আ.লীগকে পুনর্বাসন করে জিয়াকে জীবন দিতে হয়েছে: হাসনাত
Published: 22nd, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে তাদেরকে এর মূল্য দিতে হয়েছে। যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলো; তাকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এরপর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে। পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়; আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরুদ একত্র করা হয় তা-ও হাসিনার সমান হবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই; যারা গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত হয়েছে তাদেরকে পুনরায় নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকেও এর সুযোগ দেওয়া হবে না।
হাসনাত বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের মধ্য দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না, তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের অংশ। তিনি বলেন, আপনারা যদি বিচার করতে পারেন আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে না। এনসিপি যতদিন আছে; আওয়ামী লীগকে এদেশে পুনর্বাসন করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে রেখে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেন তাদের আমরা প্রশ্ন করতে চাই, বিগত তিনটি নির্বাচনে ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিলো? যেই দেশে ২ হাজার মানুষের রক্তের দাগ শুকায় নাই, শাপলা, পিলখানা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিচার, আবরার হত্যাকাণ্ড, জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার হয় নাই; সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নাই।
সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ক্যান্টমেন্টেই থাকুন। আমরা আপনাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদের অবদানকে আমরা স্বীকার করি। কিন্তু স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ক্যান্টনমেন্ট থেকে যেভাবে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে সেই সুযোগ থাকবে না। এদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে শুধু রাজনীতিবিদরা।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ইন্সটিটিউটের বিপক্ষে না। আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে সেগুলোকে আমরা ঠিক করতে চাই। সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আপনাদের ওপর এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আপনারা আমাদের আস্থার প্রতিদান দিবেন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি; তাহলে আওয়ামী লীগ আর ফিরতে পারবে না। কিন্তু আপনারা যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস করেন তাহলে আমাদের মতো মজলুমদের সঙ্গে বেঈমানী করা হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন সরকার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম আইনি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প র জন ত এনস প আপন র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।