দুঃস্বপ্নের পরও ঘুরে দাঁড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রিয়াল মাদ্রিদ
Published: 9th, April 2025 GMT
স্প্যানিশ লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হারের ক্ষত এখনো তাজা। তার ওপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আর্সেনালের কাছে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়ে আরও একবার কাঁপলো রিয়াল মাদ্রিদের আত্মবিশ্বাস। তবে এই ধাক্কাতেও হাল ছাড়ছেন না লুকাস ভাসকেজরা—দ্বিতীয় লেগে সর্বস্ব দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা।
মঙ্গলবার রাতে এমিরেটস স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে দুর্দান্ত খেলেছে আর্সেনাল। বিশেষ করে ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেকলান রাইস ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ক্যারিয়ারে কখনও ফ্রি-কিকে গোল না করা রাইস এদিন ঠিক সেই কাজটাই করলেন দুইবার। আর তাতেই ইউরোপ সেরার মঞ্চে একপাশে পড়ে থাকল রিয়াল।
প্রথমার্ধে দুই দলই লড়াই করেছে সমানে সমান। কিন্তু বিরতির পর যেন খেই হারিয়ে ফেলে কার্লো আনচেলত্তির দল। ৫৮ থেকে ৭৫ মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল হজম করে রিয়াল, আর সেখানেই কফিনে ঠুকে যায় শেষ পেরেক।
ম্যাচ শেষে নিজের হতাশা লুকাননি রিয়াল ডিফেন্ডার লুকাস ভাসকেজ। মুভিস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো খেলিনি। আর্সেনাল আমাদের ওপর দারুণ প্রেস করেছে। তারা জানত কীভাবে আমাদের চাপ দিতে হবে, আর আমরা আমাদের খেলা খেলতে পারিনি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা এক ধাপও এগোতে পারিনি। আমাদের খেলার ধারাবাহিকতা ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা মোটেও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারিনি।’
লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দুই হারের পর রিয়ালের জন্য সময়টা বেশ কঠিন। তবে ভাসকেজ মনে করেন, এখনই ভেঙে পড়ার সময় নয়। বরং সামনে তাকিয়ে লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে নামতে হবে। ‘আমরা পরপর দুটি পরাজয়ে অভ্যস্ত নই। আমাদের এখন কাজ করতে হবে, নিজেদের ওপর আরও বেশি বিশ্বাস রাখতে হবে। এই দল আত্মবিশ্বাসের যোগ্য, আর আমরা দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াতে সবকিছু উজাড় করে দেব।’
এদিকে আর্সেনালের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে দায়টা নিজের কাঁধে নিচ্ছেন কোর্তোয়া। মুভিস্টারকে কোর্তোয়া বললেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল দেওয়ালের সামনে ভালোভাবে অবস্থান নিতে পেরেছি। সাধারণত অতিরিক্ত একজন মানুষ সেখানে রাখি। তার জন্য আমি দায় নিচ্ছি। আমি বুঝতে পারিনি রাইস সেভাবে বলটা বাঁক খাওয়াতে পারবে। আর দ্বিতীয় গোলটা অসাধারণ ছিল।’
তবে ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সতীর্থদের খেলার ধরন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ম্যাচে ৯টি ফাউল করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। দলটির মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা দুইবার হলুদ কার্ড দেখে পেয়েছেন লাল কার্ড। ম্যাচ শেষে কোর্তোয়া বললেন, ‘যখন কোনো বিপদই ছিল না, তখন অপ্রয়োজনীয় ফাউল হয়েছে। আমরা সেই ফাউলগুলো না করলেও পারতাম।’
ঘুরে দাঁড়াতে হলে চেষ্টা করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না কোচ আনচেলত্তিও। এমনকি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আর্সেনালেরও প্রশংসা করেছেন আনচেলত্তি। রিয়াল কোচ বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা করতে হবে। ভালো খেলার সুযোগ আছে। দেখি আমরা সেটা করতে পারি কি না। আজ (গত রাতে) আর্সেনাল আমাদের চেয়ে অনেক ভালো মানের ফুটবল খেলেছে।’
১৭ এপ্রিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ-আর্সেনাল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।