Samakal:
2025-06-16@08:56:44 GMT

কাঙালের ধনে প্রভাবশালীর হস্ত

Published: 16th, March 2025 GMT

কাঙালের ধনে প্রভাবশালীর হস্ত

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ শীর্ষক প্রকল্পের ঘোষিত উদ্দেশ্য যাহাই হউক, বাস্তবে উহা ছিল সরকারি অর্থ নয়ছয়ের ন্যক্কারজনক আয়োজন। রবিবার প্রকাশিত সমকালের এতৎসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এহেন চিত্রই পরিস্ফুট। প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ২০১০ সালের আগস্টে সূচিত কর্মসূচির অধীনে পরবর্তী ১৪ বৎসরে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টিসহ ৫৮ জেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ৮৭ কোটির অধিক টাকা বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দের প্রায় ২৮ কোটি টাকা ছিল উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়। তন্মধ্যে কতিপয় জেলা ঘুরিয়া প্রতিবেদকের অভিজ্ঞতা হইল, প্রকল্পের সুবিধা লইয়াও অধিকাংশ ভিক্ষুক ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে স্থায়ী হইতে পারেন নাই। অঞ্চলগুলিতে ভিক্ষাবৃত্তি হ্রাসের বিপরীতে বরং নূতন ভিক্ষুকের আবির্ভাব দেখা গিয়াছে। তদুপরি, সরকারি নথির তথ্য উদ্ধৃত করিয়া তিনি জানাইয়াছেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসনে ক্ষুদ্র ব্যবসা, গরু-ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগি ও সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। তবে বরাদ্দের বৃহদাংশ ৬৫ শতাংশ ব্যয় হইয়াছে জরিপ, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে। প্রশিক্ষণের নামে এই প্রকল্পে শুধু কাগজ-কলমে কর্মসূচি চলিবার কারণে সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীর পক্ষে কর্মদক্ষতা অর্জন সম্ভব হয় নাই। ফলে ‘পুনর্বাসিত’ ভিক্ষুকরা ফিরিয়া গিয়াছেন পুরাতন পেশায়। শুধু উহাই নহে; প্রকল্পের ‘উপকারভোগী’ সকলে বাস্তবে ভিক্ষুকও ছিলেন না। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেদনে বগুড়া সদরে প্রকল্পের উপকারভোগী ১০ জনের মধ্যে মাত্র একজন ছিলেন প্রকৃত ভিক্ষুক।

স্পষ্টত, প্রকল্পের উপকারভোগী বাছাই প্রক্রিয়াতেই গন্ডগোল ছিল, যাহার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপেক্ষা করিতে পারেন না। তৎকালীন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গও এহেন অপকর্মে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, উহা বুঝিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। তাহারা যে কাঙালের ধনে ভাগ বসাইতেই এহেন ভুয়া উপকারভোগী বাছাই করিয়াছেন, তাহাও বলা বাহুল্য। প্রতিবেদনে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান-বগুড়া জেলা শাখার সম্পাদক যথার্থই বলিয়াছেন, প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকিবার কারণে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচি ফলপ্রসূ হইতেছে না। এই উপসংহারও টানা যায়, প্রকল্পটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পকেট ভরিয়াছে মাত্র। 

আলোচ্য প্রতিবেদনটি উত্তরাঞ্চল বিষয়ে হইলেও সমকালে একই দিনে আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হইয়াছে, যাহার শিরোনাম– ‘ভিক্ষুকমুক্ত খুলনা শুধু নামেই’। উপরন্তু গত ১২ মার্চ কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় একই কর্মসূচির ব্যর্থতা লইয়া সমকালে আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হইয়াছিল। অর্থাৎ ভিক্ষাবৃত্তি হইতে দরিদ্র মানুষকে দূরে রাখিবার লক্ষ্যে গৃহীত সরকারি প্রকল্পটি শুধু উত্তরাঞ্চলেই নহে, প্রায় সর্বত্র ব্যর্থ হইয়াছে, যদিও প্রকল্প ‘সফল’ বলিয়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদ্রূপ মুখে ফেনা তুলিতে কোনো লজ্জা পান নাই, তদ্রূপ সরকারি প্রতিবেদনেও কথিত সাফল্যের জন্য উহাদের বাহবা দান আটকায় নাই। সরকারি প্রকল্পের নামে জনগণের অর্থ নয়ছয়ের বহু নজির আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রত্যক্ষ করিয়াছি। উক্ত প্রকল্প সেই ক্ষেত্রেও নূতন নজির স্থাপনা করিল। 
‘ভিক্ষাবৃত্তি’ শব্দটি শ্রবণে একটা পেশা মনে হইলেও প্রকৃতপক্ষে উহা কোনো সম্মানজনক পেশা নহে। বাংলাদেশের ন্যায় অচিরেই উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত হইবার পথে থাকা রাষ্ট্রের জন্যও উহা আদৌ সম্মানজনক নহে। সুতরাং ভিক্ষাবৃত্তির অবসান শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য শোভন ও মর্যাদাবান জীবন নিশ্চিত করিবার জন্যই নহে, জাতীয় স্বার্থেও গুরুত্বপূর্ণ। ইহাও সত্য, কেবল সামগ্রিক দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সাফল্যই এহেন অবমাননাকর বৃত্তির অবসান ঘটাইতে পারে না; অন্তত দারিদ্র্যমুক্ত বলিয়া পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভিক্ষুকের উপস্থিতিই উহার সপক্ষে সাক্ষ্য দেয়। অতএব, ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে পৃথক কর্মসূচির যৌক্তিকতা অস্বীকারের উপায় নাই। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে পরিকল্পনাটি বাস্তবানুগ ও টেকসই হইতে হয়– ইহাও অনস্বীকার্য।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র র জন য হইয় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ