মন্দার পূর্বাভাস দিয়ে ফেলল জেপি মর্গ্যানসহ বিভিন্ন সংস্থা
Published: 5th, April 2025 GMT
দুর্যোগের মেঘ দেখে ফেলেছে বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মর্গ্যান। ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে মন্দার পূর্বাভাস দিল তারা। পূর্বাভাস দিতে যেমন বেশি সময় লাগেনি তাদের, তেমনি মন্দা আসতে বেশি সময় না–ও লাগতে পারে বলে তাদের পূর্বাভাস। চলতি বছরেই আমেরিকান অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বলে তাদের অনুমান।
মন্দা হলে তার সঙ্গে বেকারত্বও বাড়বে বা উল্টোভাবে বললে, বেকারত্ব বাড়বে বলেই মন্দা আসবে। জেপি মর্গ্যান সেটাই বলেছে। কোম্পানির প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি বলেছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টস বা জিডিপি) সংকুচিত হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হলে তার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। সারা বিশ্বে মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ, জানিয়েছে জেপি মর্গ্যান। এর আগে তাদের পূর্বাভাস ছিল, মন্দার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও রয়টার্স
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এ প্রসঙ্গে ফেরোলি বলেন, ‘শুল্কের চাপে আমাদের জিডিপি সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। গত বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরে আমরা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করছি না।’ বেকারত্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাসও দিয়েছেন ফেরোলি। তাঁর আশঙ্কা, চলতি বছরে আমেরিকার অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হলে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে উঠে যেতে পারে।
এদিকে ২ এপ্রিল নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার আগেই গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দেয়। তারাও মন্দার আশঙ্কা ২০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করে এবং তারা বলে, অর্থনীতির মৌলভিত্তিগুলো আগের বছরের মতো অতটা শক্তিশালী নয়।
বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি জানিয়েছে, মন্দার আশঙ্কা নিয়ে আলাপ-আলোচনা আরও বাড়বে। তারা আরও বলেছে, ইতিমধ্যে শেয়ারবাজার, বন্ড ও মুদ্রাবাজারের যে অবস্থা, তাতে মন্দার বাস্তবতা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এইচএসবিসির বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে শেয়ারবাজার পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই পর্যবেক্ষণ থেকে তাঁরা বুঝতে পারছেন, বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে মনে করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ মন্দা আসার আশঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ। এই আশঙ্কার কারণেই শেয়ারের বর্তমান দাম এবং বাজারে বিনিয়োগকারীদের কার্যকলাপ কিছুটা প্রভাবিত হচ্ছে; অর্থাৎ মন্দা আসার আশঙ্কা মাথায় রেখেই বাজারে কেনাবেচা চলছে।
এর মানে এই নয় যে মন্দা নিশ্চিতভাবেই আসবে, তার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ; বরং শেয়ারবাজার বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে আছে, তা সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া অন্যান্য গবেষণা সংস্থা যেমন বার্কলেস, বোফা গ্লোবাল রিসার্চ, ডয়েচে ব্যাংক, আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটস ও ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানও সতর্কতা জারি করেছে। তারা বলছে, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি জারি থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ মার্কিন অর্থনীতির মন্দার কবলে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, বুধবার গভীর রাতে বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের পণ্যে আরোপ করা হয়েছে ৩৭ শতাংশ শুল্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ৯ এপ্রিল থেকে এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর করা হবে। তবে কোনো দেশ যদি এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায়, সে পথও খোলা আছে।
ট্রাম্পের এই শুল্ক–সংক্রান্ত ঘোষণার পরই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। গত ১১ মাসে এই পরিমাণ ধস হয়নি। মাত্র দুই ধাপে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ বাজার মূলধন কমেছে।
শুল্ক আরোপের ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি অনেক কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের পূর্বাভাস, আমদানি কমতে পারে অন্তত ২০ শতাংশ। সার্বিক ভাবে মার্কিন অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে অন্যান্য দেশ যদি মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে রপ্তানির বাজারও মার খাবে। ইতিমধ্যে চীন মার্কিন পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প শ য় রব জ র র আশঙ ক মন দ র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’
ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।
আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।
রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।
কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?
কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।
রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।
রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।
এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।
রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।