আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা জুমারের ৩২ থেকে সুরা মুমিন ও সুরা হামিম সাজদার ১ থেকে ৪৬ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। ২৪তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। আজকের তারাবিহতে তওবা, সামাজিক শিষ্টাচার, মুমিন ও কাফেরের শেষ পরিণতি, মৃত্যু, নিরাশা, হক বাতিল, মুমিন ব্যক্তি কর্তৃক ফেরাউনকে সতর্ক, বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া, আল্লাহকে চেনার উপায়, কোরআন হেদায়াত ও শেফা, মানুষের কল্যাণে চতুষ্পদ প্রাণী, কিয়ামত, হেদায়াত, ইমানদারের জন্য ফেরেশতাদের দোয়া, জাহান্নামিদের অবস্থা, মুসা ও ফেরাউনের ঘটনা, আল্লাহর অনুগ্রহ, মানুষের অকৃজ্ঞতা, কোরআনের মাহাত্ম্য ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।
আল্লাহর রহমত নিয়ে নৈরাশ্য নিষেধ
সুরা জুমারের ৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা, ঘাত-প্রতিঘাত, বিপদ–আপদ আসবে। দুঃখকে একেবারে উপেক্ষা করে চলা যায় না। আল্লাহ নবী-রাসুলদেরও বিপদে ফেলেছেন। কষ্ট দিয়েছেন। পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা ধৈর্য ধরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মুমিন জীবনে দুঃখ-কষ্ট, হতাশা ও বেদনা এলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। দুঃখ-কষ্ট আর বিপদে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের গুণ ও ইবাদত। কখনোই হতাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করেছে, গুনাহে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে, তাদেরও আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন।
আরও পড়ুননুহ নবীর (আ.) নৌকা১৯ মার্চ ২০২৪
সুরা মুমিনে এক মুমিনের কাহিনি
মক্কায় অবতীর্ণ সুরা মুমিনের আয়াতের সংখ্যা ৮৫। এটি কোরআনের ৪০তম সুরা। ফেরাউনকে পথভ্রষ্টতা ছেড়ে আল্লাহর পথে আসার জন্য সতর্ক করেছিলেন এক ব্যক্তি, তাফসিরের কিতাবে তাকে ফেরাউনের চাচাতো ভাই বলেছেন কেউ কেউ। কোরআনে আল্লাহ তাঁকে ‘মুমিন’ বলেছেন, তাই এর নাম রাখা হয়েছে মুমিন। গাফিরও বলা হয় এ সুরাকে।
আল্লাহর চার গুণ
আল্লাহ তাআলার অগণিত গুণ রয়েছে। সুরা তওবার ৩ নম্বর আয়াতে চারটি গুণের উল্লেখ রয়েছে। যথা এক. আল্লাহ গুনাহ ক্ষমাকারী। দুই. তওবা কবুলকারী। তিন. কঠিন শাস্তি দানকারী ও চার. মানুষের ওপর করুণা ও অনুগ্রহকারী।
মুসা (আ.)-কে দেশ ছাড়ার পরামর্শ
মুসা (আ.)-এর সময়ে একজন আল্লাহ–বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন। যিনি ফেরাউনকে একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। মুকাতিল, সুদ্দি, হাসান বসরি প্রমুখ তাফসিরবিদেরা বলেন, ওই মুমিন ব্যক্তি ফেরাউনের চাচাতো ভাই ছিলেন। এক কিবতিকে হত্যার ঘটনায় যখন ফেরাউনের দরবারে মুসা (আ)-কে পাল্টা হত্যা করার শলাপরামর্শ চলছিল, তখন তিনিই মুসাকে শহর ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন) মুফতি তকি উসমানি বলেন, কোরআনে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাঁর নাম ছিল শামআন।
আরও পড়ুনধ্বংস থেকে এক জাতির মুক্তির কাহিনি১৮ মার্চ ২০২৪মুমিন ব্যক্তি দেখলেন, ফেরাউন আল্লাহর অবাধ্য। সে অহংকারী, অন্যায়-অবিচারে লিপ্ত। তখন তাকে দীনের পথে দাওয়াত দিলেন। আল্লাহর আজাবের ভয় দেখালেন। মুসা (আ.)-এর ধর্ম মানার পরামর্শ দিলেন। কাজ হলো না। উপরন্তু ঠাট্টা-বিদ্রুপ করল ফেরাউন। সে উজির হামানকে বলল, একটা প্রাসাদ বানাও, সেখানে চড়ে আমি দেখব মুসার উপাসককে দেখা যায় কি না! ফেরাউনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য তিনি গা করলেন না। মনে রাখলেন না। দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রাখলেন। আসন্ন আজাবের ব্যাপারে সতর্ক করলেন। ফেরাউন পাত্তা দিল না। আল্লাহর আজাব এল। ফেরাউন ও তার অনুসারীরা নদীতে ডুবে মারা পড়ল। বেঁচে গেল মুমিন ব্যক্তি। সুরা মুমিনের ২৩ থেকে ৪৬ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার বিবরণ রয়েছে।
সুরা হামিম সাজদার বয়ান
কোরআনের ৪১তম সুরা হামিম সাজদা মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াতের সংখ্যা ৫৪। এ সুরার আরেক নাম ফুসসিলাত। এ সুরায় আল্লাহর অনুগ্রহ, কোরআনের আলোচনা, মানুষের অকৃতজ্ঞতা, আদ ও সামুদ জাতির ঘটনা, কিয়ামতের দিন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গই মানুষের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষী দেওয়া, কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের অবস্থা, মুমিনদের পুরস্কার, আল্লাহকে চেনার উপায়, ধৈর্য ও ন্যায়ানুগ ফয়সালা, অহংকারী ও অস্বীকারকারীদের আলোচনা এবং আল্লাহর কাছে সম্মানিত ব্যক্তিদের বর্ণনা রয়েছে।
সুরা হামিম সাজদার ৩০ থেকে ৩২ নম্বর আয়াতে ইহকাল ও পরকালে ফেরেশতাদের বন্ধুদের কয়েকটি গুণের কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে নির্ভয় ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে জান্নাতের। ফেরেশতাদের বন্ধুরা হলেন: এক. যারা আল্লাহকে পালনকর্তা বলে বিশ্বাস করে। দুই. এই কথার ওপর অবিচল থাকে।
আরও পড়ুনগনিমতের সম্পদ বণ্টননীতির বর্ণনা ও অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য১৭ মার্চ ২০২৪সত্য গ্রহণের জন্য মানুষকে চোখ-কান দেওয়া হয়েছে। যারা গ্রহণ করে, তারা সফল ব্যক্তি। এই সত্য গ্রহণ তাদের জীবনকে মহিমান্বিত করবে। আর অনেকে আছে, সত্য গ্রহণ করে না। সত্যের বাণী হৃদয় দিয়ে অনুভব করে না। এর ফলে তারা নিজেদের ইহকাল ও পরকালের ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। এ ক্ষতির জন্য আল্লাহ দায়ী নন। আল্লাহ কারও প্রতি অবিচার করেন না। মানুষই নিজেদের প্রতি অবিচার করে। আল্লাহ কারও ওপর এক অণু পরিমাণও জুলুম করেন না। যদি কেউ একটি সৎ কাজ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে মহাপুরস্কার দান করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সৎ কর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যই করে, আর যে অসৎ কর্ম করে, তা তার ওপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই জুলুম করেন না।’ (সুরা হামিম সাজদা, আয়াত: ৪৬)
রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম
আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত ক রআন র র রহমত র আয় ত র জন য গ রহণ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”
আরো পড়ুন:
ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩
নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।
ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।
বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।
সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।
তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ