আলোচনায় ঈদের সিনেমা: হল থেকে হলে ছুটছেন তারকারা
Published: 2nd, April 2025 GMT
সারা বছর দর্শকখরা গেলেও ঈদে সিনেমা হলে থাকে উপচে পড়া ভিড়। এবার ঈদের দিন থেকে প্রেক্ষাগৃহে ৬টি সিনেমার প্রদর্শনী হচ্ছে। সিনেমাগুলো হলো- ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলি’ ‘জ্বীন-৩’, ‘চক্কর’, ও ‘অন্তরাত্মা’। এবার দুই একটি ছাড়া প্রতিটি সিনেমাই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। তাই নিজেদের সিনেমার দিকে দর্শক টানতে তারকাদের দৌড়ঝাঁপটাও এবার বেশি।
ঈদের দিন থেকেই বিভিন্ন হলে ছুটে যাচ্ছেন আফরান নিশো, সিয়াম আহমেদ, তমা মির্জা, শবনম বুবলী, প্রার্থনা ফারদিন দিঘীরা। রাজধানীর বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ঘুরে তাঁরা দর্শকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন তারা।
ঈদের দিন রাজধানীর বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শকের সঙ্গে ‘জংলি’ সিনেমা উপভোগ করেন সিয়াম আহমেদ, বুবলী ও দিঘী। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তাঁরা। ঈদের দ্বিতীয় দিন পরিবার নিয়ে সিনেমাটি দেখেছেন তিনি। আজ বিকেলে যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসে দর্শকের সঙ্গে সিনেমাটি দেখবেন ‘জংলি’ টিম।
একই দিন বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শকের সঙ্গে নিজের ‘দাগি’ সিনেমা দেখেছে আফরান নিশোসহ সিনেমাটির কলাকুশলীরা। দ্বিতীয় দিন সনি স্কয়ারে ছিলেন আফরান নিশো ও তমা মির্জারা। আজ সন্ধ্যায় যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসে দর্শকের মতবিনিময় করবে ‘দাগি’ টিম।
এছাড়া নিজেদের সিনেমায় দর্শক টানতে থেমে নেই ‘চক্কর’ সিনেমার কলাকুশলীরা। পায়ের অস্ত্রোপচারের কারণে প্রথম দুইদিন হলে উপস্থিত থাকতে পারেননি অভিনেতা মোশাররফ করিম। তবে তার হয়ে হলে হলে ঘুরছেন ‘চক্কর’ সিনেমার পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন, অভিনেতা রওনক হাসান ও শাশ্বত দত্তরা। আজ পায়ের সমস্যা নিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে উপস্থিত হন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, অভিনেত্রী সুমন আয়োয়ারসহ সিনেমার কলাকুশলীরা।
এছাড়া সিনেমার প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন আব্দুন নুর সজলসহ ‘জ্বীন ৩’ সিনেমা কলাকুশলীরা। হল থেকে হলে ছুটছেন তিনি। তবে এই সিনেমার প্রচারে এখন পর্যন্ত অংশ নিতে দেখা যায়নি নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে।
এদিকে গত ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি শাকিব খানের ‘দরবাদ’ সিনেমার তারকাদের। তবে এই সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজক ছুটে বেড়াচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন হলে। তবে শোনা যাচ্ছে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে দর্শকের সঙ্গে সিনেমাটি উপভোগ করবেন তিনি।
এবারের ঈদে তেমন কেনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও বেফাঁস কথা বলতে দেখা যায়নি কাউকেই। তবে গতকাল পাইরেসির অভিযোগে গুলশান থানায় হাজির হয়েছিলেন সিনেমাটির পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় ও প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি।
বরবাদের পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় বলেন, একজন প্রযোজক এতো টাকা বিনিয়োগ করে সিনেমা করেন আর পাইরেসি করায় সব শেষ হয়ে যায়। এভাবে তো চলতে পারে না। সিনেমা হল মালিকদের বলতে চাই আপনারা একটু দেখবেন সিনেমা পাইরেসি হয় কিনা। শো চলার সময় কেউ যেন ফোন ব্যবহার করে কপি না করে সে দিকে নজর দেন। যারা পাইরেসি করছেন তাদের দ্রুত সময়ের ব্যবধানে গ্রেপ্তার করা হবে এটা আমাদের বলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স য় ম আহম দ আফর ন ন শ ঈদ র দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।