সিলেটের এক প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যে সহকর্মীর হাতে খুন, আরেকজন দুর্ঘটনায় নিহত
Published: 4th, April 2025 GMT
সিলেটের বিশ্বনাথে দুই প্রবাসী পরিবারের ঈদ–আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। উভয় পরিবারই মধ্যপ্রাচ্যে থাকা নিজেদের স্বজন হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন সড়ক দুর্ঘটনায় ও অন্যজন ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হাসনাজী গ্রামের সাবুল মিয়া (৩৯) গত বুধবার সকালে ওমানের মাসকটে সড়ক দুর্ঘটনায় এবং লামাকাজি ইউনিয়নের ভূরকী গ্রামের ফয়জুল হক (৫৫) গত মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। গত বুধবার দেশে তাঁদের মৃত্যুর খবর এসেছে। এর পরপরই উভয় পরিবারে চলছে শোক।
সাবুলের ছোট ভাই সাজন মিয়া জানান, তাঁর বড় ভাই প্রায় ৯ বছর প্রবাসে আছেন। এর মধ্যে দুইবার দেশে এসেছিলেন। গত ডিসেম্বরে প্রায় আড়াই মাস ছুটি কাটিয়ে ফিরেছেন। আর এক বছর পর তাঁর একবারে দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই তিনি না–ফেরার দেশে চলে গেছেন।
সাজন আরও জানান, সাবুলের আড়াই বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। শিশুটির আর বাবা ডাকা হলো না। ঈদের পরপরই এত বড় দুঃসংবাদ পাবেন—এমনটি অপ্রত্যাশিত ছিল। ওমানে থাকা তাঁদের এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে গত বুধবার খবরটি জেনেছেন তাঁরা।
সাবুলের স্বজনেরা জানান, বুধবার সকালে তিনিসহ চারজন গাড়ি নিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পথে চালক হঠাৎ ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় মাসকটের আমলা-ইবরি এলাকায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই সাবুলসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তাঁর মরদেহ স্থানীয় একটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মরদেহটি দেশে আনার বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ চলছে। তাঁরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সাবুলের মরদেহ দেশে আনা যাবে।
অন্যদিকে ফয়জুল হক সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির শামখা এলাকায় নিজ কর্মস্থলে খুন হয়েছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তিনি সেখানে সহকর্মীদের হাতে খুন হন। বিষয়টি গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে দেশের স্বজনেরা জানতে পারেন।
ফয়জুলের খালাতো ভাই আলতাফ হোসেন বলেন, ওই দেশে এলাকার কেউ নেই। ফয়জুল হকের এক সহকর্মীর মাধ্যমে তাঁরা বিষয়টি জানতে পেরেছেন। আবুধাবিতে কর্মস্থলে দুই বাংলাদেশি সহকর্মী তাঁকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। তাঁরা ওই দেশের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ফয়জুল হকের মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে এখনো তেমন কোনো কিছুই অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তাঁর পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। স্বজন হারিয়ে তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। প্রায় তিন মাস আগে দেশে ছুটি কাটিয়ে আবুধাবিতে ফিরেছিলেন ফয়জুল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন সহকর ম হয় ছ ন পর ব র স বজন মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।