বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, “আগামী নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন করতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, ততটুকু সংস্কার শেষে আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই। এরপর যারা পার্লামেন্টে যাবেন, তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী অন্যান্য সংস্কার করবেন।” 

তিনি বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। যারা সংসদ সদস্য হবেন, তাদের কাজ হবে আইন প্রণয়ন করা। উন্নয়নের কাজ করবে স্থানীয় সরকার। বর্তমানে সংসদ সদস্যের অনুমতি ছাড়া কোথাও কিছু করা যায় না। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকারকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সব এলাকায় সমান উন্নয়ন করতে হবে।”

শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে শরীয়তপুর পৌরসভা মিলনায়তনে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। আমরা নিরপেক্ষ অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, ১৯৭১ এর গণহত্যার বিচার অব্যাহত রাখা, পুলিশের লুটপাট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারসহ মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তাদের।”

তিনি বলেন, “বাহাত্তরের সংবিধানের অসম্পূর্ণতা দূর করে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান চাই। যারা বলে, বাহাত্তরের সংবিধান ফেলে দেব, তাদেরকে একথা বলার রাইট (অধিকার) কে দিয়েছে? বাহাত্তরের সংবিধানে অসূম্পর্ণতা আছে, যা পূর্ণাঙ্গ করার প্রস্তাব কমিউনিস্ট পার্টি বাহাত্তর সালেই দিয়েছে। বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে, তারা বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আছেন।”

বর্ধিত সভাটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) শরীয়পুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত ভাওয়াল সঞ্চালনা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলার সভাপতি নুরুল হক ঢালী। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য কাজী রুহুল আমিন, শরীয়তপুর উদীচীর সভাপতি শফিউল বাসার স্বপন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বিকাশ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক জি কে সাজ্জাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ধর্মান্তরের গুজবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নৈশভোজে পুলিশ ও মবের হানা, মারধরের অভিযোগ

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুরের একটি হাউজিং সোসাইটিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠানের সময় ধর্মান্তরের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশসহ শতাধিক লোক সেই বাড়িতে হানা দেন। কিন্তু পুলিশ পরে জানিয়েছে, ওই বাড়িতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত ২৬ জুলাই জামশেদপুরের গোলমুড়ি থানা এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে ২১ দিনের উপবাস ও প্রার্থনা শেষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ জন মানুষ রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, দুটি ফ্ল্যাটে কিছু মানুষ জড়ো হয়ে সন্দেহজনক কিছু করছিলেন।

স্থানীয় গোবিন্দপুর গির্জার যাজক জিতু লিমা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমাদের গির্জার প্রায় ৫০ জন সদস্য ২১ দিনের উপবাসের সময় ওই দুটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন। তাঁরা প্রায় সবাই আত্মীয় ও পরস্পরের সঙ্গে চেনাজানা।’

জিতু লিমা বলেন, ফ্ল্যাট দুটি কেবল থাকার জন্য ব্যবহার হচ্ছিল। সেখানে কোনো প্রার্থনা বা ধর্মীয় কার্যক্রম হচ্ছিল না। শুধু উপবাসের শেষ দিন রাতের খাবার খেতে  সবাই সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। এতে ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই ছিলেন।

গির্জার যাজক আরও বলেন, এই অবস্থায় সেখানে পুলিশের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল জনতার একটি দল (মব) হঠাৎ একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা ছয়জনকে থানায় নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গির্জার একজন সদস্য অভিযোগ করেন, পুলিশ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা মিলে তাঁদের হয়রানি করেছে এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার পর কিছু লোককে মারধরও করা হয়েছে।

জিতু লিমা অভিযোগ করেন, যে কক্ষে রাতের খাবারের আয়োজন চলছিল, সেখানে রাত ৯টার দিকে মব ঢুকে পড়ে। এরপর পুলিশ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কাউকে বের না হতে নির্দেশ দেয়। মবে শতাধিক মানুষ ছিল। কিছু পুলিশ সাদাপোশাকে ছিলেন। তাই বোঝা যাচ্ছিল না, কে পুলিশ আর কে মবের লোক।

গির্জার এই সদস্য অভিযোগ করেন, ‘আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাকেসহ ছয়জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে। পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাই তাঁদের মারধর করেছেন। তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘কেন তোমরা লোকজনকে ধর্মান্তর করছ?’

গোলমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘কাউকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বরং আমি তাঁদের জল খেতে দিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করেছি। তবে আমি বাইরে যাওয়ার পর সোসাইটির কেউ হয়তো কিছু করে থাকতে পারে।’

রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ওই রাতে বাসিন্দাদের থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। অভিযোগ ছিল, সেখানে ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য থেকে আসা প্রায় ৫০ জন মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।

রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা তৎক্ষণাৎ অন্যায় কিছু করার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাইনি। কেউ লিখিত কোনো অভিযোগও জমা দেননি।’

রাজেন্দ্র কুমার আরও বলেন, ‘এফআইআর করার আগের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা থানায় একটি ডায়েরি করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ-ছয়জনকে থানায় আনা হয়েছিল। আমরা জমায়েতটির প্রকৃতি নিয়ে তদন্ত করছি, এ ধরনের সমাবেশের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, নেওয়া হলে কার নামে নেওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছি। তাই এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

জামশেদপুরের উপপুলিশ সুপার (ডিএসপি) সুনীল চৌধুরী বলেন, বিষয়টি থানায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

গত বুধবার অল ইন্ডিয়া খ্রিষ্টান মাইনরিটি ফ্রন্টের সহসভাপতি ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী অজিত তিরকে জামশেদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ধর্মান্তরের মিথ্যা অভিযোগের অজুহাত তুলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে।

অজিত তিরকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আতাল মহল্লা ক্লিনিক প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে মাদার তেরেসার নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ওই জমায়েতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও হামলাকারী কিংবা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জামশেদপুরের ডেপুটি কমিশনার কর্ণ সত্যার্থি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, গোলমুড়ি ও ভূঁইয়াদি এলাকায় সাম্প্রতিক ধর্মান্তরের অভিযোগ সংক্রান্ত দুটি ঘটনার বিষয়ে পুলিশ একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

কর্ণ সত্যার্থি বলেন, গোলমুড়ির ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেখানে পুলিশ দুটি দলকে পেয়েছিল। একটিতে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন। অন্য দলে ছিল প্রায় ৫০ জন। অভিযুক্ত হওয়ার কারণে নয়, বরং নিরাপত্তার জন্য খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে থানায় নেওয়া হয়েছিল।

কর্ণ সত্যার্থি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে মাত্র দুই কি তিনজন অন্য ধর্মের ছিলেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় প্রার্থনায় অংশ নিচ্ছিলেন। সমবেতদের বেশির ভাগই খ্রিষ্টান। প্রতিবেদনে জবরদস্তির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি কমিশনার বলেন, ‘এমনটি হয়ে থাকলে তা অন্যায়। অপরাধী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা হবে, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আমরা ঘটনাটি আমলে নিচ্ছি এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মিলে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুনভারতে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর থাপ্পড়ের পর খোঁজও মিলছে না যাত্রীর: পরিবারের দাবি৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ