তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থিতা নিয়ে রসিকতা করছি না : ট্রাম্প
Published: 31st, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে রসিকতা করছেন না। তবে এ বিষয়ে এখনো চিন্তা করার সময় আসেনি। গতকাল রোববার তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থিতা করা সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এনবিসি নিউজকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘না, আমি মজা করছি না। আমি মজা করছি না; কিন্তু এটা নিয়ে ভাবার এখনই সময় নয়।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থিতার বিষয়ে বলেন, ‘এমন কিছু পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে আপনি এটি করতে পারেন।’ তবে নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
মার্কিন সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুসারে, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট টানা বা বিরতি দিয়ে চার বছর করে দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
সাংবিধানিক সংশোধনী বাতিলের প্রস্তাবের জন্য কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট এবং আইনসভায় ৫০টি মার্কিন রাজ্যের তিন-চতুর্থাংশের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
ট্রাম্পের কিছু মিত্র ২০২৮ সালের পরেও ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে রাখার ধারণাটি তুলে ধরেছেন এবং তিনিও বেশ কয়েকবার এমনভাবে এই ধারণা তুলে ধরেছেন, যা তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের খোঁচা দেওয়ার মতো বলে মনে হয়েছে।
ট্রাম্প ৭৮ বছর বয়সে দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি যদি ২০২৮ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের পর আরও চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন, তবে তার বয়স হবে ৮২ বছর।
১৭৯৬ সালে জর্জ ওয়াশিংটন দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির স্থাপন করেছিলেন। ১৯৪০ সালে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৪০ বছরের বেশি সময় ধরে দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ধারা বজায় ছিল। রুজভেল্ট এই ধারা ভেঙে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে চতুর্থ মেয়াদের কয়েক মাসের মধ্যে তিনি মারা যান। এর ফলে ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রার্থিতার সীমা সংশোধনের পথ প্রশস্ত হয়।
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন ১৯ মার্চ নিউজ ন্যাশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ট্রাম্প ২০২৮ সালে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। তিনি বলেন, এটি কীভাবে সম্ভব হবে, সে উপায় খুঁজছেন তিনি ও অন্যরা।
তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচন করতে চাওয়ার সুযোগ রয়েছে ট্রাম্পের করা এমন মন্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পার্টি ও তাঁর নিজ দল রিপাবলিকান পার্টি থেকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র স ড ন ট পদ
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।