ড. ইউনূস একের পর এক ম্যাজিক দেখাচ্ছেন: মান্না
Published: 8th, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস খুবই নির্মোহভাবে কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ড. ইউনূস একের পর এক ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। তার মধ্যে ক্ষমতার কোনো লোভ নেই, তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চান। তবে তাকে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে বিতর্ক তৈরি হবে বলেও সতর্ক করেছেন মান্না।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণশক্তি সভার আয়োজনে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ড.
তিনি বলেন, মানুষ এরইমধ্যে বুঝেছে প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে ক্ষমতার কোনো লোভ নেই, তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চান। আমি যতটুকু বুঝতে পারি ড. ইউনূস ভোটটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে চলে যেতে চান। কিন্তু কেউ কেউ দেখছি তাকে জোর করে ৫ বছর ক্ষমতায় রাখতে চান, কিন্তু কেন? তিনি ভালো কাজ করছেন, তাই যদি মনে করেন তাকে দেশের কল্যাণে রাখতে হবে, তাহলে বিকল্প কিছু চিন্তা করেন। কেন তাকে দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে বিতর্কিত করতে হবে?
রাষ্ট্রীয় মূলনীতি প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকুক। আমাদের ভিন্নমতকে ধারণ করতে হবে। ভিন্নমতকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে আমি একমত নই। সংস্কার কমিশনের শতাধিক প্রস্তাবের সঙ্গেই নাগরিক ঐক্য একমত নয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। আজকের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন রূপরেখা নিয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। তবে সেটি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কয়েকটি ধাপে বিকল্পের কথা আছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন ।
আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হয়েছে। মূল বিরোধ এখন প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে।
আজকের আলোচনায়—তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের সাংবিধানিক বিধান এবং জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আজ নতুন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে। কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। যদি এই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তবে প্রধান বিচারপতির মনোনীত দুই বিচারপতিকে যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি ‘র্যাঙ্ক-চয়েস’ভোটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।
এই র্যাঙ্ক-চয়েস প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, এর পরের ধাপ কী হবে, সেটা ঠিক করার বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি ও ভোটিং প্রক্রিয়াকেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখছে।
নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা ছিল দিনটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সরাসরি ভোটের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছিল সংস্কার কমিশন। কিন্তু তাতে ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন নতুন প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়, ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে দলগুলো এক-চতুর্থাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তবে আজকেও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রায় ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছি। আগামীকাল কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। আশা করছি তা অধিকাংশ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে কমিটি গঠনের বিধান সংযুক্তির প্রস্তাবে এখনো ঐকমত্য হয়নি। তবে অধিকাংশ দল কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে। ন্যায়পালের নিয়োগ কার্যকর করার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বিএনপি ও তার কয়েকটি মিত্র দল সংবিধানে নতুন বিধান না এনে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে যেসব বিষয়ের ওপর ঐকমত্য হয়েছিল, তার একটি তালিকা আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জাতীয় সনদের খসড়ার একটি কপি ইতিমধ্যে দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সংশোধনের পর আগামীকালই এ অংশটির নিষ্পত্তি করার আশা করা হচ্ছে।
জুলাই সনদের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী যে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করাতে পারব। সব দলই কোনো না কোনোভাবে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, এটি ইতিবাচক দিক।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।