সূচিশিল্পী ও ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনুল ইসলামের ঝিনাইদহের গাছবাড়িতে গিয়েছিলাম গত বছরের মার্চে। সেখানে প্রায় আড়াই শ গাছে টপিয়ারি রীতির এক অনন্য শৈলীর উদ্যান রচনা করেছেন তিনি। উদ্যানের এই শিল্পমাধ্যম আমাদের মুগ্ধ করল। বাগানের প্রবেশমুখেই ছোট্ট একটি অংশে এর অবস্থান। পুরো বাগানেই শিল্পবোধ আর ভালোবাসার অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ করা যায়। মাত্র ১৩ বছরের ব্যবধানে আমিনুল ইসলাম এই উদ্যানে ৫০০ প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার উদ্ভিদের সমাবেশ ঘটিয়েছেন।
বাড়িভর্তি গাছগুলো দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। ভোরে ঘুম ভাঙল বিচিত্র পাখিদের সুমধুর কলতানে। ভোরের স্নিগ্ধতা গায়ে মেখে বারান্দায় এসে দাঁড়াই। আশপাশের গাছগুলোতে চোখ রাখি। হঠাৎ হলুদ রঙের একগুচ্ছ ফুলে চোখ আটকে গেল। গাছে কোনো পাতা নেই। শুধু কিছু ফুল আর কলি। অচেনা ফুল। আগে কখনো দেখিনি। পরে বই দেখে নিশ্চিত হই, এটি মেক্সিকান বাটারকাপ ট্রি। কোথাও কোথাও ব্রাজিলিয়ান রোজ বা ওয়াইল্ড কটন নামেও পরিচিত।
সম্প্রতি ফুলটি আবার দেখি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রামকৃষ্ণদী গ্রামে। সেখানে কাজী গার্ডেনে গাছটি রোপণ করেন বৃক্ষপ্রেমী ও প্রকৌশলী কাজী কামাল উদ্দিন ইকরাম।
মেক্সিকান বাটারকাপ মাঝারি আকৃতির পাতাঝরা গাছ (Cochlospermum vitifolium)। ৫ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ডের ব্যাস ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। স্বল্প শাখা-প্রশাখা সূক্ষ্মভাবে মখমল-লোমশবিশিষ্ট। পাতা ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, ৩ থেকে ৫ পত্রী। কিনারা প্রায় সম্পূর্ণ এবং নিচে মধ্যশিরাবিশিষ্ট, ওপরের পিঠ চকচকে এবং লোমহীন, নিচের পিঠ কিছুটা ফ্যাকাশে।
ফুলগুলো উজ্জ্বল হলুদ, একাকী এবং বড়, ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া। দেখতে অনেকটা গোলাপের মতো হলেও একই পরিবারভুক্ত নয়। এই গাছ পশ্চিম মেক্সিকো থেকে মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অংশ, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, ব্রাজিল, গায়ানা এবং ত্রিনিদাদ পর্যন্ত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মে। মেক্সিকোতে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার মিটার পর্যন্ত উষ্ণ, আধা-উষ্ণ এবং নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় লাগানো হয়। সাধারণত টিলা, ম্যানগ্রোভ প্রান্ত, তৃণভূমি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পর্ণমোচী বা উপ-পর্ণমোচী বন, বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদের বন, সমতল বা পাহাড় এমনকি পাইন বনের ধারও এই উদ্ভিদের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
মেক্সিকান বাটারকাপ ফুল দেখতে অনেকটা গোলাপের মতো হলেও একই পরিবারভুক্ত নয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল কিশোরী, সাপের কামড়ে মৃত্যু
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সাপের কামড়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই কিশোরীকে একটি বিষধর সাপ ছোবল দেয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় তার।
নিহত কিশোরীর নাম নাঈমা আকতার (১৩)। সে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামের বক্সি মিয়াজিবাড়ির মোহাম্মদ হাসানের মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল নাঈমা। রাত তিনটার দিকে সাপের ছোবলে তার ঘুম ভাঙে। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তাকে উদ্ধার করে রাতেই আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাঈমাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানতে চাইলে নাঈমার চাচা কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন বলেন, ‘সাপে কামড় দিয়েছে জানার পর আমরা নাঈমাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।’
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাপে কামড় দেওয়া এক কিশোরীকে হাসপাতালে আনা হয়ছিল। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।