ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের ১৬ নির্দেশনা
Published: 18th, March 2025 GMT
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ১৬ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়েছে, এ বছর শবে কদর, ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে দীর্ঘ ছুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ছুটির সময় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনার জন্য ১৬ নির্দেশনা রয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে ছুরিকাঘাতে চাচা-চাচিসহ ৪ জন হাসপাতালে
সংকট নিরসনে বিশেষ বিসিএসে নিয়োগ হবে ২ হাজার চিকিৎসক
ঈদুল ফিতর ২০২৫ এর ছুটির সময়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাপনার জন্য নিম্নলিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হলো-
১.
২. জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমারজেন্সি ওটি, ল্যাব সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।
৩.কর্মস্থলে পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে জনবলকে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়া যেতে পারে।
৪. প্রতিষ্ঠান প্রধান নিরবচ্ছিন্ন জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ছুটি মঞ্জুর করবেন।
৫. সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করে শুধু মাত্র ঈদের ছুটিকালীন সময়ে নিজ জেলার মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জনবল সমন্বয় করতে পারবেন।
৬. হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ ইউনিট প্রধানরা প্রতিদিন তাদের বিভাগীয় কার্যক্রম তদারকি করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে জরুরি ল্যাব, এক্সরে সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনকূল সেবা চালু রাখতে হবে।
৭. ছুটি শুরু হওয়ার পূর্বেই ছুটিকালীন সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, আইভি ফ্লুইড, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী মজুদ ও তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে স্টোরকিপার অথবা ছুটিকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফ অবশ্যই নিজ জেলা ও উপজেলায় অবস্থান করবেন।
৮. অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।
৯. ছুটিকালীন হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আগামপত্র দিতে হবে।
১০. ছুটিকালীন সব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
১১. প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা ছুটিকালীন সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করবেন এবং ঈদের দিন কুশল বিনিময় করবেন।
১২. প্রতিষ্ঠান প্রধান ছুটি নিলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন এবং দায়িত্ব গ্রহণকারী কর্মকর্তা সকল দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
১৩. প্রতিষ্ঠান প্রধান ঈদের দিন রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন তদারকি করবেন এবং রোগীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
১৪. বহির্বিভাগ একাধারে ৭২ ঘণ্টার অধিক বন্ধ রাখা যাবে না। এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
১৫. ক) সব বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অধীনে সার্বক্ষণিক জরুরি ও প্রসূতি বিভাগ খোলা রাখবে।
খ) কোন রোগী রেফার করার আগে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা এবং যাত্রাপথের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
গ) রেফার্ড রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্স প্রাপ্তির প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে হবে।
১৬. যেকোনো দুর্যোগ, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ যমন ত র ন শ চ ত করত চ ক ৎসক র জন য করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
আউটসোর্সিং এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
আধুনিক শ্রমবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তৃত খাত হলো আউটসোর্সিং। এ খাতের মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। অথচ এই শ্রমিকদের অধিকাংশই শোভন কাজের মৌলিক মানদণ্ড থেকে বঞ্চিত। চাকরির স্থায়িত্ব নেই; সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই; নেই সংগঠনের অধিকার– এমন বাস্তবতায় শ্রমিকরা এক অনিশ্চিত ও অনুৎপাদনশীল পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন।
এ প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি শ্রম সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে ‘শ্রমজগতের রূপান্তর-রূপরেখা: শ্রমিক-অধিকার, সুসমন্বিত শিল্প-সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি সুপরিকল্পিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন অধ্যায়ে কাজের স্বীকৃতি, অধিকার, নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিয়ে যেসব সুপারিশ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে আউটসোর্সিং খাতে নিযুক্ত শ্রমিকদের নিয়ে তৎপরতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে সরকারের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ১২৫০টি ঠিকাদারি সংস্থা জনবল সরবরাহ করছে। এর বাইরেও অগণিত অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা কর্মঘণ্টা, মজুরি, ছুটি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার।
অধিকাংশ আউটসোর্সিং শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পান না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার নির্ধারিত মজুরি না দিয়ে বেতন থেকে অবৈধভাবে টাকা কেটে রাখে; উৎসব ভাতা দেয় না; ওভারটাইমের ভাতা দেয় না। সাম্প্রতিক ২০২৫ সালের আউটসোর্সিং নীতিমালায় উৎসব ভাতা ও বৈশাখী ভাতা অন্তর্ভুক্তিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলা যায়, তবে বাস্তবায়ন ও নজরদারি এখনও দুর্বল।
নীতিমালায় নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি সংক্রান্ত কোনো অর্থনৈতিক সুরক্ষা না থাকায় তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে অন্তঃসত্ত্বা হলেই চাকরিচ্যুতির শঙ্কা থাকে। বেসরকারি খাতে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। নতুন নীতিমালায় ৪৫ দিনের প্রসূতিকালীন ছুটি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা বিদ্যমান শ্রম আইনের ১১২ দিনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আউটসোর্সিং শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার পথ রুদ্ধ। তারা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন না। করলে চাকরিচ্যুতির শিকার হন। ফলে শ্রমিকস্বার্থে কোনো সামাজিক সংলাপ বা দরকষাকষির সুযোগ থাকে না।
বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, ওয়াসা, নিরাপত্তা খাতে কর্মরত হাজার হাজার আউটসোর্সিং শ্রমিক পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। করোনা মহামারিতে তারা সম্মুখ সারিতে থেকেও কোনো রকম ক্ষতিপূরণ পাননি। শ্রম বিধিমালার ১৬(৩) অনুযায়ী মালিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল।
সে জন্য শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে আউটসোর্সিং শ্রমিকদের জন্য যেসব সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে এ খাতে শোভন কাজের নিশ্চয়তা আসবে। আউটসোর্সিং খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের শোভন কাজ, মৌলিক অধিকার এবং কর্মস্থলে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
আমি মনে করি, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়ী জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে আইনের ধারা ও বিধি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা দরকার। ঠিকাদারের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ বা কমিশনের ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করা দরকার। যারা ৫-১০ বছর বা তদূর্ধ্ব সময় ধরে কর্মরত থেকে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাদের শ্রম আইন অনুযায়ী অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মূল মালিককে দায়বদ্ধ করা দরকার।
শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কাজ করতে রাজি না হলে তাদের চাকরিচ্যুত বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। এ বিষয়ে শ্রম পরিদর্শন দপ্তর কঠোর নজরদারি করবে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, দপ্তর ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে। যেসব দপ্তর ও সেবা খাতে ইতোমধ্যে আউটসোর্সিং করা হয়েছে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থায়ী নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের প্রত্যাশা একটাই– শোভন কাজের বাস্তবায়ন। এ খাতের বৈষম্য কমাতে হলে সরকারের নীতিগত, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপ দরকার। একই সঙ্গে সমাজকেও সচেতন হতে হবে, যাতে মানুষ সস্তা সেবার পেছনে শ্রমের শোষণকে গুরুত্ব দিতে শেখে।
মো. মাছুম বিল্লাহ: আইন কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর