সারা বছর দর্শকখরা গেলেও ঈদে সিনেমা হলে থাকে উপচে পড়া ভিড়। এবার ঈদের দিন থেকে প্রেক্ষাগৃহে ৬টি সিনেমার প্রদর্শনী হচ্ছে। সিনেমাগুলো হলো- ‘বরবাদ’, ‘দাগি’, ‘জংলি’ ‘জ্বীন-৩’, ‘চক্কর’, ও ‘অন্তরাত্মা’। এবার দুই একটি ছাড়া প্রতিটি সিনেমাই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। তাই নিজেদের সিনেমার দিকে দর্শক টানতে তারকাদের দৌড়ঝাঁপটাও এবার বেশি।

ঈদের দিন থেকেই বিভিন্ন হলে ছুটে যাচ্ছেন আফরান নিশো, সিয়াম আহমেদ, তমা মির্জা, শবনম বুবলী, প্রার্থনা ফারদিন দিঘীরা। রাজধানীর বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ঘুরে তাঁরা দর্শকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন তারা। 

ঈদের দিন রাজধানীর বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শকের সঙ্গে ‘জংলি’ সিনেমা উপভোগ করেন সিয়াম আহমেদ, বুবলী ও দিঘী। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তাঁরা। ঈদের দ্বিতীয় দিন পরিবার নিয়ে সিনেমাটি দেখেছেন তিনি। আজ বিকেলে যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসে দর্শকের সঙ্গে সিনেমাটি দেখবেন ‘জংলি’ টিম।

একই দিন বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে দর্শকের সঙ্গে নিজের ‘দাগি’ সিনেমা দেখেছে আফরান নিশোসহ সিনেমাটির কলাকুশলীরা। দ্বিতীয় দিন সনি স্কয়ারে ছিলেন আফরান নিশো ও তমা মির্জারা। আজ সন্ধ্যায় যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসে দর্শকের মতবিনিময় করবে ‘দাগি’ টিম।

এছাড়া নিজেদের সিনেমায় দর্শক টানতে থেমে নেই ‘চক্কর’ সিনেমার কলাকুশলীরা। পায়ের অস্ত্রোপচারের কারণে প্রথম দুইদিন হলে উপস্থিত থাকতে পারেননি অভিনেতা মোশাররফ করিম। তবে তার হয়ে হলে হলে ঘুরছেন ‘চক্কর’ সিনেমার পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন, অভিনেতা রওনক হাসান ও শাশ্বত দত্তরা। আজ পায়ের সমস্যা নিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে উপস্থিত হন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, অভিনেত্রী সুমন আয়োয়ারসহ সিনেমার কলাকুশলীরা।

এছাড়া সিনেমার প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন আব্দুন নুর সজলসহ ‘জ্বীন ৩’ সিনেমা কলাকুশলীরা। হল থেকে হলে ছুটছেন তিনি। তবে এই সিনেমার প্রচারে এখন পর্যন্ত অংশ নিতে দেখা যায়নি নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে।

এদিকে গত ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি শাকিব খানের ‘দরবাদ’ সিনেমার তারকাদের। তবে এই সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজক ছুটে বেড়াচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন হলে। তবে শোনা যাচ্ছে, পরিবারের সবাইকে নিয়ে দর্শকের সঙ্গে সিনেমাটি উপভোগ করবেন তিনি।  

এবারের ঈদে তেমন কেনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও বেফাঁস কথা বলতে দেখা যায়নি কাউকেই। তবে গতকাল পাইরেসির অভিযোগে গুলশান থানায় হাজির হয়েছিলেন সিনেমাটির পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় ও প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি।

বরবাদের পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় বলেন, একজন প্রযোজক এতো টাকা বিনিয়োগ করে সিনেমা করেন আর পাইরেসি করায় সব শেষ হয়ে যায়। এভাবে তো চলতে পারে না। সিনেমা হল মালিকদের বলতে চাই আপনারা একটু দেখবেন সিনেমা পাইরেসি হয় কিনা। শো চলার সময় কেউ যেন ফোন ব্যবহার করে কপি না করে সে দিকে নজর দেন। যারা পাইরেসি করছেন তাদের দ্রুত সময়ের ব্যবধানে গ্রেপ্তার করা হবে এটা আমাদের বলা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স য় ম আহম দ আফর ন ন শ ঈদ র দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ