নতুন পরমাণু চুক্তি করতে ইরানকে দুই মাস সময় দিলেন ট্রাম্প
Published: 20th, March 2025 GMT
নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হতে ইরানকে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। এতে তেহরান ব্যর্থ হলে সামরিক পথে হাঁটতে পারে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের চিঠি সম্পর্কে জানেন এমন এক কর্মকর্তা সিএনএনকে এসব কথা বলেছেন।
খামেনিকে চিঠি লেখার আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তির কথা বলে আসছিলেন ট্রাম্প। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ওয়াশিংটন।
খামেনিকে লেখা ট্রাম্পের চিঠি গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের কাছে হস্তান্তর করেছেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য–বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। চিঠিটি পরে ইরানি কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে ইউএই।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যে বিরোধ চলছে, তা শিগগির কূটনৈতিকভাবে মীমাংসা করতে চান ট্রাম্প। তিনি চিঠিতে এই কথা আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে স্পষ্ট করেছেন। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বিরোধ মেটার অন্যান্য উপায় রয়েছে।’
চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে সবার আগে প্রতিবেদন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।
গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। দুই প্রেসিডেন্টের আলাপের পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস এ কথা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাম্প ও পুতিন ‘ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ঠেকাতে মিলেমিশে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে মোটামুটিভাবে আলোচনা করেছেন। কৌশলগত অস্ত্রের সমৃদ্ধি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, এটা নিশ্চিত করতে অন্যদের সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।’
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দুই নেতা মনে করেন, ইরানকে কখনো ইসরায়েলকে ধ্বংস করার মতো অবস্থানে পৌঁছাতে দেওয়া যাবে না।’
চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, ‘ইরান দুটি কাজ করতে পারে: সামরিক সংঘাতের কথা ভাবতে পারে, অথবা চুক্তি করতে পারে। আমি চুক্তি করা পছন্দ করি। কারণ, আমি ইরানকে আঘাত করতে চাই না।’
ফক্স নিউজকে ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা [ইরান] আলোচনায় রাজি হবেন। এটা ইরানের জন্য অনেক বেশি মঙ্গলজনক।’
নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি আলোচনা করতে রাজি না হলে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর সামরিক হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। এটা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র করতে পারে, অথবা ইসরায়েলও করতে পারে।
প্রথম মেয়াদে ইরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের নেতৃত্বে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। তখনই ইরানের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদেও ট্রাম্প ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন। কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইরানকে একঘরে করাই এই নীতির উদ্দেশ্য।
খামেনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘ভয় দেখিয়ে আলোচনায় বাধ্য করাতে চাইলে সমস্যার সমাধান হবে না। এর মাধ্যমে তারা [যুক্তরাষ্ট্র] আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং আমাদের ওপর তাদের প্রত্যাশা চাপিয়ে দিতে চায়।’
আরও পড়ুনভয় দেখালে আলোচনা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ইরান১০ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন বল ছ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
আরব-মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনার আহ্বান
কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর সোমবার দেশটির রাজধানী দোহায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে বসেন। সম্মেলন শেষে তাঁরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এই যৌথ বৈঠকে প্রায় ৬০টি দেশ অংশ নেয়। গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে দোহায় হামাস নেতাদের বৈঠক চলাকালে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল।
হামাস জানিয়েছে, হামলায় তাদের পাঁচ সদস্য ও কাতারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির শীর্ষ কোনো নেতা নিহত হননি। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার জরুরি সম্মেলনটির আহ্বান করেছিল কাতার।
সম্মেলন শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান কার্যক্রম রোধে সব ধরনের আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে (বৈঠকে অংশগ্রহণকারী) সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।’ এসব কার্যক্রম হতে পারে, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা এবং দেশটির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা।’
কাতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইনসহ জর্ডান, মিসর এবং মরক্কো এরই মধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব দেশও গতকালের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ইউএই, বাহরাইন এবং মরক্কোর শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে অংশ নেননি।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবি (বাঁয়ে) ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। জেরুজালেমে, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫