আল্লাহভীতিই তাকওয়ার মূলকথা। একজন মুসলিম হিসেবে নবীজি (সা.) হলেন আমাদের একমাত্র আদর্শ। রমজানে আল্লাহর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য প্রেরণা বৈকি। কেননা, তিনি ছিলেন সৃষ্টিকুলের মাঝে আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত।
নবীজির (সা.) পূর্বাপর যাবতীয় পাপ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তথাপি তিনি রমজানে দীর্ঘ সময় ইবাদতে রাত্রি যাপন করতেন। তার পদযুগল ফুলে উঠত, ফেটে যেত অসহ্য ব্যথায়। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.
রাসুল (সা.) ভীত-নতজানু হয়ে কাঁদতেন, বিপদগ্রস্তের মতো আল্লাহকে ডাকতেন। আব্দুল্লাহ বিন শাখি বলেন, ‘কান্নার ফলে বুকে চাকার মৃদু ধ্বনি নিয়ে আমি নবীজিকে (সা.) নামাজ আদায় করতে দেখেছি।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৯০৪)
আয়েশা (রা.) এক আশ্চর্য বিষয়ের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এক রাতে রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, ‘আয়েশা, এখন আমি প্রতিপালকের ইবাদতে মগ্ন হব।’ আয়েশা (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমি নিশ্চয় আপনার নৈকট্য-সান্নিধ্য পছন্দ করি। কিন্তু, সঙ্গে-সঙ্গে পছন্দ করি এমন বিষয়, যা আপনাকে আনন্দ প্রদান করে।’ আয়েশা (রা.) বলেন, অতঃপর রাসুল (সা.) উঠে গিয়ে পবিত্র হলেন এবং নামাজে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি এত কাঁদলেন যে, তার বুক ভিজে গেল। বা তিনি এতটা কাঁদলেন যে, তার দাঁড়ি সিক্ত হলো। বা তিনি এতটা কাঁদলেন যে, তার সম্মুখস্থ জমিন ভিজে গেল। সময় ঘনালে বেলাল (রা.) নামাজের আজান দিতে গেলেন। তাকে কাঁদতে দেখে বেলাল বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) , কাঁদছেন কেন, আল্লাহ তো আপনার পূর্বাপর সকল পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৬২০)
রমজান মাসে রাসুল (সা.) যে বিনয় নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতেন, তা সকলের জন্য জীবন্ত এক উদাহরণ। কিন্তু আমরা রমজান সত্ত্বেও ইবাদতের ব্যাপারে অলস ও উদ্যমহীন। অথচ রমজানের মতো বরকতের মাস পেয়েও যে তার পাপ ক্ষমা করাতে পারে নি, তার জন্য ধ্বংসের প্রার্থনা করা হয়েছে জিবরাইল (আ.)-এর তরফ থেকে। (মুসলিম, হাদিস: ২,৫৫১; তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৪৫)
আরও পড়ুনজীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)১৩ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাইব্যুনালে গুমের মামলা তদন্ত, বিচারে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক গ্রুপ: চিফ প্রসিকিউটর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া গুমের মামলার তদন্তের পাশাপাশি বিচারে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা করবে। আজ সোমবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (ডব্লিউজিইআইডি)-এর ভাইস চেয়ার গ্রাজিনা বারানোস্কা ও আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। এই দুজন ও ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খানসহ জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি আজ দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের গুমের কেসগুলোকে কীভাবে আমরা ডিল করছি এবং এই কেসের যে তদন্ত, বিচার কোন পর্যায়ে আছে; কী কী চ্যালেঞ্জ আমরা ফেস করছি, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য কী কী ধরনের সাপোর্ট দরকার, তাঁরা কী ধরনের সাপোর্ট আমাদের দিতে পারেন, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই বিচার অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা করতে এই কমিটি প্রস্তুত আছে এবং তাঁরা এটা করবেন।’
গুমের শিকার, এমন ভুক্তভোগীরা সাক্ষী দিতে এসে যাতে বিপদে না পড়েন, সে ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তাঁরা বলেছেন, যত ধরনের সাহায্য লাগবে, তাঁরা করবেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, বিশেষ করে সাক্ষী সুরক্ষার ব্যাপারটা। এ ব্যাপারে আইন আছে, কিন্তু তা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেক ভুক্তভোগী আছেন, তাঁদের হয়তো এমন নিরাপত্তার সংকট আছে, তাঁদের হয়তো এক জায়গা থেকে সরিয়ে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দরকার হতে পারে। সেটা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে করা কঠিন। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের যদি সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের জন্য কাজ করা সহজ হবে।