নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে গেলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, সতর্ক করল বিএনপি
Published: 31st, March 2025 GMT
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে ‘জনগণের মধ্যে জোরালো অসন্তোষ’ এবং দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছে বিএনপি। নির্বাচন পিছিয়ে ২০২৬ সালে যেতে পারে—বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হলো।
শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে নয়াদিল্লি চলে যান। এরপর গত বছরের আগস্ট থেকে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার ১৭ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি পরিচালিত হচ্ছে।
বিএনপিসহ বিভিন্ন দল এ বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। তবে গত মঙ্গলবার অধ্যাপক ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজের সময় পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো এবং পশ্চিমা কিছু দেশ অভিযোগ করে আসছিল, হাসিনার সরকার থাকার সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম মার্চ মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ‘বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশিং ব্যবস্থায় আমি মনে করি না একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে।’
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য এবং সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল মঈন খান বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যেই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার চায় বিএনপি।
গত শনিবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মঈন খান বলেন, ‘আমরা তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) বোঝানোর চেষ্টা করব যে তাদের জন্য সর্বোত্তম হলো যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া এবং সম্মানজনকভাবে বিদায় নেওয়া।’
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানরত মঈন খান বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। নির্বাচন ডিসেম্বরের পর গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হবে। এর অর্থ কিছু অস্থিরতা হতে পারে.
চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন না হলে তার পরিণতি সম্পর্কে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে মঈন খানই প্রথমবারের মতো এভাবে সতর্কবার্তা দিলেন।
নির্বাচনের আগে জোট করবে না বিএনপি
শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নয়তো পলাতক। এতে করে আওয়ামী লীগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছাত্র-তরুণদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি। ছাত্রনেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ দুটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বিরক্ত এবং তাঁরা পরিবর্তন চান।
তবে মঈন খান বলেছেন, বিএনপির জরিপে দেখা গেছে, আগামী বছরের মধ্যে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সহজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হবে বিএনপি এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ঢাকায় ফিরতে পারেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমান এবং তাঁর মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হওয়া আদালতের বেশ কিছু রায় উল্টে গেছে। এতে তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ তৈরি হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। গত জানুয়ারি থেকে লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠক করার পর মঈন খান বলেন, তিনি বাংলাদেশে যেমন ছিলেন, তার চেয়ে এখন অনেকটা ভালো আছেন। তবে তাঁর সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা কম।
মঈন খান বলেছেন, বিএনপির জোট করে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে নির্বাচিত হলে অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায় তারা। এসব দলের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিও থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরে গণতন্ত্রের পক্ষে থাকা সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করা গেলে আমরা খুশি হব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড স ম বর ব এনপ র বল ছ ন ইউন স সতর ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও খিলগাঁওয়ে দুজনকে গুলি করে হত্যা এবং দুজনকে আহত করার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো.শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
অন্য যে চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল ও পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকার।
আসামিদের মধ্যে এএসআই চঞ্চল চন্দ্র গ্রেপ্তার আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, তিনি দোষ স্বীকার করেন কি না। জবাবে চঞ্চল চন্দ্র নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। আগামী ১৬ অক্টোবর এ মামলার সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে ট্রাইব্যুনাল–১–এ গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ সাক্ষ্য গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। তবে তা হয়নি। আগামী বৃহস্পতিবার এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।