ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২১৩ জন। আজ মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ নতুন করে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর অব্যাহত হামলায় ১ হাজার ৪৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৭ জন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৫০ হাজার ৮১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৮ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত ভবন ও স্থাপনার ধ্বংসস্তূপে এবং সড়কে এখনো অনেক মরদেহ পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় এসব মরদেহ উদ্ধার করা যাচ্ছে না।

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আহমেদ মনসুর মারা গেছেন। গাজার নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের অস্থায়ী তাঁবুতে গত সোমবার হামলা চালায় ইসরায়েল। তাঁবুতে আগুন ধরে গেলে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। এ ঘটনায় আরও দুই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন হেলমি আল-ফাকাবি ও ইউসুফ আল-খাজানদার। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আটজন।

‘নতুন চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে’

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্ত করতে নতুন চুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাশে বসা ছিলেন। দুই নেতা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে বিতাড়িত করা নিয়েও কথা বলেছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন আরেকটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছি এবং আমরা আশা করছি, তা করতে পারব। সব জিম্মিকে মুক্ত করে আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা জিম্মিদের মুক্ত করতে কঠিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আরেকটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। দেখি কী হয়।’

আরও পড়ুন‘গায়ে আগুন দেওয়ার পর তা নেভাতে আমি পশুর মতো এদিক-ওদিক ছুটছিলাম’ ৮ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান নেতানিয়াহু। ওই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির সময় আট মরদেহসহ ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পান।

জিম্মিদের মুক্ত করতে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। তবে তাঁদের দাবি উপেক্ষা করে বাকি জিম্মিদের জীবিত অথবা মৃত উদ্ধার করতে হামাসের ওপর সামরিক চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার।

আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ম ক ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ