হিন্দু ধর্মকে অবমাননা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সায়েমের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট এবং যাকি আহম্মেদ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সংখ্যালঘুদের ‘জবাই’ করার হুমকি দিয়ে দেওয়া পোস্টের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আবু সায়েমের ছাত্রত্ব বাতিল ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে তাঁরা এই বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটও রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সমাবেশে ‘মানি না মানব না, ধর্মের অবমাননা’; এক দুই তিন চার সায়েমের বহিষ্কার, এমন স্লোগান দেন।

উল্লেখ্য, আবু সায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ বালাই বলেন, ‘আমরা কি এ দেশের নাগরিক না? তাহলে কেন আমাদের সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করা হয়? আমরা চাই আমরা যেন নাগরিকের সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

সমাবেশে বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমি বিশ্বাসও একই দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তি হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আর কেউ যেন ধর্ম অবমাননা করার সাহস না করে।’

তিন দফা দাবি

সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস বিভাগের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত প্রামাণিক। তিনি বলেন,  আবু সায়েম হিন্দু ধর্ম, দেবদেবী ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অশালীন, অবমাননাকর পোস্ট, কটূক্তি করেছেন। তাঁর এই ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের সমগ্র হিন্দুধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীকে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। ঐতিহ্যবাহী বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর এমন আচরণ সত্যিই নিন্দাজনক ও লজ্জাকর।

সাধারণ হিন্দু শিক্ষার্থীদের পক্ষে তিনটি দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হলো ১.

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের দায়ে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ২. সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে পাঠদানের ক্ষেত্রে সম্মানিত শিক্ষকেরা যেন সাহিত্য বিশ্লেষণের অজুহাতে হিন্দুধর্মের অপব্যাখ্যা না করেন সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩. ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’সহ বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) দেশের জাতিগত, লৈঙ্গিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে বিদ্রূপ ও উসকানিমূলক বার্তা (পোস্ট/মন্তব্য) ছড়ানোর বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সুদীপ্ত জানান, আগামীকাল শাহবাগ থানায় এ বিষয়ে একটি মামলাও করা হবে। তবে এ ঘটনায় আবু সায়েম দুপুরে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চান। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি আসলেই ভুল করে ফেলেছি, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।’

৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

এই ঘটনায় আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ প্রদানের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সান্টু বড়ুয়া, সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের অতিরিক্ত পরিচালক মোস্তাক আহমেদ। এ ছাড়া বাকি তিনজন হলেন সহকারী প্রক্টর মুহা. রফিকুল ইসলাম, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল এবং প্রাধ্যক্ষ স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ