বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় সময় রাজনৈতিক কারণে হামলার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মনে করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বুধবার এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের সই করা এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করে দলটি।

এনসিপি বলেছে, অবাধ্য ও অপরাধী নেতাকর্মীদের বিএনপি বহিষ্কার করলেও হিংস্র কার্যকলাপ চলছে। এ পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে ও অস্থির করে তুলছে।

স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিয়মিত আন্তঃসংঘর্ষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ বিবৃতি দিয়েছে এনসিপি। একইসঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

এতে বলা হয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিএনপির অন্তঃকোন্দলের জেরে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এনসিপি।

এ রকম বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে এনসিপি বলেছে, গত ৩০ মার্চ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে স্থানীয় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যকার সংঘর্ষে হামলার শিকার হন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলমের বাবা আজিজুর রহমান (বাচ্চু মোল্লা)। হামলায় তার হাত ভেঙে যায় এবং তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ মার্চ নোয়াখালীর হাতিয়ায় পথসভা ও জনসংযোগের সময়ে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন সদস্য এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদের ওপর হামলা করা হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এনসিপির কর্মী-সংগঠকদের নিয়মিত হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়।

বিএনপির নেতাকর্মীরা সাত-আট মাস পর ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করেছে এনসিপি। এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাত-আট মাস পর স্থানীয় বিএনপির হাতে ঠিক কোন ধরনের বাস্তবতা তৈরি হবে, যার কারণে তারা দেখে নিতে পারবেন তা এনসিপির বোধগম্য নয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট ব এনপ র ক ন দ র য় ন ত র ন ত কর ম র জন ত ক এনস প র

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।

রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।

প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতা

বামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।

এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।

এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।

দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’

শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।

শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।

বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।

বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
  • ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন, সবারই প্রথম অভিজ্ঞতা
  • রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
  • শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান