মর্যাদাময় মৃত্যু আকাঙ্ক্ষা করি
মোসাব আবু তোহা
নিশ্চয়ই একটি মর্যাদাময় মৃত্যুর যোগ্য আমরা।
অথচ আমাদের মৃতদেহ বিকৃত এবং দুমড়ানো।
হিংস্র গুলির দাগে, নির্মম বোমার লৌহ ফলায়
কুচি কুচি করে কাটা সেগুলো।
রেডিও এবং টিভিতে আমাদের নাম উচ্চারিত ভুলভাবে
এমনকি আমাদের যে ছবি দেয়ালে টাঙানো
সময়ের কশাঘাতে সবগুলো ফ্যাকাসে, বিবর্ণ আর করুণ।
পাথরের ওপর একদিন খোদাই করা আমাদের যে নাম সকল,
পাখি আর সরীসৃপের অনবরত বিষ্ঠায় সেগুলো ঢেকে অতি ঝাপসা।
কেউ আমাদের কবরে দু’ফোঁটা অশ্রু নিয়ে আসে না।
আমাদের কবরে গজানো ছায়াদায়িনী গাছদের
মায়া করে কেউ এসে পানি ছিটিয়ে দেয় না।
আমাদের পচে যাওয়া দেহকে এখন গ্রাস করছে
প্রচণ্ড করে ফুঁসে থাকা তপ্ত রোদ্দুর।
মোসাব আবু তোহা
[জন্ম ১৭ নভেম্বর ১৯৯২]
ডেরেক ওয়ালকট প্রাইজ ফর পোয়েট্রি বিজয়ী। ফিলিস্তিনি কবি ও কথাসাহিত্যিক। গাজা উপত্যকার অধিবাসী।
মানুষের মৃত্যুর কথাই আমার কবিতা
নুর হিন্দি
কোমরভাঙা ঔপনিবেশিক কবিরা কবিতা লেখে ফুল নিয়ে।
আমি বলি,
শিশুরা কীভাবে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের দিকে ঢিল ছুড়ে
মুহূর্ত পরেই কী করে ডেইজি ফুলে রূপ নেয়
সেই কবিতার কথা।
আমিও চেয়েছিলাম চাঁদ নিয়ে কবিতা লেখা কবিদের মতো হতে।
কিন্তু প্যালেস্টাইনি জেলখানায় চাঁদের দেখা মিলে না।
ওখানে জোছনার প্রবেশ নিষেধ সেই শুরু থেকেই।
জানি তো চাঁদ খুব সুন্দর।
ফুলগুলোও অনেক সুন্দর।
আমি ফুল তুলে আনি আমার মৃত পিতার জন্য
এবং গহিন দুঃখে নিমজ্জিত হলে সারাদিন আলজাজিরা দেখি।
বিশ্বাস করো, আমি চাই জেসিকা আমাকে
“হ্যাপি রমজান” লিখে শুভেচ্ছা পাঠানো বন্ধ করুক।
এ সময়টা এমন নয় সেসব আমাকে আনন্দ দেয়।
এমন এক কবি আমি, যাকে মৃত্যু ব্যথিত করে এবং বুঝি
মৃত্যুকে রূপক করে সেই কবি লিখেন যিনি মনে করেন ভূত শব্দ বিষয়ে ক্রিয়াশীল।
এজন্য ভেবে রেখেছি, আমার মৃত্যুর সময় তোমাদের ভূত হয়ে তাড়া করব।
আসলে এমন বিষণ্নতায় ভূতের কথা অবশেষে
কবিতায় টেনে আনাও একটা আলাদা মায়াজাল।
তবে বিশ্বাস করি একদিন আমিও ফুল নিয়ে কবিতা লিখব
কেননা, সেসব ফুল চিরকাল আমাদেরই ছিল।
নুর হিন্দি
[জন্ম ১৯৯৫]
ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কবি ও সাংবাদিক
আমার জন্যে যথেষ্ট
ফাদওয়া তুকান
চাওয়াগুলো অতি ক্ষুদ্র আমার।
অতি স্বল্প আমার আকাঙ্ক্ষা ঘিরে
প্রপিতামহের এই মাটির বুকেই
আলিঙ্গন করতে পারা মৃত্যুকে।
দেশের মাটির অনন্ত গভীরে শুয়ে
তারই ধুলোবালিতে মিশে হয়ে একাকার
একটা সতেজ ফুল হয়ে ফুটে ওঠাই
আমার জন্য যথেষ্ট পাওয়া।
তারপর একদিন আমার দেশের কোনো এক শিশু
আমি থেকে ফুল হয়ে ওঠা
ফুল নিয়ে খলখল করে হেসে খেলবে।
আমার জন্য হবে সেই যথেষ্ট পাওয়া
আমার দেশেরই কোলে রূপান্তরিত
একমুঠো ধুলো।
আমার চূড়ান্ত সার্থকতা সেই
একদিন বসন্তের ঘাসফুল হওয়া।
একদিন পথের পাশে
চুপ করে শুয়ে থাকা কুঁড়ি হতে
এক রঙিন ফুল ফুটে বিকশিত হওয়া।
ফাদওয়া তুকান
[১ মার্চ ১৯১৭–১২ ডিসেম্বর ২০০৩]
প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি। ইসরায়েলের দখদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পুরোধা সাহিত্যিকদের অন্যতম।
পাসপোর্ট
মাহমুদ দারবিশ
চিনতে পারেনি তারা আমার গাঢ় ছায়ায় নিপাট পড়ে থাকা আমাকে।
আমার ছায়ার অস্তিত্ব ছিল আমার পাসপোর্টের রঙের মাঝে বিলীন।
মূলত ছবি সংগ্রহ করতে ভালোবাসা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আমার
দেহের দগদগে ক্ষতটুকুই ছিল তাদের আকাঙ্ক্ষার উদগ্রীব উপজীব্য।
আমাকে না চেনাদের ম্লান কণ্ঠে তখন ডাকি, শোনো।
আমাকে পরিত্যাগ করে চলে যেওনা দূর বহুদূরে।
সূর্যের উন্মূল আলোর প্রেক্ষাপণ হাতের করপুট থেকে কেড়ে
যেওনা চলে আমাকে ফেলে রেখে।
সূর্যালোকের আনন্দধারায় বাঁচার বড় এক সাধ বুকের মাঝে।
আমার পরিচয় জেগে আছে চারদিকে বৃক্ষের পাতায়।
আমার পরিচয় আছে ঝুমবৃষ্টির মুখরিত সকল গানে।
এত পরিচয়েও ফ্যাকাসে চাঁদের আলোর মতো
ফেলে রেখে দূরে চলে যেওনা এই বিষণ্ন প্রহরে।
জানো তো, আমার হাতের রেখার দিকচিহ্ন ধরে
পাখিরা চিনেছিল চিরকাল আমাকে।
আরও শোনো, দূরের বিমানবন্দরের রহস্য দরজা,
কিংবা যেসব গমক্ষেত সোনালি হয়ে উঠেছিল,
যেসব কারাগারের লৌহফটক জমে ছিল নিথর,
যেসব সমাধিতে কেউ আর ফুল দেয়নি,
যেসব কাঁটাতারের সীমানায় শুধু মরচে পড়ে আছে,
যেসব রুমাল বাতাসে বিদায়ের সম্ভাষণ জানিয়েছিল শুধু,
যেসব চোখ মিলনের আকুলতায় হয়েছিল প্রবল–
সকলই ছিল তারা আমাকে ঘিরে।
তবুও আমাকে মালিকানাবিহীন করে দিতে
ওরা অপসারিত করছিল সবকিছু পাসপোর্ট থেকে।
অথচ এই মাটিতেই একদা খুব দৃঢ়হাতে বুনেছিলাম ফসলের সোহাগ।
সে মাটি থেকেই কি তোমরা ছিনিয়ে নাওনি আমার পরিচয়!
ছিনিয়ে কি নাওনি সব যার জন্য আকাশ ডেকে বলেছিল,
হে ভদ্রমহোদয় এবং নবীগণ–
এখানের এই চারদিকে জন্মে থাকা আজন্ম বৃক্ষরাজির পরিচয় জানতে চেও না।
জানতে চেও না এই উপত্যকার কে মাতা আর মাতৃমঙ্গল?
আমার কপালের ভাঁজে উদ্গত হয় কিনা সোনালি আভার তলোয়ার
অথবা জানতে চেও না
আমার হাতের রেখায় হয় কি না নদীস্রোত বহমান!
এখানের সকল মানুষের হৃদয়ই আমার জন্ম পরিচয় যদি জানো একবার
তবে নিয়ে যাও আমার কাছ হতে কাগজের মেকি পাসপোর্ট।
মাহমুদ দারবিশ [১৩ মার্চ ১৯৪১–৯ আগস্ট ২০০৮]
ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম র ক আম র প আম দ র র জন য একদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’