‘ভাই শখ করছিল মোটরসাইকেল। একটাই আদরের ভাই; তাই তো দুই বোন মিলে কিন্নে দেছিলাম। আজ ভাই তো শেষ, ম্যাইয়াডও শেষ। আরেক মা তো এখনো মেডিকেলে রে। মোটরসাইকেল আজরাইল হইয়া সব ক্যাইড়া নিল।’

আফরোজা ইয়াসমিনের আফসোস যেন থামছেই না। যশোরের পুলেরহাট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রুবেল গাজীর (৩৫) বড় বোন আফরোজা। ওই দুর্ঘটনায় রুবেলের বড় মেয়ে ঐশী আক্তারও (১০) নিহত হয়েছে। রুবেলের স্ত্রী জেসমিন সুলতানা (২৮) ও ছোট মেয়ে তায়েবা (৪) গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আজ শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে খুলনার খালিশপুর থানার বাস্তুহারা কলোনির ৫ নম্বর রোডের রুবেলদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার ঠিক বিপরীত দিকের মক্কী-মাদানী জামে মসজিদে জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজা শেষে দুটি আলাদা পিকআপে করে বাবা-মেয়ের লাশ নেওয়া হয় গোয়ালখালী কবরস্থানে। গতকাল রাতেই যশোর থেকে রুবেল ও তাঁর মেয়ের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।

রুবেলের মা হাজেরা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। একমাত্র ছেলে আর নাতনির এমন মৃত্যুতে কিছুতেই থামছে না তাঁর আহাজারি। প্রতিবেশীরা ভিড় করে আছেন তাঁদের বাড়িতে। কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কেউ ফেলছেন চোখের পানি। কেউ আবার রুবেলের আহত মেয়ে আর স্ত্রীর খোঁজখবর নিচ্ছেন।

মূর্ছা থেকে একটু জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ করছেন মা হাজেরা বেগম। বলছিলেন, ‘আমার বাপরে আইনে দাও। ও আমার কলজাডা। আমার বাপরে কেউ খারাপ বলে না, আমার বাবা কোনো দোষ করিনি। সবাই ভালো বলে। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

রুবেলের বড় বোন আফরোজা একে–ওকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছিলেন। বছর দুই আগে ভাইকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার আফসোস তার কিছুতেই কাটছে না।
বিলাপ করতে করতে আফরোজা ইয়াসমিন বলছিলেন, ‘ভাই তো চলে গেল রে। আল্লাহ ক্যামনে নিল আমার মায়েরে আর ভাইরে। কাল আসরের টাইমে খবর পাইছি ম্যাইয়া (ঐশী) নাই, অ্যাকসিডেন্ট। পরে তো দেখি ভাইও শেষ, মাইয়াও শেষ। আরেক মাইয়া আমার মা তো (তায়েবা) হাসপাতালে পাঞ্জা লড়তেছে। পা ভেঙে টুকরো হয়ে গেছে। আপনারা কী দেখতে আইছেন। কী দেখবেন আর। সব তো শেষ!’

থেমে থেমে রুবেলের আহত মেয়েটার জন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছিলেন আফরোজা। আফরোজা বলছিলেন, ‘আল্লাহ তুমি তায়েবা মারে সুস্থ কইরা দাও। তোমরা সবাই আমার তায়েবা মার জন্য দোয়া করো। ভাইয়ের স্মৃতিডা যেন থাকে.

..ওরে আমাদের কোলে ফিরাইয়া দাও।’

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। আজ শুক্রবার সকালে খুলনার খালিশপুরের থানার বাস্তুহারা কলোনিতে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফর জ

এছাড়াও পড়ুন:

১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।

জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ছিল। ছবি:শিল্পকলা একাডেমি

সম্পর্কিত নিবন্ধ