Prothomalo:
2025-08-01@04:46:43 GMT

শবে কদরের কেন এত কদর

Published: 27th, March 2025 GMT

‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে; যা মানুষের দিশারি ও সৎ পথের নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫) 

কোরআন নাজিলের রাত হলো শবে কদর। এই রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা গুহায় আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের প্রধান জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল–কোরআন নাজিলের সূচনা হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আপনি কি জানেন সে মহিমাময় রজনী কী? মহিমান্বিত সেই নিশি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রজনীতে ফেরেশতাগণ এবং রুহুল কুদুস (জিবরাইল আ.) তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতরণ করেন। শান্তির এই ধারা চলতে থাকে উষালগ্ন পর্যন্ত।’ (সুরা কদর, আয়াত ১-৫) 

কোরআন প্রথম নাজিল হওয়ায় এই রাত বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ রাত। এই রাতকে আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’, ফারসিতে ‘শবে কদর’ বলা হয়; যার অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত রজনী, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রাত। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরায়েলের এক মুজাহিদের কথা বলেছিলেন, যিনি এক হাজার বছর হায়াত পেয়েছিলেন। দীর্ঘ এই আয়ুষ্কালে তিনি দিনে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতেন এবং রাতে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। আলী ইবনে উরওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরায়েলের চারজন আবেদ সম্পর্কে বলছিলেন, যাঁরা ৮০ বছর ধরে এক মুহূর্তের জন্যও ইবাদত থেকে বিরত হননি। তাঁরা হলেন হজরত জাকারিয়া (আ.), হজরত আইয়ুব (আ.), হজরত হিজকিল ইবনে আজুজ (আ.) ও হজরত ইউশা ইবনে নুন (আ.)। সাহাবিরা (রা.) এ কথা শুনে বিস্মিত হন। তখন জিবরাইল (আ.) এসে বলেন, হে মুহাম্মদ (সা.)! আপনার উম্মতেরা এ কথা শুনে অবাক হচ্ছে? তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে উত্তম কিছু রেখেছেন। এরপর তিনি সুরা কদর পাঠ করেন। (তাফসির ইবনে কাসির) 

শবে কদরের ইবাদতে ও প্রার্থনায় জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে। সব অকল্যাণ ও অমঙ্গল দূর হতে পারে। ব্যর্থতার অন্ধকার সরে গিয়ে সফলতার আলো উদিত হতে পারে। জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, গ্লানি ও হতাশা দূর হয়ে সুখ–শান্তি নেমে আসতে পারে। এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের ডেকে বলেন, ‘কে আছ প্রার্থী? চাও, আমি দান করব; কে আছ আহ্বানকারী? দোয়া করো, আমি কবুল করব; কে আছ অসুস্থ? আমার কাছে চাও, আমি আরোগ্য দেব; কে আছ অভাবগ্রস্ত? আমার কাছে চাও, আমি প্রাচুর্য দেব; কে আছ বিপদগ্রস্ত? আমার কাছে চাও, আমি বিপদমুক্ত করব। যা চাও, তাই দেব।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, তাবরানি, বাজজার) 

আল্লাহ তাআলা দান করতে চান, বান্দা না চাইলে তিনি অসন্তুষ্ট হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন। (তিরমিজি) রমজান মাস এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, এই মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে প্রকৃতপক্ষে হতভাগ্য। (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে নাসায়ি) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো। (মুসলিম)। মুফাসসিরগণ বলেন, আরবি ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ রয়েছে; সুরা কদরে এই শব্দটি তিনবার এসেছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়, তাই সাতাশে রমজানের রাত শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (তাফসিরে মাজহারি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, তোমরা রমজানের পঁচিশ, সাতাশ ও উনত্রিশতম রজনীতে শবে কদর অনুসন্ধান করো। (মুসনাদে আহমাদ ও বুখারি)। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি) 

হজরত আয়িশা (রা.) নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, শবে কদরে কী দোয়া পড়ব? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি এই দোয়া করবে—আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে হাকিম, ইবনে মাজাহ, নাসায়ি, বায়হাকি সহিহ আলবানি)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রআন ন জ ল আল ল হ ত আল এই র ত আহম দ রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ