ঈদুল ফিতরে নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি। রাজধানীর সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হচ্ছে ২৫ মার্চ। ফিরতি যাত্রীদের জন্য এই সার্ভিস থাকবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবার ঈদেও যাত্রী খরার শঙ্কায় লঞ্চ মালিকরা। পদ্মা সেতু চালু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে নৌপথের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ কমছে বলে মনে করছেন তারা। 

এদিকে, ঈদ সামনে রেখে লক্কড়ঝক্কড় ও পুরোনো লঞ্চগুলো কিছুটা সংস্কার ও রং করে যাত্রী আনা-নেওয়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। নৌপথে যাত্রা নিরাপদ করতে সরকার ঈদুল ফিতরে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল করলে রুট পারমিট ও নিবন্ধন বাতিল করা হবে।           
গত দু’দিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীর তেমন ভিড় নেই। বিকেলের দিকে বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের আসতে দেখা যায়। ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার অন্য সব যানবাহনে ভিড় থাকলেও সদরঘাটের চিত্র ভিন্ন। তবে ২৫ রোজার পর লঞ্চে যাত্রী বাড়বে বলে আশাবাদী মালিকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলমুখী লঞ্চযাত্রী অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে মহাসড়ক নির্মাণ ও বিভিন্ন নদীর ওপর সেতু হওয়া এবং সদরঘাটমুখী সড়কে তীব্র যানজটের ভোগান্তির কারণে লোকজন এখন লঞ্চে তেমন একটা যাতায়াত করতে চান না। বরিশাল, ভাণ্ডারিয়া ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চ যাত্রী একেবারেই কমে গেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ১৮টি লঞ্চ চললেও এখন চারটিতে নেমে এসেছে। কখনও কখনও একটি মাত্র লঞ্চ চলে। তবে চাঁদপুর, ভোলার চরফ্যাসন, লালমোহন ও বরগুনা রুটে লঞ্চ তেমন কমেনি। 
লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগে ঢাকা থেকে ৪৩টি নৌপথে ২২৫টির মতো লঞ্চ চলাচল করত। এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০। যাত্রী সংকটে কমেছে নৌপথও। এখন রুট ৩৫টি। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলে বিভিন্ন পথে।

আগামী ২৫ মার্চ ঈদুল ফিতরের বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে যাত্রীর ভিড় কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছেন মালিকরা। তারা বলছেন, আগে ঈদ এলে যাত্রীর চাপ সামলাতে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসে অতিরিক্ত লঞ্চ যুক্ত করা হতো। গত কয়েক বছর ধরে যাত্রী খরার কারণে অলস বসে থাকা লঞ্চগুলোকেই ঈদের সময় চালু রাখা হয়। ঢাকা-বরিশাল রুটে ১৮টি লঞ্চ রয়েছে। অন্য সময় সব না চললেও ঈদের সময় চালু রাখা হবে। অন্য নৌরুটগুলোতেও একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে কোনো কোনো লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি মানালীর অগ্রিম টিকিট ১৫ রমজান থেকেই বিক্রি হচ্ছে। 
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী সমকালকে বলেছেন, আগে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর ৩৫ শতাংশ নৌপথে যেতেন। পদ্মা সেতু চালু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এখন তা প্রায় ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

পুরোনো লঞ্চের ব্যাপারে সতর্ক প্রশাসন
প্রতিবছর ঈদের আগে লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চগুলো রং করে ঈদযাত্রার জন্য আনা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রোজা শুরুর আগেই কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে পুরোনো লঞ্চগুলো নতুন সাজে সাজানো হয়েছে। কয়েকজন লঞ্চ মালিক জানান, ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ সংস্কার করা হয়েছে। অধিকাংশ লঞ্চে সাধারণত ঈদের সময় নতুন করে রং করা হয়। তবে এবার পুরোনো লঞ্চগুলোকে ঈদে চালানোর বিষয়ে কঠোর নজরদারি রেখেছে লঞ্চ মালিক সমিতি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। 
নৌ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে দু’দফা বৈঠক করে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো অবস্থায়ই ফিটনেসবিহীন কোনো জলযান চলাচল করতে পারবে না। কোনো লঞ্চ বা ফেরি সিরিয়াল ভঙ্গ করে চলতে পারবে না। নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় কঠোরভাবে নজরদারি করবে।    
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘ঈদ যাত্রা সুন্দর ও বাধামুক্ত করতে আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না। ঈদে যাত্রীদের সেবায় তদারকি আরও বাড়ানো হবে।’ 

ভাড়া কিছুটা বাড়ানোর দাবি মালিকদের 
অন্যান্যবারের মতো এবারও নৌ মন্ত্রণালয় থেকে ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং ধারণক্ষমতার বাইরে যাত্রী বহনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দায়ীদের শুধু জরিমানাই নয়, লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, নৌপথে যাত্রী খরার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য সময়ের লোকসান পোষাতে ও যাত্রী ধরে রাখতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অনেক কম নিয়ে থাকেন তারা। ঈদের মৌসুমেই কেবল নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের সুযোগ পান। সেটাও তুলনামূলক অপ্রতুল। জ্বালানি তেলের মূল্য, পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে নির্ধারিত ভাড়া নিয়েও ক্ষতি পোষানো যায় না। তাই ভাড়া অল্প বাড়িয়ে দেওয়া হলে তারা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রীসেবা দিতে পারতেন।   

লঞ্চের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে বরিশালগামী  লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের সময় ডেকের ভাড়া ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ ও ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার ৪০০ টাকা। তবে যাত্রীদের আগ্রহ ধরে রাখতে ভাড়া না বাড়ানোর কথা বলছেন লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সেলিম বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার আগে পুরো রমজানজুড়ে যাত্রীর ভিড় হতো। এখন এমনটি হয় না। লঞ্চে কেবিন আছে ১৫০ থেকে ২০০টি। বর্তমানে ২০-২৫টি ভাড়া দিতে পারি। তাই ভাড়া কিছুটা না বাড়ালে আমাদের লোকসানে পড়তে হতে পারে।’  

ঈদে আসছে নতুন একটি লঞ্চ
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যুক্ত হচ্ছে এমভি এমখান নামের একটি অত্যাধুনিক নতুন লঞ্চ। লঞ্চ মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক হান্নান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ঈদ উপলক্ষে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখনও ঘাটে যাত্রীর ভিড় নেই। ২৫ রোজার পর যাত্রী বাড়বে বলে আশা করছি। যাত্রীদের বিলাসবহুল যাত্রার জন্য এবার একটি অত্যাধুনিক লঞ্চ যুক্ত হবে।’ 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন পর বহন ঈদ র সময় প রস ত ত ব যবস থ সদরঘ ট বর শ ল ম ল কর র বহন বলছ ন ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ