বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমসহ আটজন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আবু তাহের আদালতে উপস্থিত দুই আসামি সালিমুল হক ও আবু সুফিয়ানের উপস্থিতিতে এই রায় দেন।

খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন, শাহ আলমের দুই ছেলে শাফিয়াত সোবহান সানভির ও সাদাত সোবহান, তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সচিব মিয়া নূর উদ্দিন অপু, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল এবং বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইস্ট-ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক আবু সুফিয়ান।

রায়ে আদালত বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাদের খালাস দেওয়া হলো। বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ (ঘটনাস্থল বা তারিখ) প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৪ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির খুন হলে একটি হত্যা মামলা হয়। ওই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর দুদকের উপ-পরিচালক আবুল কাসেম রাজধানীর রমনা থানায় একটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। তবে ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারেকসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র  দেয় দুদক।
 
এর পর ওই বছরের ১৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগও গঠন করা হয়। এ পর্যায়ে তারেক রহমানসহ চারজন হাইকোর্টে ওই মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। তারেক ছাড়া অন্যরা হলেন- সাবেক চারদলীয়  জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল। পরে মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৬ সালে হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। 
 
প্রসঙ্গত, তারেক রহমান জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হলেও ২০০৮ সালের ৩  সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ‘চিকিৎসার জন্য’ যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে পরিবার নিয়ে তিনি সেখানেই আছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

টেক্সটাইল শিক্ষকদের দিকে তাকান

একটা রাষ্ট্রের উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কিছু মানদণ্ড আছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসম্পন্ন যুগোপযোগী শিক্ষার প্রসার করা। শিক্ষকদের দুর্বল বেতনকাঠামো দিয়ে এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শুধু তা–ই নয়, অনেক সময় নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শিক্ষকদের বেতনও আটকে যায়। যেমন আমরা দেখছি সারা দেশে মোট ১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক–কর্মচারীরা ১৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে গুরুত্বারোপ করা হলেও সেখানে নানা অবহেলা বিদ্যমান। এটি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০০৬ সাল থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বস্ত্র অধিদপ্তরের অধীন দেশের ১০টি জেলায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প শুরু হয়। ২০০৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। এরপর তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিতকরণ হওয়ার পর ২০১৪ সালের জুনে শেষ হয়। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেতেন। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অনিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ মাস ধরে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। ফলে বাড়িভাড়া, সন্তানের শিক্ষা ও চিকিৎসা—সবই ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকেরা যে আর্থিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা তাঁদের পেশাদার জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন উভয়কেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

যে শিক্ষকেরা দেশের টেক্সটাইল শিল্পে দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের এমন করুণ দশা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এই শিক্ষকেরা মনোবল হারিয়ে ফেলছেন, ক্লাসে স্বাভাবিক মনোযোগ দিতে পারছেন না এবং এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে। এমন অবস্থায় কীভাবে দেশের টেক্সটাইল খাতকে শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা সম্ভব, তা একটি বড় প্রশ্ন।

শিক্ষকদের এই দুর্দশা কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০০৬ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের অধীনে স্থাপিত এই ইনস্টিটিউটগুলো বহু বছর ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে। আদালতের রায়ের পরও এ অচলাবস্থা কাটছে না। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট এবং চলতি বছরের ২১ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শিক্ষকদের পক্ষে রায় দিলেও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় তা কার্যকর করছে না। এই দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচার বিভাগের আদেশকে উপেক্ষা করার প্রবণতা রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করে।

আমরা আশা করব টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের এ দুর্দশা দ্রুত কেটে যাবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা তাঁদের দিকে সুদৃষ্টি দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেক্সটাইল শিক্ষকদের দিকে তাকান