ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। এবারের ঘটনাস্থল হুগলি জেলার ডানকুনি এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর। 

ডানকুনিতে মৃত ওই নারীর নাম হাসিনা বেগম। ৬০ বছর বয়সী ওই নারী ডানকুনি পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। গোটা ঘটনায় সরগরম ডানকুনি। 

আরো পড়ুন:

সুন্দর ঝড়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত

৩১ দিনে ‘কানতারা টু’ সিনেমার আয় ১১৪৯ কোটি টাকা

স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে তাদের এলাকায় এসআইআর নিয়ে একটি বৈঠক হয়। তারপর থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন হাসিনা বেগম। তার কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাকি তার নাম ছিল না। সেই কারণেই নানাবিধ দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালের দিকে রাস্তায় বেরিয়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। 

এই বিষয়ে ডানকুনি পৌরসভার প্রধান হাসিনা সাবনাম বলেন, ওই নারী বেশ কিছুদিন যাবত দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। স্থানীয় মানুষদের থেকে তিনি খবর পেয়েছেন, প্রায়শই মানুষদেরকে তিনি জিজ্ঞাসা করতেন- এসআইআর হলে কি তার নাম বাদ যাবে কি না! যদিও তাকে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যতদিন থাকবে ততদিন কারো নাম বাদ যাবে না। 

তিনি জানান, হাসিনা বেগম ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। সেই আতঙ্কে তিনি ভুগছিলেন। সোমবার সকালে তার হার্ট অ্যাটাক হয় এবং সেই কারণে মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য দায়ী কেন্দ্র সরকার। 

এদিন সন্ধ্যায় মৃত হাসিনা বেগমের বাড়িতে যান শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি। এসময় তার মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেন কল্যাণ। 

এই বিষয়ে বিজেপির শ্রীরামপুর সংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল এখন লাশের রাজনীতি করছে। যে কেউ মারা গেলেই এসআইআর আতঙ্ক বলে দাবি করা হচ্ছে। যারা বৈধ ভোটার তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

অন্যদিকে, সোমবার একইদিনে এসআরআই আতঙ্কে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে শেখ সিরাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রামনগর ১ ব্লকের কাঁটাবনি গ্রামে বাড়ি তার। পূর্ব পুরুষরা কেউ বাংলাদেশ বা অন্য কোনো জায়গা থেকে আসেননি বলেই দাবি এলাকাবাসীর। বহুদিন বিদেশেও ছিলেন। বর্তমানে দেশের ফিরে দিঘায় একটি হোটেল খুলেছেন। রবিবার (২ নভেম্বর) কাজগপত্র বার করতে গিয়ে বাবার নাম ভুল দেখেন। তার পর থেকেই বেশ চিন্তায় ছিলেন বলে জানা গেছে। আর সেই আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। যার প্রথম ধাপে মঙ্গলবার থেকে ‘বুথ লেবেল অফিসার’ (বিএলও)- রা প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম দেবেন। বেশ কয়েকটি ধাপে এই প্রক্রিয়া চলার পর আগামী বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত তার ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। 

পশ্চিমবঙ্গের শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সে অর্থে নির্বাচন কমিশনের গাইড লাইন অনুযায়ী, ভারতীয় ভোটারদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই এসআইআর আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে একাধিক মানুষের মনে। তাদের ধারণা ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হতে পারে, না হয় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। আর এই আশঙ্কা থেকেই গোটা রাজ্যে গত এক সপ্তাহে পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তৃণমূলের। 

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার প্রথম ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়ায়, মৃত্যু হয় ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ করে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে বীরভূম জেলার ইলামবাজারে, ৯৫ বছর বয়সী ক্ষিতীশ মজুমদারের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোতোয়ালিতে হলেও নিজের মেয়ের বাসায় গিয়ে বিষপান করেন। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমান জেলার নবগ্রামে, মৃত্যু হয় বিমল সাঁতরার। এছাড়াও কোচবিহার জেলার দিনহাটায় বিষপান করে নিজের জীবন শেষ করেন ৬৩ বছর বয়সী খাইরুল শেখ নামে এক ব্যক্তি। 

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০০২ স ল র ভ ট র ত ল ক য র আতঙ ক ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ

ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। এবারের ঘটনাস্থল হুগলি জেলার ডানকুনি এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর। 

ডানকুনিতে মৃত ওই নারীর নাম হাসিনা বেগম। ৬০ বছর বয়সী ওই নারী ডানকুনি পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। গোটা ঘটনায় সরগরম ডানকুনি। 

আরো পড়ুন:

সুন্দর ঝড়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত

৩১ দিনে ‘কানতারা টু’ সিনেমার আয় ১১৪৯ কোটি টাকা

স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে তাদের এলাকায় এসআইআর নিয়ে একটি বৈঠক হয়। তারপর থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন হাসিনা বেগম। তার কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাকি তার নাম ছিল না। সেই কারণেই নানাবিধ দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালের দিকে রাস্তায় বেরিয়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। 

এই বিষয়ে ডানকুনি পৌরসভার প্রধান হাসিনা সাবনাম বলেন, ওই নারী বেশ কিছুদিন যাবত দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। স্থানীয় মানুষদের থেকে তিনি খবর পেয়েছেন, প্রায়শই মানুষদেরকে তিনি জিজ্ঞাসা করতেন- এসআইআর হলে কি তার নাম বাদ যাবে কি না! যদিও তাকে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আশ্বস্ত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যতদিন থাকবে ততদিন কারো নাম বাদ যাবে না। 

তিনি জানান, হাসিনা বেগম ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তার নাম নেই। সেই আতঙ্কে তিনি ভুগছিলেন। সোমবার সকালে তার হার্ট অ্যাটাক হয় এবং সেই কারণে মৃত্যু হয়েছে। এর জন্য দায়ী কেন্দ্র সরকার। 

এদিন সন্ধ্যায় মৃত হাসিনা বেগমের বাড়িতে যান শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি। এসময় তার মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেন কল্যাণ। 

এই বিষয়ে বিজেপির শ্রীরামপুর সংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল এখন লাশের রাজনীতি করছে। যে কেউ মারা গেলেই এসআইআর আতঙ্ক বলে দাবি করা হচ্ছে। যারা বৈধ ভোটার তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

অন্যদিকে, সোমবার একইদিনে এসআরআই আতঙ্কে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে শেখ সিরাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রামনগর ১ ব্লকের কাঁটাবনি গ্রামে বাড়ি তার। পূর্ব পুরুষরা কেউ বাংলাদেশ বা অন্য কোনো জায়গা থেকে আসেননি বলেই দাবি এলাকাবাসীর। বহুদিন বিদেশেও ছিলেন। বর্তমানে দেশের ফিরে দিঘায় একটি হোটেল খুলেছেন। রবিবার (২ নভেম্বর) কাজগপত্র বার করতে গিয়ে বাবার নাম ভুল দেখেন। তার পর থেকেই বেশ চিন্তায় ছিলেন বলে জানা গেছে। আর সেই আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। যার প্রথম ধাপে মঙ্গলবার থেকে ‘বুথ লেবেল অফিসার’ (বিএলও)- রা প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম দেবেন। বেশ কয়েকটি ধাপে এই প্রক্রিয়া চলার পর আগামী বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত তার ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। 

পশ্চিমবঙ্গের শেষবার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সে অর্থে নির্বাচন কমিশনের গাইড লাইন অনুযায়ী, ভারতীয় ভোটারদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই এসআইআর আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে একাধিক মানুষের মনে। তাদের ধারণা ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হতে পারে, না হয় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। আর এই আশঙ্কা থেকেই গোটা রাজ্যে গত এক সপ্তাহে পাঁচটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি তৃণমূলের। 

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার প্রথম ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়ায়, মৃত্যু হয় ৫৭ বছর বয়সী প্রদীপ করে। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে বীরভূম জেলার ইলামবাজারে, ৯৫ বছর বয়সী ক্ষিতীশ মজুমদারের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোতোয়ালিতে হলেও নিজের মেয়ের বাসায় গিয়ে বিষপান করেন। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমান জেলার নবগ্রামে, মৃত্যু হয় বিমল সাঁতরার। এছাড়াও কোচবিহার জেলার দিনহাটায় বিষপান করে নিজের জীবন শেষ করেন ৬৩ বছর বয়সী খাইরুল শেখ নামে এক ব্যক্তি। 

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ