মুক্তা বেগমকে (৫৫) বাড়িতে রেখে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে গ্রামের মসজিদে গিয়েছিলেন মান্নান গাজী। রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখতে পান বসতঘরের খাটের ওপর স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। তবে ঘরের কোনো মালামাল খোয়া যায়নি।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ৈজঙ্গল গ্রামে ঘটেছে। আজ বুধবার সকালে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ওই ঘটনার পর গভীর রাত পর্যন্ত ওই এলাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদের মাইক থেকে মাইকিং করে ডাকাত দল এক নারীকে হত্যা করেছে—এমন প্রচারণা চালানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, ঘটনাটি ডাকাতির নয়। দুর্বৃত্তরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়েছে।

ভেদরগঞ্জ থানা ও স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মান্নান গাজী সাবেক সেনাসদস্য। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি মালয়েশিয়াপ্রবাসী হন। ২০২৩ সালে দেশে ফিরে গ্রামে নতুন একটি বাড়ি নির্মাণ করে স্ত্রী মুক্তা বেগমকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ওই দম্পতির ছেলে হৃদয় গাজী মালয়েশিয়াপ্রবাসী আর মেয়ে মুন্নি আক্তার স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন।

আজ সকালে বাড়ৈজঙ্গল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, যে বাড়িতে মুক্ত বেগম খুন হয়েছেন, তার আশপাশে ২০০ মিটারের মধ্যে কোনো বাড়ি নেই। একটি আধা পাকা ঘরে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন মুক্তা। ওই ঘরের একটি কক্ষে তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তার স্বামী মান্নান গাজী ও মেয়ে মুন্নি কান্নাকাটি করছেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মান্নান গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাহ্‌রির জন্য খাবার তৈরি করে মুক্তার ঘুমিয়ে পড়ার কথা ছিল। আমি নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরলে দরজা খুলে দেবে—এমন কথা ছিল। নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে দেখি, দরজা খোলা। কিন্তু তাকে পেলাম না। তার রক্তাক্ত নিথর দেহটি খাটের ওপর পড়ে ছিল। ঘরের কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি। তাহলে কারা, কী উদ্দ্যেশে আমার স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল? আমরা নিরীহ মানুষ। ছেলেমেয়েও বাড়িতে থাকে না। আমাদের তো কোনো শত্রু নেই। তা হলে এম নৃশংসতা কে করল?’

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে, একজনকে হত্যা করেছে—এমন খবর পেয়ে আমরা ওই এলাকায় যাই। ওই নারীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তবে এটি ডাকাতির ঘটনা নয়। ওই নারীকে কেউ হত্যা করেছেন, কিন্তু ঘরের কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। কারা এমন করতে পারে, তার ধারণা পরিবার থেকেও পাচ্ছি না। ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ দরগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।

আরও পড়ুনযেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি১৯ ঘণ্টা আগে

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উত্তর মাথঅভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে