Prothomalo:
2025-06-16@08:47:47 GMT

শবে কদরের কেন এত কদর

Published: 27th, March 2025 GMT

‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে; যা মানুষের দিশারি ও সৎ পথের নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫) 

কোরআন নাজিলের রাত হলো শবে কদর। এই রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা গুহায় আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের প্রধান জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল–কোরআন নাজিলের সূচনা হয়। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আপনি কি জানেন সে মহিমাময় রজনী কী? মহিমান্বিত সেই নিশি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রজনীতে ফেরেশতাগণ এবং রুহুল কুদুস (জিবরাইল আ.) তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতরণ করেন। শান্তির এই ধারা চলতে থাকে উষালগ্ন পর্যন্ত।’ (সুরা কদর, আয়াত ১-৫) 

কোরআন প্রথম নাজিল হওয়ায় এই রাত বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ রাত। এই রাতকে আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’, ফারসিতে ‘শবে কদর’ বলা হয়; যার অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত রজনী, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রাত। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরায়েলের এক মুজাহিদের কথা বলেছিলেন, যিনি এক হাজার বছর হায়াত পেয়েছিলেন। দীর্ঘ এই আয়ুষ্কালে তিনি দিনে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতেন এবং রাতে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। আলী ইবনে উরওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরায়েলের চারজন আবেদ সম্পর্কে বলছিলেন, যাঁরা ৮০ বছর ধরে এক মুহূর্তের জন্যও ইবাদত থেকে বিরত হননি। তাঁরা হলেন হজরত জাকারিয়া (আ.), হজরত আইয়ুব (আ.), হজরত হিজকিল ইবনে আজুজ (আ.) ও হজরত ইউশা ইবনে নুন (আ.)। সাহাবিরা (রা.) এ কথা শুনে বিস্মিত হন। তখন জিবরাইল (আ.) এসে বলেন, হে মুহাম্মদ (সা.)! আপনার উম্মতেরা এ কথা শুনে অবাক হচ্ছে? তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে উত্তম কিছু রেখেছেন। এরপর তিনি সুরা কদর পাঠ করেন। (তাফসির ইবনে কাসির) 

শবে কদরের ইবাদতে ও প্রার্থনায় জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে। সব অকল্যাণ ও অমঙ্গল দূর হতে পারে। ব্যর্থতার অন্ধকার সরে গিয়ে সফলতার আলো উদিত হতে পারে। জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, গ্লানি ও হতাশা দূর হয়ে সুখ–শান্তি নেমে আসতে পারে। এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের ডেকে বলেন, ‘কে আছ প্রার্থী? চাও, আমি দান করব; কে আছ আহ্বানকারী? দোয়া করো, আমি কবুল করব; কে আছ অসুস্থ? আমার কাছে চাও, আমি আরোগ্য দেব; কে আছ অভাবগ্রস্ত? আমার কাছে চাও, আমি প্রাচুর্য দেব; কে আছ বিপদগ্রস্ত? আমার কাছে চাও, আমি বিপদমুক্ত করব। যা চাও, তাই দেব।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, তাবরানি, বাজজার) 

আল্লাহ তাআলা দান করতে চান, বান্দা না চাইলে তিনি অসন্তুষ্ট হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন। (তিরমিজি) রমজান মাস এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, এই মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে প্রকৃতপক্ষে হতভাগ্য। (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে নাসায়ি) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো। (মুসলিম)। মুফাসসিরগণ বলেন, আরবি ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ রয়েছে; সুরা কদরে এই শব্দটি তিনবার এসেছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়, তাই সাতাশে রমজানের রাত শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (তাফসিরে মাজহারি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, তোমরা রমজানের পঁচিশ, সাতাশ ও উনত্রিশতম রজনীতে শবে কদর অনুসন্ধান করো। (মুসনাদে আহমাদ ও বুখারি)। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি) 

হজরত আয়িশা (রা.) নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, শবে কদরে কী দোয়া পড়ব? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি এই দোয়া করবে—আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে হাকিম, ইবনে মাজাহ, নাসায়ি, বায়হাকি সহিহ আলবানি)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রআন ন জ ল আল ল হ ত আল এই র ত আহম দ রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মদিনায় রয়েছে বেহেশতের বাগান

মদিনার পূর্ব নাম ইয়াসরিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর এই শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর। মদিনা হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আশ্রয়ভূমি; প্রেম, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্থান এবং সত্যনিষ্ঠার পুণ্যময় কর্মক্ষেত্র। এটি নবীজি (সা.)-এর শহর, শান্তির নগর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার সাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (দারুকুতনি: ২৬৯৫; বায়হাকি: ৩৮৬২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে হজ করল, কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না, সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ (দারুকুতনি, পৃষ্ঠা: ২৭২) ফকিহদের মতে, মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। আল্লামা ইউসুফ ইসলাহি (রহ.) বলেন, ‘হাজি সাহেবদের জন্য রওজা শরিফ জিয়ারত করা ওয়াজিব।’ (আসান ফিকাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৫০)

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে এবং কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক এবং দোজখের আজাব থেকে মুক্ত।’ (তাবরানি, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৩২৫, হাদিস: ৫৪৪৪ ও তিরমিজি: ২০০)। তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজ পড়লে তার সওয়াব ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৫২)

রওজা শরিফ এবং এর পশ্চিম দিকে নবীজি (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান বলা হয়

মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো নবীজি (সা.)-এর রওজা শরিফ, যা হজরত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার মধ্যে অবস্থিত। এই রওজার পাশে হজরত আবু বকর (রা.) এবং তাঁর পাশেই হজরত ওমর (রা.)-এর মাজার অবস্থিত। এখানে আরেকটি কবরের স্থান খালি রাখা হয়েছে, যেখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর দাফন হবে বলে বর্ণিত আছে।

রওজা শরিফ এবং এর পশ্চিম দিকে নবীজি (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান বলা হয়। এই স্থান আলাদা রঙের (ধূসর সাদাটে) কার্পেট দ্বারা চিহ্নিত থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে জান্নাতের একটি বাগান রয়েছে।’ (বুখারি: ১১৯৬, মুসলিম: ১৩৯১)

মসজিদে নববির পূর্ব দিকে অবস্থিত গোরস্থানকে জান্নাতুল বাকি বলা হয়, যেখানে অসংখ্য সাহাবি, আউলিয়া, বুজুর্গ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কবর রয়েছে।

মদিনার উত্তর-পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড় ও ওহুদের প্রান্তর অবস্থিত, যা মসজিদে নববি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখানে হজরত হামজা (রা.)-সহ ৭০ জন সাহাবি শহীদ হন। এখানেই কাফেররা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাঁত মোবারক শহীদ করেন। এখানে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে।

কিবলাতাইন মসজিদ: হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই মসজিদ থেকে তৎকালীন কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে জোহরের নামাজ পড়ার সময় নবীজি (সা.)–এর কাছে ওহি নাজিল হয় যে ‘তুমি এখনই এই অবস্থায় কাবার দিকে কিবলা করে নামাজ সমাধা করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৪)

কুবা মসজিদ: এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। এটি রাসুলে করিম (সা.)–এর নিজ হাতে তৈরি। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান। এখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লে এক ওমরাহর সওয়াব হয়।

খন্দক প্রান্তরের পাশে অতি অল্প পরিসর স্থানের মধ্যে পাশাপাশি ছয়টি মসজিদ আছে। এগুলো হচ্ছে মসজিদে ফাতাহ, মসজিদে সালমান ফারসি (রা.), মসজিদে আবু বকর সিদ্দিক (রা.), মসজিদে ওমর (রা.), মসজিদে আলী (রা.), মসজিদে ফাতিমা (রা.)।

রাসুল করিম (সা.) প্রথম জুমা বনি ছালেমের মহল্লায় এই মসজিদে পড়েন। এই মসজিদকে ‘মাসজিদে জুমুআ’ বলা হয়।

মাসজিদে গামামা: গামামা অর্থ মেঘ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই মসজিদে ঈদের জামাতে ইমামতি করতেন এবং একসময় বৃষ্টির জন্য ‘ইসতিসকার’ নামাজ পড়েছিলেন।

বদর প্রান্তর: এখানে ইসলামের বিজয়সূচক প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৪ জন সাহাবি এতে শাহাদাতবরণ করেন। এখানে শহীদদের কবর রয়েছে।

মসজিদে সাকিয়া: বদরের যুদ্ধের সময় রাসুল (সা.) এই মসজিদে নামাজ পড়েছিলেন এবং মদিনাবাসীর জন্য দোয়া করেছিলেন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মদিনায় রয়েছে বেহেশতের বাগান