গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় পানি ছেড়ে দিয়ে ভরা নলেয়া নদী খনন করার অভিযোগ উঠেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। আর ভরা নদী খনন করলে কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরুর দিকে পানি প্রবাহের মুখে বাধা দেওয়া ছিল। প্রকল্পে অনিয়ম, দূর্নীতি করতেই তারা ইচ্ছেকৃতভাবে পানি ছেড়ে খনন কাজ করছেন। ভেকু (এক্সেভেটর) দিয়ে নদীর সামান্য মাটি কেটে সেগুলো পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে রাখা হচ্ছে। বর্ষা এলে পাড় ভেঙ্গে নদী ভরাটের পাশাপাশি সেই মাটি আবাদি জমিতে পড়বে। নদীর তলদেশ ৬ থেকে ৭ ফিট গভীর করার কথা। কিন্তু পানি থাকার কারণে সেটাও আর বোঝার উপায় নেই। দুই পাড়ের অপরিকল্পিত প্রশস্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

নলেয়া নদীকে খাল দেখিয়ে পুনঃখনন কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ‘‘আসলে নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সকল কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নদীকে কেন খাল দেখিয়ে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কাজ করছে, তা আমার বোধগম্য নয়। জেলার তালিকাভুক্ত ২৩টি নদীর একটি নলেয়া নদী। নদী না বলে খাল বললে এর পরিচয় বিপন্ন হবে।’’

আরো পড়ুন:

সুগন্ধা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবি, শিশু নিখোঁজ

আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে ‘নরসুন্দাকে বাঁচাতে প্রাণের আকুতি’

কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে গভীর নলকূপ পূনর্বাসন ও স্থাপন, বিদ্যুতায়ন ও নালা নির্মাণ, ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ, কৃষি ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ, পানি বিতরণ ও প্রি-পেইড মিটার স্থাপন, চারারোপণ, অকেজো নলকূপ সচলকরণ, পুকুর পূনঃখনন, খাল খননসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

গাইবান্ধা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলায় খাল খনন কাজ হাতে নেয় বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। উপজেলার নলেয়া নদীর ফরিদপুর ইউনিয়নের মহেষপুর মাঝিপাড়া থেকে শুরু করে একই উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের কুঞ্জ মহিপুর ব্রিজের শেষ মাথা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার (৯.

৯৫০ কিমি) নদী খনন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। কাজটি পায় ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরুর  আদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ২ ডিসেম্বর। ৪৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলা হলেও চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু হয়। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের কুঞ্জ মহিপুর এলাকার নলেয়া নদীর ১০ কিলোমিটার অংশে খনন কাজ করছে রংপুর, নওগাঁ, রাজশাহী ও পাবনার ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার পাশে একসঙ্গে পাঁচটি ভেকু (এক্সেভেটর) দিয়ে নদী খননের কাজ চলছে। কিছুক্ষণ আগেই শুকনো নদীটিতে উজান থেকে পানি আসছে। সেই পানিতে নিমিষেই ভরে যাচ্ছে নাব্যতা হারানো এই মরা নদী। বোঝাই গেল কিছুক্ষণ আগেও শুকনো ছিল নদীর তলদেশ। সদ্য পানি ছেড়ে দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। দেখতে দেখতে পানি বুক সমান। আর এই পানির মধ্যে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। খননের কাদা মাটি পাড়ে এবড়োখেবড়ো করে রাখা হচ্ছে।

খনন কাজ শেষ করা কিছু অংশে গিয়েও দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব এলাকাতেও কোনোরকমে খনন কাজ করা হয়েছে। দুই পাড় কোথাও সরু, কোথাও প্রশস্ত। কিছু জায়গায় বেশি সরু এবং অগভীর। অমসৃণ পাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়াও মুশকিল। 

সাদুল্লাপুর উপজেলার নলেয়া নদীর তীরবর্তী বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, পানি ছেড়ে নদী ভরে কাজ করছে ঠিকাদার। নিয়ম অনুযায়ী কাজ না করাটা তো ঠিক নয়। কোনখানে কতটুকু গভীর করছে, সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না। পানি ছেড়ে দিয়ে লোক দেখানো কাজ করে বিল নিয়ে চলে যাবে ঠিকাদার। দেখার কেউ নেই। 

কুঞ্জ মহিপুর গ্রামের কৃষক মোত্তালেব মিয়া জানান, খননে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। মাটি কাটার শুরুতে পানি প্রবাহের মুখে বাঁধ দেওয়া ছিল। পরে বাঁধ কেটে দিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন। এখন আর নদীর মাঝের মাটি কাটা লাগবে না। শুধু দুই পাড়ের মাটি কেটে কোনোরকম কাজ শেষ করে চলে যাবে। এভাবে কাজ করলে সরকারের কোটি টাকা গচ্চা যাবে। জনগণের কোনো উপকারে আসবে না।

স্থানীয় কৃষক কুরবান আলী বলেন, ‘‘এলাকায় কৃষকরা পানি সংকটে আছে। আমার ৭০ শতাংশ জমির মধ্যে অর্ধেক নদীর পানির আওতায় পড়েছে। সবার স্বার্থে আমি জমিতে চাষ করিনি। কিন্তু তারপরও পানি ছেড়ে দিয়ে খনন করবে কেন? নদীর দুই পাড়ের অনেক জায়গায় দূরত্ব কম। এভাবে তো খোড়া ঠিক হবে না। এই কৃষকের পানির জন্যই তো এত টাকা ব্যয় তাই না।?’’ 

সালাম মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘চালাকি, সবি চালাকি। পানির মধ্যে তো কিছু দেখা যায় না। ওরা অনুমান করে খালি পাড় খুড়ে যাচ্ছে।’’ 

তাদের দাবি, খনন প্রকল্পের কাজগুলো সঠিকভাবে হয়েছে কি-না, সেটা নিশ্চিত করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, পানি প্রবাহ বন্ধ রেখে শুকনো অবস্থায় খাল বা নদী খনন কাজ করতে হয়। পানি ছেড়ে দিলে তো নদীর তলদেশের কোথায়, কতটুকু খনন করা হচ্ছে, তা বোঝা যাবে না। নদী বা খাল, যেটাই খনন করা হোক, তা শুকনো অথবা শুকনো অবস্থা সৃষ্টি করে করতে হবে। তা না করা হলে সঠিক খনন হবে না।

১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি নওগাঁ জেলার এনায়েত পুরের দয়ালের মোড়ের মেসার্স খান ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির দুটি আইডির বিপরীতে কাজ করেছেন মসলেম ও আইয়ুব আলী নামের দুই ঠিকাদার। কাজের অগ্রগতি রিপোর্ট অনুযায়ী তারা শতভাগ কাজ শেষ করেছে।

কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আইয়ুব আলী বলেন, ‘‘আমাদের ১২০০ মিটার অংশে বাঁধ দিয়ে শুকনো অবস্থায় খনন কাজ করেছি। পানিতে তো খনন কাজ করা যাবে না। এই ধরনের অনিয়ম আমাদের অংশে হয়নি।’’ 

নওগাঁ জেলার আরেক ঠিকাদার আব্দুল মজিদ। তিনিও একাই দুই আইডিতে নদীর ১৬০০ মিটার অংশের কাজ প্রা্য় শেষ করেছেন। কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ। তার হয়ে কাজ করেছেন সাজু ও মজিদ নামের দুই ঠিকাদার। 

সাজু এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘পানি ছেড়ে দিয়েও কাজ করা যায়। আমার লোক সেখানে (কাজের স্থান) রয়েছে। আপনি যখন এসেছেন, বিকাশ নম্বর দেন, কিছু টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’ 

গাইবান্ধা রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘পানি ছেড়ে দিয়ে খনন করা ঠিক হয়নি। আমি ঠিকাদারকে মেজারমেন্ট অনুযায়ী মাটি খনন করতে বলেছি। প্রয়োজনে প্রতিটি জায়গায় মেপে নেব। পানি ছেড়ে কাজ করার বিষয়ে তাদের কাছে জবাব চাওয়া হবে।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘ঠিকাদারকে বলেছি, তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।’’ 
 

ঢাকা/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ স দ ল ল প র উপজ ল ক জ শ ষ কর ন ক জ কর উপজ ল র ক জ করছ নদ র ত

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের বেতন বাড়াল বিসিবি

জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আজ মিরপুরে বিসিবি পরিচালকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এত দিন ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা মেয়েরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেতেন। তাঁদের বেতন ৪০ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটাররা পেতেন ১ লাখ টাকা করে বেতন। তাঁরা এখন থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে আর ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় দলের অধিনায়কদের জন্য ৩০ হাজার ও সহ-অধিনায়কদের জন্য ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নারী ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তিতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছেন তিন ক্রিকেটার—নিগার সুলতানা, নাহিদা আক্তার ও শারমিন আক্তার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছেন ফারাজনা হক, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান ও সোবহানা মোস্তারি। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছেন স্বর্ণা আক্তার।

আরও পড়ুনবিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না জিতলেও ৩ কোটি টাকা পাবেন নিগাররা৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘ডি’ ক্যাটাগরিতে আছেন সুমাইয়া আক্তারর, ফারিহা ইসলাম, রুবাইয়া হায়দার, সানজিদা আক্তার, নিশিতা আক্তার। এই চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ জাতীয় দলে এলে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ