নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) শান্তা আক্তার নামের ওই ছাত্রী বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

শান্তা আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ।

অভিযোগে তিনি বলেন, “চান বাদশা আমার পৈতৃক সম্পত্তি দখল করার জন্য আমার পরিবারের সদস্যদের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করে আসছিল। এর জের ধরে গত ২১ মার্চ তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে আমার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মারপিট করতে থাকে। এ সময় আমি আমার বাবাকে বাঁচাতে গেলে চান বাদশা আমাকে চড় থাপ্পড় এবং কোমরে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। আমি এবং আমার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “চান বাদশা আমাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষিসহ বাঁশ দিয়ে মারপিট করে। এতে আমি গুরুতর আহত হই। আমাদের বাঁচাতে আমার চাচা রমজান (৫০) এগিয়ে আসে। এসময় চান বাদশা সুযোগ পেলে আমাদের ক্ষতিসাধন করার হুমকি দেয়।” 

শান্তা আক্তার বলেন, “থানায় অভিযোগ করার পরও চান বাদশা আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। রাতে আমাদের বসতবাড়িতে ঢিল ছুড়ে আমাদেরকে নানাভাবে বিরক্ত করছে। আমি ও আমার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছি।”

জানতে চাইলে অভিযুক্ত চান বাদশা বলেন, “আমি কাউকে মারধর করিনি। সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কাউকে হুমকি-ধমকি দেইনি।” 

সরজমিনে পরিদর্শনের পর এলাকাবাসী থেকে জানা যায়, চান বাদশা প্রায়ই মাদক গ্রহণ করে থাকেন। একই কারণে নিজের স্ত্রী-বাচ্চাকে পিটিয়ে ঘর ছাড়া করেছেন। এছাড়া তিনি তার বৃদ্ধ মা-ভাইদের ওপর প্রায়ই হাত তুলেন। পেশায় শ্রমিক হলেও চান বাদশার অত্যাচার নিয়মিত দেখে আসছেন গ্রামবাসী। তবে তার অত্যাচারী কার্যক্রমে কেউ বাধা দিতে চাইলে তিনি ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে বসেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “চান বাদশা একটু বেপরোয়া টাইপের মানুষ। তাকে নিয়ে মানুষের নানান অভিযোগ রয়েছে। আমরা বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ডাকলে সে সাড়া দেয়নি। কিন্তু নিয়মিতই নানা অপকর্মের অভিযোগ শুনছি।”

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমি এমন একটা অভিযোগ পেয়েছি। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে শান্তা নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/মেজবা উদ্দিন/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ন ব দশ আম র প আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ