তালেবান নেতা হাক্কানির জন্য এক কোটি ডলারের পুরস্কার তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র
Published: 23rd, March 2025 GMT
আফগান তালেবানের অন্যতম নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে ধরতে তথ্য দেওয়ার বিনিময়ে এক কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবার তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তালেবান সরকার গতকাল শনিবার এ কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইয়ের ওয়েবসাইটে এখনো হাক্কানির তথ্যের জন্য পুরস্কারের কথা মুছে ফেলা হয়নি। সেখানে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে হাক্কানি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র জোটের ওপর আন্তসীমান্ত হামলাগুলোয় সমন্বয় করতেন ও অংশ নিতেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্য, সিরাজুদ্দিন হাক্কানি বর্তমানে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।
আরও পড়ুনতালেবানের ভেতরে বিদ্রোহের শঙ্কা, সংকটে আফগানিস্তান?২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বছর দুয়েক জিম্মি করে রাখার পর গত বৃহস্পতিবার এক মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে তালেবান। এরপরই হাক্কানির ওপর থেকে পুরস্কারের অর্থমূল্য তুলে নেওয়ার খবর জানানো হয়।
ওই জিম্মির নাম জর্জ গ্লেজম্যান। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পর্যটক হিসেবে আফগানিস্তান ভ্রমণের সময় তালেবানের হাতে আটক হয়েছিলেন এই মার্কিন। গত জানুয়ারির পর এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মার্কিন জিম্মি মুক্তি দিল তালেবান।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, জর্জ গ্লেজম্যানের মুক্তি একটি ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ পদক্ষেপ। তাঁর মুক্তি নিশ্চিতে ‘সহায়ক’ ভূমিকা রাখায় কাতারকে ধন্যবাদ।
তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মার্কিন বন্দীদের মুক্তির ঘটনা তাদের কাছে বিশ্বব্যাপী সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রচেষ্টার অংশ।
আরও পড়ুনআফগান তালেবান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক কি নতুন মোড় নিচ্ছে২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরে তালেবান। তবে এরপরও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এখনো তারা একটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী হিসেবে রয়ে গেছে। তালেবান সরকারকে এখনো কোনো দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। যদিও কয়েকটি দেশ তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে এগিয়ে নিচ্ছে।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ক্ষমতায় এসে সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় বসে তালেবান।
আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধে ২০২০ সালেই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা সেরে ফেলেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দেশটি থেকে মার্কিন ও মিত্র জোটের পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত ১৪ মাসের সময়সীমাতেও সম্মতি দেন তিনি।
এ চুক্তি মেনে ২০২১ সালে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান ছেড়ে আসার সেই অস্থির সময়ে দেশটিতে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারেরও পতন ঘটে। এ জন্য চুক্তিটি নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে।
আরও পড়ুনতালেবানের মন জয়ের চেষ্টা কেন করছে ভারত১৩ জানুয়ারি ২০২৫সিরাজুদ্দিন হাক্কানির বাবাও একজন কমান্ডার ছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তিনি। শক্তিশালী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের চোখে এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। আফগানিস্তানের অন্যতম বিপজ্জনক একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী বিবেচনা করা হয় এটিকে।
আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ক পরিচিত পেয়েছিল। এই গোষ্ঠী বছরের পর বছর ধরে কাবুলে বেশ কয়েকটি হাইপ্রোফাইল হামলার পরিকল্পনায় ছিল বলেও মনে করা হয়।
হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কয়েকজন শীর্ষ আফগান কর্মকর্তাদের হত্যা এবং ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া মার্কিন সেনা বোয়ে বার্গডাহলসহ কয়েকজন পশ্চিমা নাগরিককে মুক্তিপণের জন্য আটক রাখার অভিযোগও রয়েছে।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠন করার পরও হাক্কানি নেটওয়ার্ক মার্কিন নজরদারিতে ছিল। কাবুলে ২০২২ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় আল-কায়েদার তখনকার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হন। যেই বাড়িতে জাওয়াহিরি নিহত হন, সেটা হাক্কানির আবাস ছিল বলে মনে করেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুনতালেবানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি২৩ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ল ব ন সরক র আফগ ন স ত ন ন টওয় র ক প রস ক র র জন য র র পর
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ