধ হবে। মার্জিন ঋণ নিয়ে সুশাসন না থাকায় বিপুল অংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীর পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুঁজিবাজার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মার্জিন খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা টাস্কফোর্সের মূল্য উদ্দেশ্য।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, অনেক স্টেকহোল্ডার দাবি করছেন তাদের সাথে বসা হয়নি। অথচ আমরা দেখলাম তাদের সাথে আমরা ৩ বারও বসে ফেলেছি। তবে কেন এরকম মিস কমিউনিকেশন। আমরা অংশীজনদের বাহিরেও যারা বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের সাথেও আমরা বসেছি। এরপরেও যদি মনে হয় আমরা কিছু বাদ দিয়েছি বা গ্যাপ ছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানালে তা আমরা যুক্ত করে দিব। তবে অংশীজনদের থেকে বেশি আমরা সাধারণ মানুষদের থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে। যার কারণ বাজার অচল অবস্থায় চলে গেছে। সে অবস্থাটাকে মাথায় রেখে আমরা চিন্তা করেছি, এর অন্যতম কারণ হলো মার্জিন রুলস। কারণ মার্জিন রুলসটা যদি প্ল্যান করে দেওয়া হতো, গভর্নেন্সটা যদি সঠিক থাকতো, তাহলে এ ধরনের অবস্থা তৈরি নাও হতে পারতো। তাই মার্জিন রুলসকে আমরা টপ প্রায়োরিটি আইটেম ধরেছি। পৃথিবীতে মার্জিন রুলসকে শর্টটার্ম ওয়ে হিসেবে নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ১:৩/৪ রেশিওতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হচ্ছে৷ এগুলা কিভাবে হয়েছে? এরপর বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি ক্রিয়েট হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই জিনিসগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি বাজারে না হয়। মার্জিন নিয়ে আর গ্যামব্লিং করা যাবেনা। মার্জিন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এতো পরিমাণ নেগেটিভ ইক্যুইটি না থাকলে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি হতো না।
হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে ফোকাস গ্রুপ। মূল কাজ করেছে টাস্কফোর্স। আমরা কাজ করতে যেয়ে পাবলিকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকেও পেয়েছি, তবে পাবলিক থেকে পরামর্শ বেশি এসেছে। এটা খুব ভালো বিষয়। কারণ যত বেশি পরামর্শ আসবে, আমরা তত বেশি রিফাইন করার সুযোগ পাব।
সংবাদ সম্মেলনে একটি উপস্থাপনায় পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আজকে আমার খুবই ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে আইনি ফরমেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে ব্রেইন স্টর্মিং ড্রাফটিং হয়েছে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে। এ মার্কেটে যারা কাজ করেন, তাদের আইডিয়াগুলো নিয়েই ড্রাফট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির ওয়ার্কিং টিমের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এছাড়া মার্কেটের বড় বড় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব নিয়ে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করেছি।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ