বগুড়ায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৩১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
Published: 21st, March 2025 GMT
বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে গুলিতে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি ও জাসদের ১৮১ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ৪৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার রাতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দোয়ারপাড়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে, জেলা ছাত্রদল কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক জাকিরুল ইসলাম বগুড়া সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেছেন।
বগুড়া সদর থানার কর্মকর্তা (তদন্ত) এ কে এম মঈন উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, আওয়ামী লীগ নেতা মুঞ্জুরুল আলম মোহন, রফি নেওয়াজ খান রবিন, শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, আমিনুল ইসলাম ডাবলু, আবু সুফিয়ান শফিক, মাফুজুল ইসলাম রাজ, সোহরাব হোসেন ছান্নু, সজীব সাহা, আল মাহিদুল ইসলাম জয়, অসীম কুমার, আসাদুর রহমান দুলু, আল রাজি জুয়েল, মাশরাফী হিরো, সাবেক বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগম, ফিরোজ আহমেদ রিজু, জেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন শরিফ সঞ্চয়, রুমানা আজিজ রিংকি, এডোসিন তালুকদার বাবু, আনোয়ার হোসেন রানা, অ্যাডভোকেট রাজু মন্ডল, জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ পশারী ববি, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মোবাশ্বের হোসেন স্বরাজ, কামরুল মোর্শেদ আপেল, জুলফিকার রহমান শান্ত, হাসিবুল হাসান সুরুজ, আমিন আল মেহেদী, মৌসুমী আক্তার ভাবনা, শামীমা আক্তার সুমি, নিলিমা সরকার পুনম, জামিলা বেগম, জাপা নেতা লিটন মিয়া প্রমুখ।
মামলার বাদী জাকিরুল ইসলাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে ছাত্র-জনতা মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে অন্য আসামিরা মিছিলে হামলা চালান। তারা মারপিট, পেট্রোল বোমা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণ করেন।
এ সময় মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় অন্য মিছিলকারীরাও আহত হয়েছেন। চিকিৎসা শেষে তিনি ১৬ মার্চ বগুড়া সদর থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও সাবেক বিএনপি নেত্রীসহ ১৮১ জনের নাম উল্লেখ ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বগুড়ায় ১১টি মামলা হলো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম উল ল খ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় পাঁচ আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে দুটি হলফনামা দিয়েছেন বাদী কৃষক দল নেতা শাহ আলম পাঠান। টাকার বিনিময়ে তিনি হলফনামা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জেলা কৃষক দল।
শাহ আলম পাঠান নাসিরনগর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব। ৪ জুন পাঁচজনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেন শাহ আলম। সম্প্রতি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।
যে পাঁচজনকে বাদ দিতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন উপজেলার নূরপুর গ্রামের মো. মাসুদ, গোকর্ণ গ্রামের শেখ মো. জোবায়ের হাসান, বেনিপাড়ার মামুন মিয়া, টেকানগরের জসিম উদ্দিন কায়কোবাদ ও নূরপুর গ্রামের শামসুল আরেফিন মিঞা। তাঁরা যথাক্রমে মামলার ৯৭, ৭৯, ৯১, ১০৫ ও ৮৭ নম্বর আসামি। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কোনো পদ–পদবি ছিল না।
হলফনামা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর গত শুক্রবার রাতে জেলা কৃষক দলের দপ্তরে দায়িত্বে থাকা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাহ আলমকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফ ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাহ আলম পাঠানের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তখন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শাহ আলম ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। গত ২ নভেম্বর মামলাটি থানায় নথিভুক্ত হয়। ওই মামলার পাঁচ আসামিকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে।
একটি হলফনামায় বাদী উল্লেখ করেন, লিখিত এজাহারে মাসুদ, জোবায়ের, মামুন ও জসিম উদ্দিনের নাম আসামির শ্রেণিভুক্ত ছিল না। অসাবধানতার কারণে চারজনের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁদের চারজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
আরেকটি হলফনামায় বলা হয়, আসামি শামসুল আরেফিন মিয়া ২০১৪ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি, সাবেক সদস্যসচিব ও ২০০৩ সালের উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। অসাবধানতাবশত ভুলের জন্য তিনি (শাহ আলম) অনুতপ্ত এবং অনুশোচনা প্রকাশ করছেন।
তবে বিষয়টি জানাজানির পর সমালোচনামুখর হন বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, শাহ আলম ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে কেক কেটে মুজিব বর্ষ পালন করেন। তাঁর বাবা মো. ইয়াছিন পাঠান উপজেলার চাতলপাড় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নাসিরনগর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইয়াছিন মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, শাহ আলম মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হলফনামা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় যাঁরা ছিলেন, এখন তাঁরাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে লিপ্ত।
তবে কৃষক দলের সদস্যসচিব শাহ আলম পাঠান বলেন, ‘পাঁচজনকে মামলায় ভুলবশত সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই হলফনামা দিয়েছি। জেলা কৃষক দলের কাছে তথ্য গিয়েছে যে আমি টাকার বিনিময়ে এমন করেছি, যা মোটেও সত্য নয়। স্থানীয় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মূল ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।