কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। জুলাইয়ের ১৬ তারিখের পর থেকে যখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফেইসবুকে ওপেন পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করে আন্দোলনে জয়েন করা শুরু করল। তখন আপনারা হাজার হাজার লাইক কমেন্ট করলেন। আর মনে মনে ভাবলেন, ছেলে/মেয়েগুলো কতই না সাহসী, যেই কাজ করছে। যদি আন্দোলন থেমে যায়, তাহলে কি হবে ওদের!

আপনারা এতই বাহবা দিচ্ছিলেন যে, আমার ছাত্রলীগে কোনো পোস্ট-পদবি না থাকায় আপসোস হচ্ছিল। থাকলে তো ফেইসবুকে পদত্যাগ করতে পারতাম। তখন কেন এত বাহবা দিলেন? তখন যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের বললেন না কেন পদত্যাগ করেছো, তো কি হয়েছে? তুমি ছাত্রলীগ করতে, তুমি আন্দোলনে আসতে পারবে না। আন্দোলনে আসলে তোমাকে প্রতিহত করা হবে।

আপনারা সারজিস আলমের মতো পোস্টড ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আন্দোলনে আসলেন। তখন তো ভাবলেন না, এ তো দোসর, এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীও হতে পারে। সে যেখানে, আমরা সেখানে যাব না।

ময়মনসিংহে ছাত্রলীগের মিছিলের ছবি আছে, শহীদ সাগর বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্রলীগের মিছিলের ছবি আছে। আরো এমন শত শহীদের কবরের পাশে গিয়ে ছবি তুললেন আবার দাবি করলেন, জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদেরই নিজেদের শহীদ বলে মনে করি।

এক কাজ করেন— এখন দাবী করেন ছাত্রলীগের সঙ্গে যে শহীদদের ছবি পাওয়া যাবে, তাদের যেন গ্যাজেটেড শহীদ লিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ ওয়ান্স এ ছাত্রলীগ অলয়েজ এ ছাত্রলীগ, শহীদ হওয়ার পরও সে ছাত্রলীগ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমি যদি আজ মারা যেতাম— তাহলে হয়ে যেতাম আপনাদের শহীদ। আর এখন গাজী হিসেবে বেঁচে আছি বলে আপনাদের দৃষ্টিতে হয়ে আছি দোসর, এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী, দালাল, চাটুকার ইত্যাদি হিসেবে।

সাদিক কাইয়ুম পোস্টেড অ্যাক্টিভ ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে হয়ে যেতে পারে আপনাদের ইমাম। আর আমার না আছে পোস্ট পদবি, না আছে পদবির জন্য একটা সিভি। তবুও ছাত্রলীগই থেকে গেলাম!

আমার চোখে দেখা অ্যাক্টিভ ছাত্রলীগ হয়ে কোনো আন্দোলন না করে, ইভেন আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট না দিয়ে, ৫ আগস্টে হাসিনা পালানোর পর পতাকা বেঁধে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে, স্বাধীন লিখে হয়ে গেল আপনাদের দলের বিরাট নেতা, বিরাট দায়িত্বশীল।

সমস্যা কোথায়? হ্যাঁ, সমস্যা আছে। সেটা হলো আমরা আপনার দলে না যোগ দিয়ে, নিজেরাই যেই স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলন করছিলাম, সেই স্বপ্নের একটি দল গঠন করতে চাচ্ছি।

মনে রাখবেন, যে ছেলে-মেয়ে ওইদিন ছাত্রলীগের আন্ডারে থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল, মৃত্যুটা সামনে দেখেই যোগ দিয়েছিল। কারণ আপনারা হয়তো বেঁচে যেতে পারতেন, তারা আপনাদের ততটা চেনে না। কিন্তু ছাত্রলীগের আন্ডারে যারা হলে ছিল, ছাত্রলীগ তাদের ‘কোর্ট মার্শাল’ করতো।

তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হতো না শুধু, বেঁচে থাকাও দুষ্কর হতো। যারা মৃত্যু দেখে এসেছে, তাদের কিসের ভয় দেখান? ট্যাগিং রাজনীতি একদল তো করেছিল, টিকতে কী পেরেছে? এ রাজনীতি যদি আপনারা কন্টিনিউ করেন, আপনারাও টিকতে পারবেন না।

আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি, সেই দিকে আমরা এগিয়েই যাব। কোন ভয়ভীতি আর চক্রান্ত কাজে আসবে না। কারণ আমরা ৫ আগস্টের লং মার্চে মৃত্যুকে দেখে আসা লোক। আর এই ট্যাগিংয়ের ফলে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশীরা আবার খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেলে, তার দায় কিন্তু আপনাদের নিতেই হবে।

ছাত্রলীগ ট্যাগিং হাতিয়ার দিয়ে ভিন্নমত দমন করে, নিজেরাই দমন হয়ে গেছে। সেই হাতিয়ার ছাত্রলীগ থেকে নিয়ে, যদি এভাবে ব্যবহার করতে থাকেন— আপনারাও কোন এক দিন দমন হয়ে যাবেন। প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না।

তবে সবশেষে আপনাদের আহ্বান জানাই, চলুন যেই আশা নিয়ে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থান’ আমাদের প্রায় ২ হাজার ভাই-বোন জীবন দিয়েছে—সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা লীগের কালচার- এই ট্যাগিং রাজনীতি থেকে সরে আসি এবং গণঅভ্যুত্থানের প্রতিটা শক্তি আবার সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। একে অপরের যৌক্তিক সমালোচনা করি। একটি ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ গড়ি।

(লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী সদস্য, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ)

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আপন দ র র জন ত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ