সেই কিশোর বেলার কথা। হাত আর আঙুলের কারুকার্যে এমন মন জয়– না দেখলে আফসোসই রয়ে যেত! তখন সপ্তম কিংবা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। পাশের পাড়ায় পুতুল নাচ দেখার আয়োজন হয়েছে। দারুণ কৌতূহল! দেখতে যাই। শো শেষ। কিন্তু মন তো মানে না। আরও দেখতে চায়! সে আয়োজনে যে কতবার দেখেছি! আজও সেই পুতুলের অভিনয়, ডায়ালগ, গানের অংশ, বেশ মনে পড়ে। সত্যি লোকসংস্কৃতির এক আনন্দদায়ক অংশ পুতুল নাচ। ছোটদের সঙ্গে বড়রাও দেখলে তো কম মজা পায় না!

পুতুল নাচকে জীবন চলার সঙ্গী করে চলেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রামজীবন ইউনিয়নের খুঙুয়া গ্রামের বিষ্ণুরাম দাস। পূর্বজদের মাছধরা পেশা ছেড়ে বাবা বানুরামের হাত ধরে এই কলা শিখেছেন বিষ্ণুরাম। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও ভালোবেসে ফেলেছেন বলে ছাড়তে পারছেন না পুতুল নাচানো। তাঁর খোঁজ পেয়ে দেখতে গেলে হাসিমুখে বলতে থাকেন কথাগুলো। বিষ্ণুরাম বলেন, ‘বাবা ভারতীয় এক দলের পুতুল নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে শিখতে যান তাদের সঙ্গে। শিখে এসে ১৯৮৫ সালে কাজ শুরু করেন কুড়িগ্রামের মনিকা পুতুল নাচের দলে। এরপর পাশের গ্রামের আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে নাসিমা পুতুল নাচ নামে দল গড়েন। সেটি ১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। এ দল কত কত জায়গায় যে শো দেখিয়েছে তার শেষ নেই।’

বাবার কাছ থেকে বিষ্ণুরাম এ কলা শিখে শো করা শুরু করেন। বলেন, ‘এখনও বিভিন্ন জায়গায় শো চালাই। মানুষ দেখে, আনন্দ পায়। তবে ছোটরা মজা পায় খুব। এই তো কিছুদিন আগে নাটোরে বকুলপুরের স্বাধীনতা পালাটি করে আসি। গাইবান্ধা শিল্পকলা একাডেমিতেও মাঝেমধ্যে শো দেখাতে ডাক পড়ে। তবে জীবনযাপনের চাহিদা যেভাবে বাড়তিছে তাতে এই কামাইয়ে কী হয়! কেননা, সব সময় তো শো চলে না।’ পাশে বসা সহযোগী তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘এমন মজি গেইছে যে, ছাড়বারও পায় না, জেবন চলাও দায়!’ বিষ্ণুরাম বলেন, ‘এটা নিয়েই থাকতে হয়। এটা এক সাধনা! নতুন পালা তৈরি, ফির দলে কেউ মারা গেলে কিংবা অন্য কাজে বা কোথাও চলে গেলে সেই প্লেয়ার তৈরি করতে সময় কী কম লাগে! গড়ি তুলতে খাটনিও লাগে তো। যেমন আগে ভোকাল অধীর দা, অনিল কাকা মারা গেলে নয়া করি বানা লাগছে।’

এক দলে কতজন লাগে; জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘পুতুল নাচানো ছাড়াও ভোকাল, বাদ্য বাজনাদার, জোগালিসহ কমপক্ষে আট-নয়জন মানুষ লাগে একটা দলে।’ ভাই কৃষ্ণরামকে দেখিয়ে বলেন, ‘এনার ছেলে আমার ছেলেকে তৈরি করছি। তবে এ শুধু ভালোবাসার টানে। এখন নেতৃত্বে আছে মতিন সর্দার। গলা দেন জাকির সর্দার। সব মিলে আট-নয়জনের একটি টিম।’ পুতুল নাচানো দেখাতে বললে, বিষ্ণুরাম দাস কোনো রকমে গড়ানো টিনের ঘরের বারান্দার বাক্সে তাংড়ানো পুতুল বের করে কালো পর্দা টাঙিয়ে হাত আর আঙুলের কারসাজি দেখালেন পুতুলকে নাচিয়ে নাচিয়ে। তবে ভোকাল না থাকায় গান-কথা শোনা হলো না। শো কখন কখন হয় জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘দুর্গাপূজায় হয়, রাসে হয়, আর শীতকালে টুকটাক হয়। তবে আগের মতো ডাক আইসে না। যদি স্কুল-কলেজে দেখানোর আয়োজন হতো, তবে খারাপ হতো না কিন্তু! কেননা, এর মাধ্যমে শিক্ষামূলক, সমাজ সচেতনতামূলক, বিভিন্ন বিষয় প্রচার করা যেত। আনন্দও পেত সবাই। আর আমাদেরও শো চলত, এই শিল্পটাও বাঁচিয়ে রাখা যেত!’ বিষ্ণুরাম জানান, এই গাইবান্ধায় শুধু আমাদের দলই আছে। এখনও এটা ধরি আছি, সংসার যেমন চলে চলুক, যতদিন পারি চালামো। কেননা, মানুষ তো দেখালে দেখে, আনন্দও পায়।’ এ যেন এক মায়ার টান! 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত