কর্মকর্তাকে চাঁদা দিয়ে চলে মাদক ব্যবসা
Published: 4th, April 2025 GMT
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে চাঁদা দিয়ে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। এমনই অভিযোগ উঠেছে সংস্থাটির মিঠাপুকুর সার্কেলের সহকারী উপপরিদর্শক নুর ইসলামের বিরুদ্ধে। চাঁদা নেওয়ার একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সহকারী উপপরিদর্শক নুর ইসলাম স্থানীয় মুদি দোকানি শাহিনুরের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছেন। এ সময় দুই যুবকের তোপের মুখে পড়েন তিনি। তারা চাঁদা নেওয়ার অপরাধে তাঁকে (নুর ইসলাম) লাঠি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করছিলেন। এক পর্যায়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাখার হুমকি দেন। এ সময় ওই কর্মকর্তা মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত সেই স্থান থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
নুর ইসলাম মিঠাপুকুরে যোগদানের পর থেকেই মাদক কারবারিদের কাছে মাসিক চাঁদা আদায় করে আসছেন। প্রতি মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে তাঁকে চাঁদা দিতে হয়। এতে নির্ভয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন মাদক কারবারিরা। শর্ত অনুযায়ী অভিযানের খবর আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের। যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রানীপুকুর ও পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ৪২ জন মাদক কারবারির তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের অনেকে নুর ইসলামকে বা তাঁর সোর্সকে চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। মাদকের ধরন অনুযায়ী মাসিক চাঁদা দেন তারা। স্থানীয়ভাবে তৈরি হাঁড়িয়ার জন্য ১ হাজার টাকা, গাঁজার জন্য ২ হাজার, চোলাই মদ ৩ হাজার, ইয়াবা ৫ হাজার, হেরোইন ৮ হাজার, ফেনসিডিলের জন্য ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে মাদকদ্রব্যের এই কর্মকর্তা আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করে থাকেন অবৈধ কারবারিদের কাছ থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাঁজা ব্যবসায়ী বলেন, ‘নুর ইসলাম স্যারকে বিকাশে দিই। টাকা না দিলে বাড়িতে এসে বসে থাকেন নুর ইসলাম।’
জেলহাজতে থাকা একজনের আত্মীয় বলেন, ‘ব্যবসা বন্ধ। তার পরও নুর ইসলাম ঈদের আগের দিন পর্যন্ত টাকার জন্য ঘুরেছেন।’
এ বিষয়ে নুর ইসলাম বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব। দয়া করে এসব বিষয়ে কিছু লিখবেন না।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (খ সার্কেল) উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। প্রতিবেদনে সত্যতা পাওয়া গেলে নুর ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ইসল ম কর মকর ত ক রব র র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।