বাংলা ও ইংরেজিসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কোরআন শরিফের তরজমা বা অনুবাদ হয়েছে। এসব অনুবাদের বিভিন্ন ধরনও আছে। কিছু অনুবাদ আরবি থেকে সরাসরি হয়েছে, কিছু অনুবাদ আবার অনুবাদের অনুবাদ। যেমন: বাংলা ভাষায় প্রচলিত তরজমাগুলোর একটা বড় অংশই কোরআনের উর্দু তরজমার সাহায্যে করা হয়েছে। আবার কোরআনের কিছু অনুবাদে টীকা বা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়েছে স্পষ্টীকরণের জন্য। কিছু অনুবাদ তাফসিরভিত্তিক বা বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বা কোরআনে আলোচিত বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েও অনুবাদ করা হয়েছে। ড.
এই অনুবাদে কোরআনের তিনটি প্রধান বিষয়কে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—
(১) উপদেশ-নির্দেশ, (২) ঘটনা-কাহিনি এবং (৩) অদৃশ্য বা গায়েবি বিষয়।
আরও পড়ুনহজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা–জীবন২৫ নভেম্বর ২০২৩প্রথমটিতে প্রধানত মুসলমানদের সঙ্গে আল্লাহর, অন্যান্য মানুষের ও আল্লাহর বাকি সৃষ্টির সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক আলোচিত হয়েছে। যেমন: ইবাদত, পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাদি। দ্বিতীয়টিতে হজরত আদম (আ.), ইব্রাহিম (আ.), মুসা (আ.) ও আরও কয়েকজন নবী-রাসুলের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এর একাধিক উদ্দেশ্য আছে। প্রথমত, ইসলাম প্রচারকালে মুহাম্মদ (সা.) যখন কাফেরদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছিলেন, তখন তাঁকে আশ্বস্ত করা এবং কাফেরদেরও সতর্ক করা। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কাহিনির মধ্যে মুসলমানদের নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া। সর্বশেষ গায়েবি বা অদৃশ্য বিষয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমানকে এটা বোঝান যে আল্লাহ, তাঁর গুণাবলি, তাঁর ফেরেশতাকূল, কেয়ামতের পর পুনরুত্থান ও শেষ বিচারসহ বিভিন্ন অদৃশ্য বিষয়গুলো চোখে না দেখেই অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে হবে। তা না হলে সে সত্যিকার ইমানদার মুসলমান হতে পারবে না।
বইটিতে কোরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে উক্ত তিনটি বিষয়ের কোনটি বা কোন কোনটির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, তার একটি প্রতীকযুক্ত তালিকা দেওয়া আছে প্রথমে। যেমন: সুরা বাকারায় তিনটি বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আবার, সুরা ইয়াসিনে কাহিনি ও গায়েবি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।
আরও পড়ুনহজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনা–জীবন০২ ডিসেম্বর ২০২৩সুরার ভেতরে আলোচিত ও বর্ণিত বিষয়গুলোর সার-সংক্ষেপ প্রতিটি সুরার শুরুতে দেওয়া হয়েছে। তারপর বিভিন্ন আয়াতের অনুবাদের পাশাপাশি আয়াতগুলোর মূল কথা একবাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: সুরা আল-আরাফের (৭ম সুরা) ১০ থেকে ১৮ আয়াতের মূল কথা হলো: ‘শয়তানে ঔদ্ধত্য।’
সহজ ইংরেজিতে করা এই অনুবাদের অন্যতম লক্ষ্য হলো, পশ্চিমা দুনিয়ায় ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মাঝে ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ও বিকৃতি ধারণা অবসানে সহযোগিতা করা। সে কারণে, কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন নবী-রাসুলের নাম বাইবেলের প্রচলিত নামানুসারে অনুবাদ করা হয়েছে। যেমন: সুরা ইউসুফের ক্ষেত্রে মূল নামের পাশাপাশি ’জোসেফ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
সর্বোপরি প্রারম্ভে কোরআনের কাঠামো, ভাষা শৈলী ও গুরুত্বের ওপরে আলোকপাত করা হয়েছে এবং পাশ্চাত্য জগতের ইসলামভীতি ও ইসলামবিদ্বেষ বিষয়ক কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। তরজমাটি মিশরের আল-আজহার ইসলামিক রিসার্চ একাডেমি থেকে অনুমোদিত হয়েছে। আর মুদ্রিত হয়েছে তুরস্ক থেকে।
দ্য ক্লিয়ার কোরআন: আ থিমেটিক ইংলিশ ট্রান্সলেশন; ড. মুস্তাফা খাত্তাব; বুক অব সাইনস ফাউন্ডেশন, আমেরিকা, ২০১৬।
আরও পড়ুনপ্রাঞ্জল বাংলা অনুবাদে কোরআন১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ব দ র ক রআন র ম সলম ন র ক রআন ত হয় ছ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”
আরো পড়ুন:
ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩
নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।
ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।
বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।
সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।
তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ