সাইফ পাওয়ারটেকের সম্পত্তি নিলামে, ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা
Published: 6th, April 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেকের নিলামে তোলা সম্পদের নিলাম ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসছে কোম্পানিটি। আজ রোববার শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক কর্তৃপক্ষ।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই নিলামের বিষয়টির দ্রুত সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটি আশা করছে, দুই পক্ষের আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান হবে। ফলে সাইফ পাওয়ারটেকের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না।
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মহাখালী শাখার গ্রাহক সাইফ পাওয়ারটেক। ব্যাংকটি তার ঋণের প্রায় ৫১৮ কোটি টাকা অনাদায়ি বা বকেয়া ঋণ আদায়ে সাইফ পাওয়ারটেকের নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের দুটি বন্ধকি জমি নিলামে তুলেছে। গত ২০ মার্চ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই সম্পদ নিলামে তোলা হয়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাইফ পাওয়ারের মালিকানায় থাকা যে দুটি বন্ধকি জমি নিলামে তোলা হয়েছে, তার পরিমাণ সাড়ে ৫৭ শতাংশের বেশি। নিলামে এই সম্পত্তির জন্য ২৪ এপ্রিলের মধ্যে আগ্রহী ক্রেতাদের দরপ্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ব্যাংকের নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে।
ব্যাংকের নিলাম বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, সাইফ পাওয়ারটেকসহ মোট তিনটি কোম্পানির সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়েছে। এই তিন কোম্পানির কাছে ব্যাংকটির অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ ৭৫৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সাইফ পাওয়ারটেক ছাড়াও নিলামে থাকা অন্য দুটি কোম্পানি হলো ই-ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও ম্যাক্সন পাওয়ার লিমিটেড। এর মধ্যে ই-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছে ব্যাংকের অনাদায়ি পাওনা প্রায় ১৯৮ কোটি টাকা এবং ম্যাক্সন পাওয়ারের অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এই তিন কোম্পানিরই মালিক তরফদার মো.
সাইফ পাওয়ারটেক মূলত চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসার পাশাপাশি কোম্পানিটির জেনারেটর ও ব্যাটারির ব্যবসাও রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির সম্পত্তি নিলামে তোলার ঘটনায় এটির শেয়ারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। এ কারণে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে কোম্পানিটির কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে আজ রোববার জানানো হয়, ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টির দ্রুত সমাধানে কাজ করছে তারা।
সাইফ পাওয়ারটেক ২০১৪ সালে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয় ৩০ টাকায়। এর মধ্যে ১০ টাকা ছিল ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্য আর ২০ টাকা প্রিমিয়াম বা অধিমূল্য। ১০ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য আজ দিন শেষে নেমে এসেছে ১১ টাকা ৪০ পয়সায়। আজ ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২০ পয়সা বা পৌনে ২ শতাংশ কমেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ গত বছরের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেই লভ্যাংশের পুরো অর্থ বিতরণ করতে না পারায় কোম্পানিটিকে দুর্বল মানের জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। গগ জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছর শেষে কোম্পানিটি সাড়ে ২৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র অন দ য় ব ষয়ট ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।