রানি মৌমাছির জীবন নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই। এই পতঙ্গের সুস্বাস্থ্য আর দীর্ঘ জীবনের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা বহু আগে থেকেই করে আসছেন তাঁরা। এবার নতুন করে রানি মৌমাছির জীবন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন একদল গবেষক। লক্ষ্য—এ বিষয়ে ভালো বোঝাপড়ার পর, তা মানুষের আয়ু এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতার সময়কাল বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো।

রানি মৌমাছি মৌচাকের প্রধান। চাকের বাকি সব কর্মী মৌমাছি। রানি ও কর্মী মৌমাছির ডিএনএ (প্রাণীর বংশগত তথ্যের ধারক) প্রায় একই। তবে রানি হিসেবে রাজকীয় সব সুযোগ–সুবিধা পেয়ে থাকে রানি। এগুলো আকারেও বড়, জীবনকালজুড়েই সন্তান জন্মদানে সক্ষম এবং কয়েক বছর বেঁচে থাকে। অপর দিকে কর্মী মৌমাছি বেঁচে থাকে সর্বোচ্চ কয়েক মাস।

নতুন এই গবেষণা শুরু করেছেন যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থা ‘অ্যাডভান্স রিসার্চ প্লাস ইনভেনশন এজেন্সি’ (এআরআইএ)। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে ৮০ কোটি পাউন্ডের তহবিল পেয়েছে তারা। এই গবেষণা প্রকল্পের জন্য আটজন পরিচালককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজন ইয়ানিক উরম গতকাল সোমবার বলেন, ‘এই গবেষণায় সবার জীবন বদলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

ইয়ানিক উরম লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এই রহস্যের সমাধান করতে পারি এবং এটা বের করতে পারি যে রানি মৌমাছির জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে প্রকৃতি সমাধান করেছে, তাহলে সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে মানুষের বয়স বৃদ্ধি থামিয়ে দেওয়া, সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা বাড়ানো, অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং রোগ প্রতিরোধের নতুন উপায় বের করা সম্ভব হতে পারে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ