৭ দশকের রেকর্ড ভেঙে ২৫ ঘণ্টা বক্তৃতা, ডেমোক্র্যাট সিনেটর কোরি বুকার করলেন ট্রাম্পের সমালোচনা
Published: 2nd, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘বেপরোয়াভাবে’ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছেন বলে এক দীর্ঘ বক্তৃতায় অভিযোগ করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর কোরি বুকার। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর এ বক্তৃতা সময়ের দিক থেকে প্রায় সাত দশকের রেকর্ড ভেঙেছে।
৫৫ বছর বয়সী নিউ জার্সির আইনপ্রণেতা কোরি স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বক্তৃতা শুরু করেন। থামেন ২৫ ঘণ্টা ৫ মিনিট পর। এ ম্যারাথন বক্তৃতায় তিনি ফেডারেল সরকারের আকার কমাতে (জনবল ও খরচ) যে ‘যুদ্ধ’ শুরু করেছেন, তা নিয়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ধনকুবের ইলন মাস্কের সমালোচনা করেন।
২০১৩ সালে প্রথম সিনেটর নির্বাচিত হওয়া কোরি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে বেপরোয়া ও অসাংবিধানিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এমনকি এসব তছনছ করে দেওয়া হচ্ছে।’
২০১৩ সালে প্রথম সিনেটর নির্বাচিত হওয়া কোরি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে বেপরোয়া ও অসাংবিধানিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এমনকি এসব তছনছ করে দেওয়া হচ্ছে।’কৃষ্ণাঙ্গ সিনেটর কোরি বুকার দীর্ঘ বক্তৃতা করে এর আগে সাউথ ক্যারোলাইনার স্বতন্ত্র সিনেটর স্ট্রম থারমন্ডের রেকর্ড ভাঙেন।
১৯৫৭ সালের গ্রীষ্মে নাগরিক অধিকারবিষয়ক আইনের বিরুদ্ধে স্ট্রম থারমন্ড যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেটি ছিল ২৪ ঘণ্টা ১৮ মিনিটের। যদিও এর মধ্য দিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট বিল পাস হওয়া আটকাতে পারেননি। বিলটিতে কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের ভোটাধিকারের ফেডারেল সুরক্ষা বাড়ানো হয়েছিল।
দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করে ট্রাম্প প্রথম সপ্তাহেই শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেন। বন্ধ করে দেন কংগ্রেসের অনুমোদন দেওয়া বিভিন্ন সরকারি খরচ। তাঁর নীতিমালা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে ফেডারেল আদালতগুলোর বাধা সৃষ্টির এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প তাঁর বিতর্কিত কর্মসূচিগুলোর বাস্তবায়ন আরও জোরালো করেন। তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস। এরই ধারাবাহিকতায় লক্ষাধিক ফেডারেল কর্মীকে ছাঁটাই করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাট ভোটারেরা।
আরও পড়ুনক্ষমতায় বসেই অনেক কিছু বদলে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১ জানুয়ারি ২০২৫ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের পাশাপাশি নিজেদের দলের নেতাদের প্রতিও। এ নেতাদের মধ্যে আছেন শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার ও প্রতিনিধি পরিষদের শীর্ষস্থানীয় নেতা হাকিম জেফরি। তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণ, তাঁরা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলো জোরালোভাবে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন না।
বক্তৃতার শেষ দিকে শুমার সিনেটর বুকারকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি কি জানেন, আপনি রেকর্ড ভেঙেছেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখন জানলাম।’ পরে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে আবার বক্তৃতা শুরু করেন।
আপনি কি জানেন, আপনি রেকর্ড ভেঙেছেন?চাক শুমার, ডেমোক্র্যাট সিনেটরএদিকে বুকারের দীর্ঘ সমালোচনাকে নাকচ করে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র।
বুকার নিউ জার্সির নিউআর্কের সাবেক মেয়র। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। সে বছর ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেনের কাছে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল এ বক্তৃতা দেওয়ার সময় বুকারের সহকর্মী সিনেটররা পর্যায়ক্রমে সিনেটকক্ষে প্রবেশ করেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করেন। এ অবস্থায় তিনি তাঁর বক্তৃতা না থামিয়ে টানা চালিয়ে যান।
আরও পড়ুনশুল্ক নিয়ে কাল কী ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প২০ ঘণ্টা আগেবক্তৃতায় বুকার বলেন, ‘ট্রাম্প–ভ্যান্স প্রশাসন আমাদের বিশৃঙ্খলার মধ্যে নিমজ্জিত করে চলেছেন। আমাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ আমাদের মার্কান পরিবারগুলোর খরচ ও আতঙ্কই শুধু বাড়াবে।’
বুকারের বক্তৃতার শেষদিকে সিনেটকক্ষে তাঁর অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বিপরীত পাশে রিপাবলিকান সিনেটরদের আসনগুলো ছিল একেবারে ফাঁকা।
১৯৫৭ সালের গ্রীষ্মে নাগরিক অধিকারবিষয়ক আইনের বিরুদ্ধে স্ট্রম থারমন্ড যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেটি ছিল ২৪ ঘণ্টা ১৮ মিনিটের। যদিও এর মধ্য দিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট বিল পাস হওয়া আটকাতে পারেননি। বিলটিতে কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের ভোটাধিকারের ফেডারেল সুরক্ষা বাড়ানো হয়েছিল।বুকার বলেন, ‘সব মার্কিনের জন্য এটি এক নীতিনৈতিকতার মুহূর্ত। এখানে বাম বা ডানের বিষয় নেই। এটি সত্য–মিথ্যার বিষয়।’ একপর্যায়ে বুকারের কণ্ঠ ধরে আসে। শেষমেশ বক্তৃতা থামান তিনি।
আরও পড়ুনবিশ্বশান্তির জন্য গ্রিনল্যান্ড দখল করা প্রয়োজন: ট্রাম্প২৯ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প বল ক ন র কর ড ভ ঙ বক ত ত য় র বক ত ত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।