Samakal:
2025-11-03@16:15:08 GMT

ফিফার ইসরায়েল প্রীতি

Published: 22nd, March 2025 GMT

ফিফার ইসরায়েল প্রীতি

১৯৯৮ সালে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) সদস্যপদ লাভ করে। তারপর থেকে ফিফা ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বে চোখ বন্ধ করে আছে। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি ফিফার কথিত অঙ্গীকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন করেই চলেছে। ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ) কয়েক দশক ধরে অবৈধভাবে ফুটবল ক্লাবগুলো দখল করে নিচ্ছে। এটি ফিফার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে বলা হয়েছে, ‘সদস্য সমিতি ও তাদের ক্লাবগুলো অন্য সদস্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া তাদের ভূখণ্ডে খেলতে পারবে না।’
এদিকে ফিফার নিয়ম লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি সমর্থকদের তীব্র নিন্দা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করা হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে দি ইকোনমিস্ট বেইতার জেরুজালেমকে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বর্ণবাদী ফুটবল ক্লাব’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, ক্লাবটির ভক্তরা “প্রতিপক্ষ দলের হয়ে খেলা আরবদের প্রতি ‘সন্ত্রাসী’ উপাধি ব্যবহার করে।”

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার ফুটবল অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইসরায়েলি বাহিনী ৩৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি ফুটবলারকে হত্যা করেছে। ৪২ বছর বয়সী প্লেমেকার এবং ফিলিস্তিনি অলিম্পিক ফুটবল দলের কোচ হানি আল-মাসদার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। দুই মাস পর পেশাজীবনে ১০০টিরও বেশি গোলদাতা মোহাম্মদ বারাকাত রমজানের প্রথম দিন তাঁর বাড়িতে বোমা হামলায় প্রাণ হারান, যিনি ‘খান ইউনিসের কিংবদন্তি’ বলে পরিচিত। 
গাজা সিটিতে ইয়ারমুক স্পোর্টস এলাকাটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যা একসময় ৯ হাজার আসনের ফুটবল স্টেডিয়াম ছিল। কিছু সময়ের জন্য ইসরায়েল বাহিনী এই স্থানটি অস্থায়ী আটক শিবির হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ট্যাঙ্কগুলো স্টেডিয়ামটি ঘিরে রাখার সময় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে অন্তর্বাস খুলে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে, যাদের হাত পেছন থেকে বেঁধে রাখা হয়েছে। অন্যদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়েছে।

২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে ছিটমহলের একমাত্র অক্ষত জায়গা ছিল ফুটবল স্টেডিয়াম। এটিই উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল। তখন ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ইসরায়েলি ফুটবলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পিএফএর আহ্বান মূল্যায়ন করতে স্বাধীন আইনি পরামর্শ চাইবেন। প্রায় এক বছর পরেও ফিফা এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
১৯০৪ সালে ইউরোপীয় শক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ফিফা একটি ঔপনিবেশিক বসতিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য কাজ করেই চলেছে, যা গ্লোবাল সাউথকে পশ্চিমের অধীনস্থ করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল দীর্ঘকাল ধরে ‘নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’র দ্বন্দ্বগুলোর ওপর জোর দিয়েছে, যা সমতা রক্ষার ধারেকাছে ছিল না। তাদের এই মডেল বিশ্বের এক অংশ থেকে অন্য অংশে সম্পদ এবং সম্পদ নিষ্কাশনের জন্য ডিজাইন হিসেবে কাজ করেছে। গাজার ফুটবল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলি প্রচেষ্টাকে ফিলিস্তিনি অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়ার তৎপরতা, যা ফিলিস্তিনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধের লক্ষণ হিসেবে বুঝতে হবে।

এই সহিংসতার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই প্রতিফলিত হয়েছে। মাসদার হত্যার কয়েকদিন পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় দল প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের নকআউট পর্বে তাদের স্থান নিশ্চিত করে ইতিহাস তৈরি করে। জাতিগত নির্মূলের এই প্রতিরোধ ফুটবল বিশ্বের সংহতির দাবি জানাই। 
গত মাসে গ্লাসগোর সেল্টিক এফসির সমর্থকরা ফিফার ‘ইসরায়েলকে লাল কার্ড দেখানোর’ জন্য একটি প্রচারণা শুরু করে। গ্রিন ব্রিগেডের এই আহ্বান তখন স্পেন থেকে মরক্কো, আয়ারল্যান্ড পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সাম্রাজ্যবাদের অপরাধকে বৈধতা দিতে কয়েক দশক ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করে।

কল ম্যাককেইল: স্কটল্যান্ডের একজন লেখক ও কর্মী; মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ফ টবল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন