নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হতে ইরানকে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে একটি চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। এতে তেহরান ব্যর্থ হলে সামরিক পথে হাঁটতে পারে ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের চিঠি সম্পর্কে জানেন এমন এক কর্মকর্তা সিএনএনকে এসব কথা বলেছেন।

খামেনিকে চিঠি লেখার আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তির কথা বলে আসছিলেন ট্রাম্প। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় ওয়াশিংটন।

খামেনিকে লেখা ট্রাম্পের চিঠি গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের কাছে হস্তান্তর করেছেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য–বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ। চিঠিটি পরে ইরানি কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে ইউএই।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যে বিরোধ চলছে, তা শিগগির কূটনৈতিকভাবে মীমাংসা করতে চান ট্রাম্প। তিনি চিঠিতে এই কথা আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে স্পষ্ট করেছেন। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বিরোধ মেটার অন্যান্য উপায় রয়েছে।’

চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে সবার আগে প্রতিবেদন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস।

গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। দুই প্রেসিডেন্টের আলাপের পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস এ কথা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাম্প ও পুতিন ‘ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ঠেকাতে মিলেমিশে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে মোটামুটিভাবে আলোচনা করেছেন। কৌশলগত অস্ত্রের সমৃদ্ধি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, এটা নিশ্চিত করতে অন্যদের সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।’

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দুই নেতা মনে করেন, ইরানকে কখনো ইসরায়েলকে ধ্বংস করার মতো অবস্থানে পৌঁছাতে দেওয়া যাবে না।’

চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, ‘ইরান দুটি কাজ করতে পারে: সামরিক সংঘাতের কথা ভাবতে পারে, অথবা চুক্তি করতে পারে। আমি চুক্তি করা পছন্দ করি। কারণ, আমি ইরানকে আঘাত করতে চাই না।’

ফক্স নিউজকে ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, আপনারা [ইরান] আলোচনায় রাজি হবেন। এটা ইরানের জন্য অনেক বেশি মঙ্গলজনক।’

নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি আলোচনা করতে রাজি না হলে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর সামরিক হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। এটা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র করতে পারে, অথবা ইসরায়েলও করতে পারে।

প্রথম মেয়াদে ইরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের নেতৃত্বে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। তখনই ইরানের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।

দ্বিতীয় মেয়াদেও ট্রাম্প ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন। কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইরানকে একঘরে করাই এই নীতির উদ্দেশ্য।

খামেনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘ভয় দেখিয়ে আলোচনায় বাধ্য করাতে চাইলে সমস্যার সমাধান হবে না। এর মাধ্যমে তারা [যুক্তরাষ্ট্র] আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং আমাদের ওপর তাদের প্রত্যাশা চাপিয়ে দিতে চায়।’

আরও পড়ুনভয় দেখালে আলোচনা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ইরান১০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন বল ছ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ