বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় অবস্থানকালে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো মো. ফরিদ শেখ ওরফে লাবিব (১৭) নামে এক কিশোরকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাতে পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা ইউনিয়নের গোপেরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

আহত ফরিদ শেখ পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা গ্রামের ইলিয়াছ শেখ ও সালমা বেগমের পালিত ছেলে। ফরিদ বর্তমানে পিরোজপুরের টোনা গ্রামে দাদার বাড়িতে থাকে এবং স্থানীয় তেজদাসকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় অবস্থানকালে গত ৪ আগস্ট দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় চোখে গুলিবিদ্ধ হয়। এতে তার বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। 

হামলার ঘটনায় আজ সোমবার ফরিদের মা সালমা বেগম বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে পিরোজপুর সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। 

অভিযোগে বলা হয়, ফরিদের সঙ্গে পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের রাজারকাঠী গ্রামের নাছির কাজীর ছেলে রাকিব কাজীর কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি তখন মীমাংসা করে দেন স্থানীয়রা। কিন্তু রাকিব বিষয়টি নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিল। পরে রোববার রাতে টোনা ইউনিয়নের গোপেরহাট নামক এলাকায় ফরিদকে একা পেয়ে রাকিব লোকজন নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

ফরিদ জানায়, গত রোজায় টোনা গ্রামের একটি মসজিদে নামাজে দাঁড়ানো নিয়ে রাকিব কাজীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে গোপেরহাট ভাঙ্গা পুল এলাকায় একা পেয়ে রাকিবের নেতৃত্বে সিয়াম শিকদার, নাছির কাজী, শাকিল শিকদারসহ ৭-৮ জন আমার ওপর হামলা করে। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং পাইপ ও ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে চলিশা বাজারের গ্রাম্য ডাক্তারের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করা হয়। 

পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো.

আব্দুস সোবাহান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চোখ হারানো ফরিদ সেখের ওপর হামলা ও কুপিয়ে জখমের খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক প য় জখম এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ