রোজার পূর্ণতার জন্য চোখের হিফাজত জরুরি
Published: 17th, March 2025 GMT
বছর ঘুরে মাহে রমাযানের জন্য সাহাবায়ে কিরাম রা. উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। এ মাস থেকে সর্বোচ্চ অর্জনের জন্য তাঁদের যারপর নাই প্রচেষ্টা থাকতো সর্বদা। রাসূলও সা. তাদেরকে জানিয়েছেন কীভাবে প্রত্যাশা সাথে প্রপ্তির মিল করা যায়। কোনভাবেই যেন রোজা সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই পথ বাতলে দিয়েছেন তিনি।
আবু হোরায়রা রা.
বিশিষ্ট সাহাবি আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি সা. বলেছেন, রোজা হলো ঢাল স্বরূপ। তোমরা এটাকে ত্রুটিযুক্ত করো না, রোজাকে ভূলে যেয়ো না। কেউ যদি রোজাদারের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় অথবা তাকে গালমন্দ করে তবে সে অন্তত দুবার বলবে, আমি রোজাদার। (বোখারি)
উল্লেখিত হাদিসগুলোর বর্ণনা প্রমাণ করে রোজাকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে গুনাহ ছাড়ার কোনো বিকল্প নেই। চোখ দিয়ে ইসলাম নিষিদ্ধ কোনো কিছু দেখা যাবে না, হাত দিয়ে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা যাবে না, মুখ দিয়ে মিথ্যা বলা কিংবা ধোঁকাবাজি করা যাবে না। এক কথায় সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহমুক্ত রাখতে হবে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহের সাথে সম্পৃক্ত করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে আল্লাহ তা’আলার বড় এক নেয়ামত ‘চক্ষু’। এটি ভালো কাজে যেমন উৎসাহিত করে তেমনি কারাপ পথেও ধাবিত করে। এর মূল্য ও গুরুত্ব আল্লাহ তা’আলার কাছেও অনেক বেশি।
হযরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা. এর ভাষায় আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন; ‘আমি যার চক্ষুদয়কে নিস্প্রভ করে দিয়েছি, অতপর সে ধৈর্য ধারণ করেছে এবং প্রতিদান প্রত্যাশা করেছে, আমি তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হবো না’। (তিরমিযি)
মানব দেহে এই চোখের গুরুত্ব অনেক বেশি। দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় পঞ্চইন্দ্রীয়ের মধ্যে চোখের বিকল্প যেমন নেই তেমনি প্রভাবও সর্বাধিক। অন্যান্য ইন্দ্রীয়ের প্রভাব তৎক্ষনাৎ শেষ হয়ে গেলেও চোখের প্রভাব হয় দীর্ঘস্থায়ী। কুরতুবী রহ. বলেন: ‘চোখ হলো মানুষের অন্তরে প্রবেশের সবচেয়ে বড় দরজা’। ইমাম গাজালী রহ. বলেন, কোনো ভালো বা মন্দ মানব অন্তরে প্রবেশ করে প্রভাব সৃষ্টি করার ধারাবাহিকতা এভাবে: প্রথমে দৃষ্টিগোচর হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি হয়। তৃতীয় পর্যায়ে কাজটি করার জন্য অন্তর পরিকল্পনা করে। চতুর্থ পর্যায়ে কাজটি করে ফেলা। অবশেষে কাজটিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
এ কারণে ভালো দৃষ্টি যেমন ভালো তেমনি খারাপ দৃষ্টিও অত্যন্ত খারাপ। ইসলাম এ ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল নির্দেশনা দিয়েছে। চোখের সামান্য খেয়ানতকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেছেন: নিশ্চয় শ্রবন, দৃষ্টি ও অন্তর প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সূরা ইসরা: ৩৬) অন্য আয়াতে তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা চোখের খিয়ানত এবং তোমরা অন্তরে যা লুকিয়ে রাখ সে সম্পর্কে সম্মক জ্ঞাত। (সূরা গাফের: ১৯) অন্যত্র বলেছেন: চোখের হিফাজত করতে পারলে সেটা হবে: তোমাদের জন্য সর্বোচ্চ অন্তরের পবিত্রতা। (সূরা নূর: ৩০)
চোখের হেফাজতের জন্য করণীয়:
১.চক্ষু অবনত রাখতে হবে। পবিত্র কুরআনের সূরা নূর এর ৩০-৩১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন: হে নবী আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফজত করে। তবে এটা তাদের অন্তরের জন্য হবে অধিক পবিত্রতা। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সাম্মক জ্ঞাত। মুমিন নারীদেরকেও আপনি বলে দিন তারাও যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফজত করে.........।
২.নিষিদ্ধ বিষয়ের দিকে নজর পড়ে গেলে দ্বিতীয়বার তাকানো যাবে না। রাসূলুল্লাহ সা. হযরত আলী রা. কে বলেন: নিষিদ্ধ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি পড়ে গেলে তুমি চোখকে ঘুরিয়ে নিবে, দ্বিতীয়বার তাকাবে না। কেননা প্রথম বার তোমাকে ছাড় দেয়া হবে, দ্বিতীয়বার নয়। (আবু দাউদ)
৩.দৃষ্টির খিয়ানত হতে পারে এমন কাজ থেকে দূরে থাকা। হযরত আবু সাঈদ খুদুরি রা. রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবীজি সা. বলেছেন, তোমরা রাস্তার ধারে বসবে না। সাহাবায়ে কিরাম রা. বললেন, হে আল্লাহর রসুল সা. আমাদেরতো প্রয়োজনে রাস্তার ধারে বসে কথাবার্তা বলতেই হয়। নবীজি সা. বললেন, যদি বস তবে তার হক আদায় করবে। সাহাবায়ে কিরাম রা. বললেন, রাস্তার হক কি? উত্তরে নবীজি সা. বললেন, ১. দৃষ্টি অবনত রাখা ২. পথের কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা ৩. সালামের উত্তর দেওয়া ৪. মানুষকে ভালো কাজের আদেশ করা এবং ৫. খারাপ কাজ করা থেকে নিষেধ করা। (বুখারি)
সাহাবায়ে কিরাম রা. নিজের চোখ হেফাজত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। কখনও খেয়ানত হয়ে গেলে সেজন্য কেঁদেছেন সারাজীবন। ইমাম আওযাাঈ রহ. বর্ণনা করেন, কোন এক যুদ্ধে এক দাসীর কাপড় খুলে গেলে গাজওয়ান রা. এর দৃষ্টি তার দিকে পড়ল। আবু মুছা রা. বললেন: ‘তুমি তোমার চোখের প্রতি জুলুম করলে। অতএব আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। তিনি এমন ভাবে অনুতপ্ত হলেন যে, ইতিহাসে পাওয়া যায়, গাজওয়ান রা. মৃত্যু পর্যন্ত আর কোনোদিন হাসেননি।
চোখ দিয়ে কি করা উচিৎ:
১. শরীয়াহ অনুমোদিত বিষয় দেখব। ২. আল্লাহর সৃষ্টি দেখে দেখে তাঁকে খোঁজার চেষ্টা করব। ৩. কুরআন, হাদিস অধ্যায়ন করব। ৪. বায়তুল্লাহ দেখব। ৫. পিতা-মাতার দিকে তাকাব। ৬. আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে দেখব। ৭. আল্লাহর ভয়ে ও মুহাব্বতে চোঁখ দিয়ে অশ্রু ঝরাব।
এর বিনিময়ে জান্নাত পাওয়া যাবে, আরশের নিচে ছায়া পাওয়া যাবে।
হযরত আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসুল সা. কে বলতে শুনেছি, রাসুল সা. বলেছেন: দুই ধরনের চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। ১. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝড়ায় ২. যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় জাগ্রত থেকে পাহারা দেয়। (তিরমিযি)
উম্মুল মুমিনিন সাইয়্যেদা হাফসা রা. বলেন, আমি আমার বাবা উমর রা. এর ঘরে ছিলাম। ইত্যবসরে নবি কারীম সা. সেখানে এলেন। কথা-বার্তায় দেরি হয়ে গেলো। এজন্য সিদ্ধান্ত নিলেন, আজকের রাত এখানেই কাটিয়ে দেবেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার পাশে একই বিছানা ঘুমিয়ে পড়লেন। হাফসা রা. বলেন, গভীর রাতে আমি অনুভব করলাম- আমার গালে গরম কিছু একটা স্পর্শ করল। মনোযোগের সঙ্গে ভাবতেই বুঝতে পারলাম, সেটি কারো অশ্রুর উষ্ণতা। আমি শোয়া থেকে ওঠে বসলাম। আমরা দুজনে যেহেতু একটি বালিশের ওপরই মাথা রেখে ঘুমিয়েছি; এজন্যে বুঝতে পারলাম, নবি করীম সা. চোখ মুবারক থেকে প্রবাহিত অশ্রু বালিশের ওপর পড়ছে। সেই অশ্রুর কারণে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। আমি আতঙ্ক জড়ানো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম- হে আল্লাহর রাসল সা.! কী কারণে আপনার চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে?' বললেন, তুমি কি শোনোনি, তোমার ভাই বারান্দায় তাহাজ্জুদের নামায পড়ছে। এই মাত্র সে কোন আয়াতটি পড়ছে? হাফসা রা. বলেন, আমি মনোযোগ নিবদ্ধ করলাম। বুঝতে পেলাম, ভাইয়া এখন তাহাজ্জুদের মাঝে এ আয়াতটি পড়ছেন-
‘কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে’ (সূরা মুতাফ্ফিীন: ১৫) অর্থাৎ সেদিন তারা আল্লাহর সাক্ষাত পাবে না। এ আয়াত শুনে নবী করীম সা. এর চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো যে, কতই না হতভাগা তারা, যারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর দিদার থেকে বঞ্চিত হবে।
অতএব, আসুন আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যেন কোনোভাবেই আমাদের চোখের খিয়ানত না হয়। আমাদের রোজা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও ব্যাপক সাধনা থাকলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই আমাদেরকে সহজ করে দিবেন। আমরা যদি গুনাহের ক্ষতির কথা সর্বদা মনে রাখতে পারি তবেই আমাদের পক্ষে গুনাহ ছেড়ে দেওয়া সহজ হবে। মনে রাখতে হবে, চোখের খিয়ানত শুধু রোজায় নয় সব সময়ই হারাম। আল্লাহ সহায় হোন, আমিন।
লেখক: প্রিন্সিপাল ও মুহাদ্দিস, জামিয়া সাঈদিয়া কারীমিয়া, সাঈদনগর, ভাটারা ঢাকা।
ঢাকা/শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবনত র খ আল ল হ ত র খ য় নত আম দ র বল ছ ন র জন য জন য স বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।
কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।
জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।
২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।
চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।