ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটদের ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দাবি
Published: 23rd, March 2025 GMT
সম্প্রতি ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েট ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ইঞ্জিনিয়ার পদবি ব্যবহার ও কোটা সুবিধা নিয়ে বিরোধ দেখে দিয়েছে। এ নিয়ে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ লক্ষ্য করা গেছে।
শনিবার (২২ মার্চ) রাতে বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট ও চুয়েট-এ চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে বিবৃতি প্রদান করেছেন। এছাড়া ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটদের নামের আগে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবী ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেটে (২৭ মে, ২০০৮) বলা হয়েছে, প্রকৌশলী অর্থ হলো- যিনি প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীপ্রাপ্ত ও ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) এর সদস্য এবং বিধি ৪১ অনুযায়ী তালিকাভূক্ত। অপরদিকে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অর্থ হলো- ওই পেশাজীবী ব্যক্তি, যিনি স্বীকৃত কোনো পলিটেকনিক বা কারিগরী ইনস্টিটিউট থেকে প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) এর সদস্য এবং বিধি ৪১ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত।
জানা গেছে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটদের জন্য ৯ম গ্রেডের টেকনিক্যাল চাকরিতে ৩৩ শতাংশ কোটা সুবিধা ও ১০ গ্রেডের টেকনিক্যাল চাকরিতে ১০০ শতাংশ কোটা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ১০ গ্রেডে ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েট ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না।
বিবৃতিতে এ কোটা ও বিশেষ সুবিধাকে জুলাই শহিদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে জানিয়েছেন চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিবৃতিতে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কোটা ও বিশেষ সুবিধার দাবির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি শুধু একটি দাবি নয়, বরং মেধার সঠিক মূল্যায়ন, ন্যায্য প্রতিযোগিতা এবং দেশের প্রকৌশল খাতে সমতার সংগ্রামের প্রশ্ন।
তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সেই সময় শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে মেধার ভিত্তিতে সমান সুযোগের দাবি তুলেছিল। এই আন্দোলন কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের প্রতিফলন হয়ে উঠেছিল। ফলে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটে এবং একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত কোটা ও বিশেষ পদোন্নতির দাবি এ আদর্শের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আমরা এ দাবিকে অযৌক্তিক, বৈষম্যমূলক ও মেধার প্রতি অবিচার হিসেবে দেখছি।
তারা আরও বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং একটি কারিগরি শিক্ষা, যা টেকনিশিয়ান হিসেবে দক্ষতা অর্জনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি প্রকৌশলী হওয়ার পূর্ণাঙ্গ যোগ্যতা দেয় না। ডিপ্লোমা হোল্ডাররা টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষিত এবং তাদের পেশাগত ভূমিকা ও মর্যাদা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সমান নয়। তবুও তারা সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রকৌশলী পদে নিয়োগ, পদোন্নতি এবং নামের আগে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দটি ব্যবহারের দাবি করে আসছে। এটি মেধার সঠিক মূল্যায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রকৌশল পেশার গৌরবকে ক্ষুণ্ন করে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই— নো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি, নো ইঞ্জিনিয়ার।
কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের এ দাবি জুলাইয়ের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। তাই আমরা দেশের সব বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান করে দাবি করছি, ৯ম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেওয়া হোক এবং এ পদে ডিপ্লোমা হোল্ডারদের জন্য দেওয়া ৩৩ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করা হোক।
১০ম গ্রেডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে শতভাগ ডিপ্লোমা কোটা বাতিল করে এটি বিএসসি ও ডিপ্লোমা—সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। ডিপ্লোমা হোল্ডাররা ১০-২০ গ্রেডে টেকনিশিয়ান হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। আইন করে নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিপ্লোমা হোল্ডাররা নামের আগে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হোক। এ বৈষম্যমূলক প্রথা দেশের প্রকৌশল খাতে মেধার প্রতিফলন ঘটতে দেয় না। আমরা চাই, একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা, যেখানে সবাই তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এটি কেবল প্রকৌশলীদের জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও অপরিহার্য।
ঢাকা/মাহাফুজ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য ব যবহ র ইনস ট ট ব এসস
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতর তিনটি প্লাস্টিকের বালতিতে লুকিয়ে রাখা ২৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বোনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে তারা। পাশাপাশি মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈখর অনির্বাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ড্রেন থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩
দিনাজপুরে পুকুর পাড় থেকে গ্রেনেড উদ্ধার
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ঢাকনা খোলেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্লাস্টিকের বালতিতে তুষ দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় কিছু বস্তু দেখতে পান। পাশাপাশি তিনটি ড্রেনের ঢাকনা খুলে তারা একই চিত্র দেখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেনের ভেতর থেকে তিনটি বালতিতে রাখা ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আটক হাসান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ভাগ্নি জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। এ সময় মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারির বোন সেলিনা বেগমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/রতন/মাসুদ