গাজায় আবারো হামলা, যুদ্ধবিরতি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা
Published: 21st, October 2025 GMT
গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল আবারও হামলা চালিয়েছে। এতে নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে। এই হামলাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে গাজা কর্তৃপক্ষ। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি টিকিয়ে রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে।
গাজার প্যালেস্টাইনিয়ান সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, পূর্ব গাজা সিটির তুফাহ এলাকার পূর্বদিকে আল-শায়াফ অঞ্চলে দুটি পৃথক ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। সংস্থাটির দাবি, “ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায় যখন ওই ব্যক্তিরা নিজেদের বাড়ির অবস্থা দেখতে যাচ্ছিলেন।” খবর আলজাজিরার।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শুজাইয়া এলাকায় তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে সৈন্যদের কাছে চলে আসা এবং হুমকি সৃষ্টি করা যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।”
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরায়েলি সেনারা ওই রেখার পেছনে অবস্থান করছে। তবে গাজা সিটির বাসিন্দারা রেখাটির অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্ত, কারণ কোনো দৃশ্যমান চিহ্ন নেই।
৫০ বছর বয়সী সামির তুফাহ এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, “পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আমরা মানচিত্র দেখেছি, কিন্তু বুঝতে পারছি না রেখাগুলো কোথায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধবিরতির পর থেকে একাধিক সহিংসতা ঘটেছে। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যুদ্ধবিরতির শর্ত ভাঙার অভিযোগে ইসরায়েল ও হামাস একে অপরকে দায়ী করছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, রবিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ ৪২ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল বলছে, এই হামলা ছিল হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিশোধ হিসেবে। তাদের দাবি, রাফাহ এলাকায় হামাস যোদ্ধারা গুলি চালিয়ে দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছিল, যার জবাব হিসেবেই এই বিমান হামলা চালানো হয়।
তবে হামাস ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, রাফাহর ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত অংশে তাদের কোনো ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এবং সেখানকার কোনো ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়।”
সংগঠনের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার অজুহাত তৈরি করছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, এবং গাজায় নিহত বন্দিদের মরদেহ হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছে। তবে এমন ধ্বংসযজ্ঞের কারণে এই প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের বাধার মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার হামাসের কাছ থেকে নিহত ১৩তম বন্দির মরদেহ গ্রহণ করেছে রেড ক্রস, পরে সেটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রবিবার ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো বন্ধ করার হুমকি দেয়। তবে পরে জানায়, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত বাস্তবায়ন পুনরায় শুরু করেছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানান, গাজায় ত্রাণ পাঠানো পুনরায় শুরু হয়েছে, যদিও তিনি কী পরিমাণ সহায়তা পৌঁছেছে তা উল্লেখ করেননি।
আলজাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম সোমবার জানান, ইসরায়েল এখনও গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন সামরিক চেকপয়েন্টে ট্রাকগুলো আটকে রাখা হয়েছে, যেগুলো নানা ধরনের মানবিক সহায়তা সামগ্রীতে ভর্তি।
তিনি আরও জানান, সোমবার ইসরায়েলি সেনারা খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে, যা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে যে যুদ্ধবিরতি হয়তো টিকবে না।
এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, “গাজায় এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট ঘটনাগুলো তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
“গণহত্যা সমর্থনকারী শিক্ষক থেকে আমরা শিক্ষা নিতে চাই না”
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেছেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে ৫-৭টি ব্যাচ চলমান থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন, যা শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এক্ষেত্রে শাহবাগকে প্রতিষ্ঠিত করে, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, গণহত্যা সমর্থনকারী শিক্ষক থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিতে চাই না। অবশ্যই যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।”
শনিবার (১৮ অক্টোবর) যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগসহ পাঁচ দফা দাবিতে শাখা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ’
‘সাজিদ হত্যার ৯০তম দিন, এরপর কি আমি?’
মাহমুদুল হাসান বলেন, “ইবি শিক্ষার্থী সাজিদকে হত্যার ৯৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত খুনিদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই নয়, ইন্টেরিম সরকারেরও ব্যর্থতা। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাজিদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”
ছাত্র সংসদ নিয়ে তিনি বলেন, “প্রশাসন আইনের অজুহাত দেখিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করছে না। অথচ বেগম রোকেয়া ও জগন্নাথের মতো নবীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের আইন পাস করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ১৫ তারিখের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করার আশ্বাস দিলেও ১৮ তারিখ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ নিয়ে প্রশাসন কোনো রকম টালবাহানা করলে শিক্ষার্থীরা তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন হলগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, “২০১৮ সালে টেন্ডার হওয়া হলের নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালেও শেষ হয়নি, যা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটকে তীব্রতর করছে। চলতি বছরের মধ্যেই সব হলের নির্মাণ কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে হস্তান্তর ও মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করতে হবে।”
মাহমুদুল হাসান বলেন, “একটি নির্দিষ্ট মহল আবারো আওয়ামী লীগের শাসনামলের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, যেখানে প্রাধ্যক্ষরাও সহযোগিতা করছেন। কোনোভাবেই হলগুলোকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিতে দেওয়া হবে না। যদি এমন কোনো চেষ্টা করা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে।”
সমাবেশে অনতিবিলম্বে সাজিদ হত্যার বিচার, ইকসুর নীতিমালা ও রোডম্যাপ প্রদান, ডিজিটাল পেমেন্ট নিশ্চিতকরণ, এ বছরেই নির্মাণাধীন হলসমূহ চালু এবং মেধা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানায় সংগঠনটি। এছাড়া সাতদিনের মধ্যে পেমেন্ট সিস্টেম ডিজিটালাইজেশনে পদক্ষেপে না নিলে প্রশাসন অচল করে দেওয়া হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটি।
এর আগে, দুপুর দেড়টার দিকে বটতলা থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
মিছিলে তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘সাজিদ মৃত্যুর তদন্ত, দ্রুত করো, করতে হবে’, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করো, শিক্ষার্থীদের রক্ষা করো’, ‘হলগুলো চালু করো, ভোগান্তি দূর করো’, ‘ইকসুর তারিখ ঘোষণা করো, ছাত্র সংসদ নিশ্চিত করো’, ‘বিশ্ব যখন আধুনিক, ইবি কেন যান্ত্রিক’, ‘ডিজিটাল পেমেন্ট চালু হোক, ভোগান্তি দূর হোক’, ‘নিয়োগ হবে স্বচ্ছ, শিক্ষক হবে দক্ষ’, ‘মেধা আর স্বচ্ছতা, নিয়োগে চাই ন্যায্যতা’, ‘আবু সাইদের বাংলায়, নিয়োগ বাণিজ্যের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে সংগঠনের শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলী, অফিস সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাফি, অর্থ সম্পাদক শেখ আল আমিন, প্রচার সম্পাদক আবসার নবী হামজা, দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক হাসানুল বান্না অলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী